জেনে নিন : সংক্ষিপ্ত পরিসরে ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদদের জীবনী

এই প্রতিবেদনটির মূল উদ্দেশ্য হল ভাষা শহীদদের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা। এখানে শুধু ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোরই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।

সকাল ১১ টা :

কাজী গোলাম মাহবুব, অলি আহাদ, আব্দুল মতিন, গাজীউল হক প্রমুখের উপস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ শুরু। সমাবেশে ১৪৪ ধারা ভংগের ব্যাপারে ছাত্র নেতৃবৃন্দ এবং উপস্থিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক সভায় উপস্থিত হয়ে ছাত্রদের ১৪৪ ধারা না ভাঙ্গার ব্যাপারে যুক্তি প্রদর্শন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এস এম হোসেইন এর নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষক সমাবেশ স্থলে যান এবং ১৪৪ ধারা ভংগ না করার জন্য ছাত্রদের অনুরোধ করেন।

বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৩টা :

উপস্থিত ছাত্রনেতাদের মধ্যে আব্দুল মতিন এবং গাজীউল হক ১৪৪ ধারা ভংগের পক্ষে মত দিলেও সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় উপস্থিত সাধারণ ছাত্ররা স্বত:স্ফূর্তভাবে ১৪৪ ধারা ভংগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং মিছিল নিয়ে পূর্ব বাংলা আইন পরিষদের (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের অন্তর্গত) দিকে যাবার উদ্যোগ নেয়। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ এবং গুলি বর্ষণ শুরু করে। গুলিতে ঘটনাস্থলেই আবুল বরকত (ঢাবি এর রাষ্ট্রবিজ্ঞান এর মাষ্টার্সের ছাত্র), রফিক উদ্দীন, এবং আব্দুল জব্বার নামের তিন তরুণ মৃত্যু বরণ করেন। পরে হাসপাতালে আব্দুস সালাম যিনি সচিবালয়ে কর্মরত ছিলেন মৃত্যু বরণ করেন। অহিউল্লাহ নামে ৯ বছরের একটি শিশুও পুলিশের গুলিতে মারা যায়। পুলিশের সাথে ছাত্রদের ৩ ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলতে থাকে কিন্তু পুলিশ গুলিবর্ষণ করেও ছাত্রদের স্থানচ্যূত করতে ব্যর্থ হয়।

বেলা ৪টা :

ছাত্রদের মিছিলে গুলিবর্ষনের ঘটনা ঢাকায় ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার সাধারণ জনতা ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে জড়ো হতে থাকে। গুলিবর্ষনের সংবাদ আইন পরিষদে পৌছালে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার ছয়জন আইন পরিষদ সদস্য আইন পরিষদ সভা মুলতবী করে ঢাকা মেডিকেলে আহত ছাত্রদের দেখতে যাবার জন্য মূখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনকে অনুরোধ করেন। সরকারী দলের সদস্য আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশও এই প্রস্তাবের সপক্ষে উচ্চকন্ঠ হন কিন্তু নুরুল আমিন সকল দাবি উপেক্ষা করে আইন পরিষদের অধিবেশন চালাবার নির্দেশ দেন। এর প্রতিবাদে পূর্ব বাংলার সদস্যরা পরিষদ থেকে ওয়াক আউট করেন। রাতের বেলা ছাত্র নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে ঢাকা শহরের প্রতিটি মসজিদে ও ক্লাবে পরদিন সকালে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমায়েত হবার আহবান সম্বলিত লিফলেট বিলি করা হয়। [১]

আব্দুস সালাম :

ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের লক্ষণপুর (বর্তমানে সালামনগর) গ্রামে ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর জন্ম হয় আবদুস সালামের। ৪ ভাই ২ বোনের মধ্যে সালাম সবার বড়। প্রথমে মাতুভূঞা করিম উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় এবং ১৯৪২ সালে আতার্তুক RAFIQCPB_1264849758_1-1098.1226085417.AbdusSalamউচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তার পিতা ফাজিল মিয়া কৃষিজীবী ছিলেন। পরিবারের আর্থিক অভাব অনটনের কারণে সালামের ম্যাট্টিক ফাইনাল পরীক্ষা দেয়া হয়নি। নিত্য অভাব দেখে সালামের রোজগারের ইচ্ছে জাগে। পাঠ চুকিয়ে জেঠাতো ভাই এর হাত ধরে ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মতিঝিল ‘ডাইরেক্টার অব ইন্ডাষ্ট্রিজ’ এ পিয়নের চাকুরি নেন। ৫২’র ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে সালাম বাড়িতে আসনে এবং কিছুদিন ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরে যান। তখন মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে রাজধানী ছিল আন্দোলন মুখর। ২৭ বছরের টগবগে যুবক সালাম জাতির জন্য, মায়ের ভাষার জন্য আন্দোলনে যোগ দেন। ছুটে যান মিছিলে।

