জেনে নিন, বিশ্ব কাঁপানো এক বিশ্ব সুন্দরী ঐশ্বরিয়ার অজানা গল্প

ঐশ্বরিয়া রাই, একসময়ের বিশ্ব কাঁপানো এক বিশ্ব সুন্দরীর নাম। বর্তমান সময়ে স্বামী-সন্তান-সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় খুব একটা বলিউডে দেখা যায় না। তাই বলে ভাববেন না ঐশ্বরিয়া রাই ফুরিয়ে গেছেন। সম্প্রতি (মার্চ, ২০১৪) গুগল ট্রেন্ডস এর এক জরিপে দেখা গেছে ভারতীয় ২০ জন সফল নারীর মধ্যে ঐশ্বরিয়া রাই রয়েছেন সবার প্রথমে। এখানেই শেষ নয়। এখনও বিশ্বের সেরা সুন্দরীদের তালিকায় ৪ নম্বরে রয়েছেন ঐশ্বরিয়া রাই। এই পেজটিতে ঐশ্বরিয়া রাই এর জীবনের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

জন্ম ও পরিবার

১৯৭৩ সালের ০১ নভেম্বর, ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের মাঙ্গালোরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতার নাম কৃষ্ণারাজ রাই এবং মায়ের নাম ভ্রিন্দা রাই। দুই ভাই বোনের মধ্যে ঐশ্বরিয়া ছোট। তাঁর বড় ভাইয়ের নাম আদিত্য রাই। ছোটবেলায় ঐশ্বরিয়ার মা বাবা মুম্বাইতে চলে আসেন।

amazing-life-history-of-aishwarya-rai-pic9

শিক্ষাজীবন

বিশ্ব সুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাই সম্পর্কে জানা যায়, ছোটবেলায় তুখোড় ছাত্রী ছিলেন তিনি। গণিতে খুব ভালো নম্বর পেতেন ঐশ্বরিয়া। ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল স্থপতি হওয়ার। সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছিলেন। কিন্তু কলেজের গন্ডি পেরোনোর সৌভাগ্য তার হয় নি। স্থপতি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে রাহেজা কলেজে স্থাপত্য বিভাগে ভর্তি হলেও মডেলিং হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুর জন্য পড়ালেখা ছেড়ে দেন তিনি।

AishwaryaRaiBachchanstillsjpg_822939

শুরুটা মডেলিং দিয়ে

কলেজে পড়াকালীন সময়েই ঐশ্বরিয়া মডেলিং এবং চলচ্চিত্রের অনেক প্রস্তাব পান। আর তাই পড়ালেখা ছেড়ে বলিউডে যোগ দিতে কোনো রকম কার্পণ্য করেননি। তবে ক্যামেরার সামনে ঐশ্বরিয়া আরও আগেই দাঁড়িয়েছেন। ক্লাস নাইনে পড়াকালীন সময়ে ক্যামলিন পেনসিলের বিজ্ঞাপন চিত্রের মাধ্যমে মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। আমির খানের সঙ্গে করা পেপসির বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে লাইমলাইটে আসেন ঐশ্বরিয়া। এই একটি বিজ্ঞাপনের সাফল্য তাকে শীতল দিভা, প্রুডেন্ট, পামোলিভ, ক্যাসিও এবং ফিলিপসের মতো প্রডাক্টের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করে। এরপর তিনি বন্ধুদের পরামর্শে ফোর্ড সুপার মডেল কনটেস্টে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। বর্তমান সময়েও ঐশ্বরিয়া লাক্স, লরিয়েল, নক্ষত্র, ডায়মন্ডের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।

amazing-life-history-of-aishwarya-rai-pic11

বিশ্বসুন্দরী হয়ে ওঠা

১৯৯৪ সালে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বসুন্দরী নির্বাচিত হন ঐশ্বরিয়া রাই। অনেকে ঐশ্বরিয়া রাই কে মিস ইউনিভার্স বলেন। কিন্তু ঐশ্বরিয়া রাই মিস ইউনিভার্স নন। তিনি বিশ্বসুন্দরী। বিশ্ব সুন্দরী ও মিস ইউনিভার্স দুটো আলাদা প্রতিযোগিতা। ১৯৯৪ সালে মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় অনেকেই ভেবেছিলেন সেরা সুন্দরীর মুকুটটি ঐশ্বরিয়ার মাথাতেই উঠতে যাচ্ছে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে ভারত সুন্দরীর খেতাব জয় করেন সুস্মিতা সেন, আর ঐশ্বরিয়া রাই হয়েছিলেন প্রথম রানার আপ। ফলে সুস্মিতা মিস ইউনিভার্স এবং অ্যাশ মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সেরার মুকুট নিয়ে আসেন।

amazing-life-history-of-aishwarya-rai-pic10

রতনে রতন চিনে

ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন তখনও খুব বেশি নাম ডাক করেন নি। সবে মাত্র মডেলিং দিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে চলেছেন। কিন্তু এরই মধ্যে বিখ্যাত অভিনেত্রীদের নজরে চলে আসেন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। এদের মধ্যে একজন হলেন বলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী ‘রেখা’। একদিন রেখার সাথে ঐশ্বরিয়ার দেখা হয়। সেদিন স্বয়ং রেখা এগিয়ে গিয়ে ঐশ্বরিয়ার কাঁধে হাত রেখে তাকে আশীর্বাদ করেন। রেখার সেদিনের সেই আশীর্বাদ অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়েছে।