২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গনে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সেই মিছিলে তিনিও যোগ দেন। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের বর্বরোচিত গুলিবর্ষনে লুটিয়ে পড়েন, সালাম, বরকত, জব্বার, রফিক, শফিকসহ অনেকে। বুলেটবিদ্ধ সালামকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। টেলিগ্রামে খবর পেয়ে সালামের বাবা ফাজিল মিয়া, জ্যাঠাতো ভাই হাবিব ও প্রতিবেশী মকবুল আহমদ ঢাকায় ছুটে যান। দীর্ঘদিন সংজ্ঞাহীন থাকার পর ৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরদিন সকালে নামাজে জানাজা শেষে আজিমপুর গোরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। গ্রাম থেকে আসা সালামের পিতা, জেঠাতো ভাই ও প্রতিবেশী মকবুল জানাজায় অংশগ্রহন করেন।

১৯৯৯ সালের ১৮ নভেম্বর ফেনী জেলা পরিষদের অর্থায়নে ফেনী শহরের মিজান রোডে অবস্থিত কমিউনিটি সেন্টার ভাষা শহীদ সালামের নামে নামকরণ করা হয়। ২০০০ সালে ফেনী জেলার একমাত্র স্টেডিয়াম ভাষা শহীদ সালামের নামে নামকরণ হয়। শহীদ সালামের জন্মস্থান লক্ষ্মনপুর গ্রামের নাম পরিবর্তন করে সরকারী ভাবে সালাম নগর হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০০০ সালে সরকার শহীদ আবদুস সালামকে মরনোত্তর ‘একুশে পদক’ প্রদান করেন। ২০০৭ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী দাগনভুঞা উপজেলা মিলনায়তন ‘ভাষা শহীদ সালাম মিলনায়তন’ নামে নামকরণ করা হয়। এছাড়া ভাষা শহীদ আবদুস সালামের স্মৃতি রক্ষায় সালাম নগর গ্রামে ৬৩ লাখ ৮০ হাজার ২৫৮ টাকা ব্যয়ে একটি স্মৃতি গ্রন্থাগার ও জাদুঘর নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। ১৯৭৬ সালে সালামের পিতা ফাজিল মিয়া, ১৯৮২ সালে মা দৌলতের নেছা, ভাই সাহাব উদ্দিন, ১৯৯৯ সালে বোন কুরফুলের নেছা, ২০০২ সালে ভাই আবদুস সোবহান ও ২০০৭ সালের ৩ জানুয়ারি শহীদ সালামের ছোট বোন বলকিয়তের নেছা মারা যান।

রফিক উদ্দিন :

রফিক উদ্দিন আহমেদের জন্ম ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার পারিল বলধারা গ্রামে। বাবা আবদুল লতিফ। মা রাফিজা খাতুন। পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। শৈশবে প্রাথমিক পড়ালেখা শুরু কলকাতাelius_1297594073_1-2._Saheed_Rafiqর মিত্র ইনস্টিটিউটে। পড়াশুনা তারপর ১৯৪৯ সালে মানিকগঞ্জের বায়রা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ওই স্কুল থেকে তিনি ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ম্যাট্রিক পাশ করার পর রফিক উদ্দিন মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্রনাথ কলেজে বানিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। আই.কম. ক্লাস পর্যন্ত পড়লেও পরে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকায় এসে পিতার সঙ্গে প্রেস পরিচালনা করতে শুরু করেন। পরে আবার জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজে পড়ার সময়ে তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন।

২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার মিছিলে রফিক অংশগ্রহন করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেল প্রাঙ্গনে পুলিশ গুলি চালালে সেই গুলি রফিকউদ্দিনের মাথায় লাগে। গুলিতে মাথার খুলি উড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। মেডিকেল হোস্টেলের ১৭ নম্বর রুমের পূর্বদিকে তার লাশ পড়ে ছিল। ছয় সাত জন ধরাধরি করে তার লাশ এনাটমি হলের পেছনের বারান্দায় এনে রাখেন।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে রফিকই প্রথম গুলিবিদ্ধ হন। তাই বলা যায় তিনিই ছিলেন ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ। রফিক সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক চর্চায় বিশেষভাবে উৎসাহী ছিলেন। কলকাতায় থাকাকালে তিনি পারিল-বলধারা যুবক সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য ছিলেন। তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছিল আজিমপুর গোরস্থানে।

আবুল বরকত :

ভাষা শহীদ আবুল বরকতের জন্ম ১৯২৭ সালের ১৩ জুন। ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহাকুমার ভরতপুর থানার বাবলা নামক একটি ছোট গ্রামে। আবুল বরকতের ডাক নাম ছিল আবাই। বাবা শামসুজ্জোহা। মা হাসিনা বিবি।

পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। প্রাথমিক পড়াশুনা শেষে তিনি পার্শ্ববর্তী গ্রাম তালিবপুর ইংলিশ হাই স্কুলে ভর্তি হন। ওই স্কুল থেকে ১৯৪৫barkat সালে মেট্রিক পাশ করেন। মেট্রিক পাশ করার পর তিনি বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি বাংলাদেশে চলে আসেন। ঢাকার পুরানা পল্টনে বিষ্ণু প্রিয়া ভবনে তার মামা আব্দুল মালেক সাহেবের এই বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। ওই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে তিনি অনার্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেনীতে চতুর্থ স্থান অর্জন করেন এবং এম.এ. শেষ পর্বে ভর্তি হন।

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা ছিল উত্তাল। এ আন্দোলন ছড়িয়ে গিয়েছিল সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, অফিস আদালতে এবং রাজপথের সবখানে।

ভাষা আন্দোলনের ঢেউ আবুল বরকতকে আলোড়িত করে। তিনি ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। ভাষার দাবিতে ছাত্রদের মিছিল-মিটিং ও লিফলেট বিলিতেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। অধিকার আদায়ের দাবিতে শত শত বিদ্রোহী কন্ঠে “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” এই দাবীতে আন্দোলোন তীব্র হয়ে উঠে। পুলিশের সঙ্গে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ হয়। বুলেট আর লড়াই শুরু হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ এবং গুলি বর্ষণ শুরু করে।

তলপেটে গুলি লেগেছিল বরকতের। পরনের নীল হাফ শার্ট, খাকি প্যান্ট ও কাবুলী স্যান্ডেল রক্তে ভিজে যাচ্ছে। দু’তিন জন ছুটে এসে সুঠামদেহী বরকতকে কাঁধে তুলে জরুরী বিভাগের দিকে দৌড়াতে থাকেন। বরকত বলেছিলেন খুব কষ্ট হচ্ছে, আমি বাঁচবনা, বিষ্ণু প্রিয়া ভবন পুরানা পল্টনে খবর পৌঁছে দিবেন। ডাক্তাররা তাকে বাঁচানো জন্য আপ্রান চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের জন্য সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী রাত ৮টার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী ওয়ার্ডে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। [৫]

শফিউর রহমান :

ভাষা শহীদ শফিউর রহমানের জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোন্নগরে ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারী। তাঁর পিতা মাহবুবুর রহমান ছিলেন ঢাকার পোস্ট এন্ড টেলিগ্রাফ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট। পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। প্রাথমিকelius_1298103145_1-3._Shaheed_Shafiur_Rahman ও মাধ্যমিক পড়াশুনা শেষ করে কলকাতার গভর্ণমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজে ভর্তি হন। ওই কলেজ হতে তিনি আই.কম. পাস করেন। আই.কম. পাসের পর শফিউর রহমান চব্বিশ পরগনা সিভিল সাপ্লাই অফিসে কেরানীর চাকরি শুরু করেন। ১৯৪৫ সালের ২৮ মে শফিউর রহমান কলকাতার তমিজউদ্দিনের কন্যা আকিলা খাতুনকে বিবাহ করেন। আকিলা খাতুনের বয়স তখন ১২ বছর।

২২ ফেব্রুয়ারী শফিউর রহমান সকাল দশটায় অফিসে রওনা হন। সেদিন পাজামা, শার্ট, গেঞ্জি এবং কোট পরেছিলেন। পায়ে ছিল জুতা। সাইকেলে তিনি অফিসে যাতায়াত করতেন। সকাল সাড়ে দশটার দিকে নবাবপুর রোডে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে বিক্ষোভরত জনতার উপর পুলিশ বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করে। শফিউর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতরভাবে আহত হন। তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। অস্ত্রোপচার সফল হয়নি। ওই দিন সন্ধা সাতটায় হাসপাতালে তিনি মারা যান।

শফিউর রহমানের এক মেয়ে এবং এক ছেলে। মেয়ে শাহনাজের বয়স তখন মাত্র তিন বছর। মেয়েকে তিনি অত্যন- স্নেহ করতেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় তিনি মেয়ের কথা স্মরণ করেন। আহত অবস্থায় তাঁর ডাক্তার ভাইকে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে দেখো। আমি বুঝতে পারছি আমি তার কাছে আর ফিরে যেতে পারব না’। ছেলে শফিকুর রহমান তখন মায়ের পেটে। ১৯৫২ সালের মে মাসে সে জন্ম গ্রহণ করে।

গৌরদীপ্ত ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদ শফিউর রহমানকে বাংলাদেশ সরকার মরণোত্তর একুশে পদক (২০০০) প্রদান করেন। শহীদ শফিউর রহমানকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

আব্দুল জব্বার :

ভাষা সৈনিক আবদুল জব্বারের জন্ম ১৩২৬ বাংলা, ২৬ আশ্বিন। ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার পাঁচাইর গ্রামে। বাবা আবদুল কাদের। পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর তিনি গ্রাম্য পাঠশালায় প্রাথমিক পড়াশুনা শুরু করেন। পাঠশালায় কিছুদিন পড়াশুনা করার পর আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তিনি বাধ্য হয়ে লেখাপড়া বন্ধ করে দেন। যুক্ত হন কৃষিকাজে। পিতাকে সার্বক্ষণিক কৃষিকাজে সাহায্য করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১০বছর।jabbar

আবদুল জব্বার ১৫ বছর বয়সের সময় একদা পরিবারের সাথে রাগ করে জীবন সংগ্রামের অজানা পথে বেরিয়ে আসেন। এই অসঙ্গতিপূর্ণ সমাজের কারণে তিনি অনেক কষ্ট, ক্ষুধা, যন্ত্রণা নিয়ে অবশেষে নারায়ণগঞ্জে এসে জাহাজ ঘাটে কাজে যুক্ত হন। বছরখানেক পর তিনি এক ইংরেজ সাহেবের সান্নিধ্যে আসেন। সাহেব তাকে একটি চাকরি দিয়ে বার্মায় পাঠান। সেখানে আবদুল জব্বার দশ-বারো বছর অবস্থান করে দেশে ফিরে আসেন। আবদুল জব্বার দেশে ফিরে আমেনা খাতুন নামে এক যুবতীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আমেনা-জব্বার দম্পতি এক পুত্র সন্তান জন্ম দেন।

আবদুল জব্বার-আমেনা খাতুন পরিবারে ১৯৫১ সালের শেষের দিকে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। জন্মের ৪ মাস পরে আবদুল জব্বারের শাশুড়ি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। শাশুড়িকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ১৯৫২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারী তিনি ঢাকায় আসেন। শাশুড়িকে হাসপাতালে ভর্তি করে আবদুল জব্বার মেডিকেলের ছাত্রদের আবাসস্থল (ছাত্র ব্যারাক) গফরগাঁও নিবাসী হুরমত আলীর রুমে (২০/৮) উঠেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে, কি হয়েছে দেখবার জন্য তিনি রুম থেকে বের হয়ে আসেন। ঠিক তিনি যখন ছাত্রদের কাছে গিয়ে দাড়ালেন তখনই পুলিশ গুলি শুরু করে। জব্বার গুলিবিদ্ব হন। ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জব্বারকে মৃত ঘোষণা করে।



মন্তব্য চালু নেই