ashloreal1_0

অভিনয় জীবন

বিশ্বের কোটি ভক্তের প্রিয় ঐশ্বরিয়া রাইয়ের অভিনয় জীবনের শুরু ১৯৯৭ সালে মনি রত্মমের তামিল ছবি ‘ইরুভার’-এ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। এরপর ‘অউর পেয়ার হোগেয়া’ ছবির মধ্য দিয়ে বলিউডে পা রাখেন তিনি। তবে ১৯৯৯ সালে সালমানের বিপরীতে ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। নিয়মিত একাধিক ছবিতে অভিনয় করে গেছেন। এসব ছবির মাধ্যমে নিজেকে অভিনেত্রী হিসেবে উপরেই শুধু তুলেছেন ঐশ্বরিয়া। এমনকি হলিউডও তার কাছে অপরিচিত নয়। তার অভিনীত কয়েকটি ইংলিশ ছবি হলো প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্পাইসেস, দি লাস্ট লিজিওন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মুক্তি পাবে বহুল আলোচিত পিঙ্ক প্যান্থার ছবিটি। ঐশ্বরিয়া রাইকে সর্বশেষ সঞ্জয় লীলা বানশালির ‘গুজারেশ’ ছবিতে দেখা গিয়েছিল।

9AB9C5173E3B66E9422C6CFE93B2B

ব্যতিক্রম ধর্মী অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া

বলিউডের অভিনেত্রীদের মধ্যে ঐশ্বরিয়ার অভিনয় তাকে আর দশজন নায়িকার থেকে আলাদা করে তুলেছে। পরিচালকদের কাছে ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোর জন্য প্রথম পছন্দ। যোধা আকবরের আগে উমরাও জানে ছবিতে ঐতিহাসিক চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। বহুমাত্রিক এ অভিনেত্রী অভিনয় এবং স্টাইলে তার অভিনীত চরিত্রগুলো এতো বিশ্বাসযোগ্যভাবে ফুটিয়ে তোলেন যে, ধুম-টু এবং যোধা আকবরের মতো সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী চরিত্রে ভিন্ন গেটআপে দর্শকরা খুব সহজে আপন করে নিয়েছে তাকে। প্রথমে ধুম-টুর অতি আধুনিক হট সুনেহরি, যার জন্য তিনি একাধিকবার স্টাইল আইকনের পুরস্কারও পেয়েছিলেন। এরপরই দর্শকদের সামনে হাজির হন সম্রাজ্ঞী যোদ্ধারূপে। দুটি চরিত্রেই সিনেমাপ্রেমীরা আপন করে নেয় তাকে।

amazing-life-history-of-aishwarya-rai-pic6

প্রেম-ভালোবাসা এবং বিয়ে

বলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে প্রায়ই মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরনের খবর শোনা যায়। বলিউড সম্রাজ্ঞী ঐশ্বরিয়া রাইয়ের জীবনেও এরকম কিছু খবর ছিল। তবে সব খবরকে পেছনে ছাপিয়ে ২০০৭ সালের ২০ এপ্রিল বিয়ে করেন আরেক বলিউড অভিনেতা অভিষেক বচ্চনকে। তবে তাদের এই প্রেম পর্ব শুরু হয়েছিল আরও আগে থেকেই। ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘উমরাও জান’ ছবিতে তাঁরা জুটি বেঁধে অভিনয় করেন। এই জুটির বাস্তব জীবনের ভালোবাসার গল্পের শুরুটা হয়েছিল ‘উমরাও জান’ ছবির সেটে। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ঐশ্বরিয়ায় মুগ্ধ হয়েছিলেন অভিষেক। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে লুকোচুরি বাদ দিয়ে অভিষেক বচ্চন জনসম্মুখে তুলে ধরেন তাদের প্রেম-ভালোবাসার কথা। অভিষেকের বক্তব্য ছিল এরকম – ‘উমরাও জান’ ছবির শুটিং শেষ করে আরেকটি ছবির শুটিং করতে নিউইয়র্ক গিয়েছিলেন। সেখানে যে হোটেলে তিনি উঠেছিলেন তার বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রায়ই তিনি ঐশ্বরিয়ার কথা ভাবতেন। মনের ক্যানভাসে অ্যাশকে নিয়ে নানা ছবি আঁকতেন। বারান্দায় দাঁড়িয়ে মনের চোখ দিয়ে ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে নিজের বিয়ের দৃশ্যও কল্পনা করতেন।

২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে মুক্তি পায় অভিষেক-ঐশ্বরিয়া অভিনীত চলচ্চিত্র ‘গুরু’। এর উদ্বোধনী প্রদর্শনীর পর একদিন ঐশ্বরিয়াকে নিয়ে নিউইয়র্কের সেই হোটেল বারান্দায় যান অভিষেক, যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি অ্যাশকে নিয়ে নানা স্বপ্ন বুনতেন। সেখানেই প্রিয়তমাকে সারা জীবনের সঙ্গী হওয়ার প্রস্তাব দেন অভিষেক। তাঁর প্রস্তাবে সানন্দেই ইতিবাচক সাড়া দেন ঐশ্বরিয়া। ২০০৭ সালের ২০ এপ্রিল হিন্দু রীতি অনুযায়ী অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। তারা ঝলমলে সেই বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল জুহুতে, বচ্চনদের প্রতীক্ষা বাসভবনে। ২০১১ সালের ১৬ নভেম্বর একমাত্র মেয়ে আরাধ্য বচ্চনের জন্ম দেন অ্যাশ। বলিউডের তারকাদের মধ্যে সুখী দাম্পত্যের উদাহরণ কমই আছে। পরকীয়া, মনের অমিল কিংবা আরও নানা তুচ্ছ কারণে তারকাদের বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিরল দৃষ্টান্তই স্থাপন করেছেন অভিষেক-ঐশ্বরিয়া। বলিউডের অন্যতম সুখী তারকা দম্পতি হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছেন তাঁরা। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস আর ভালোবাসায় ভর করে এগিয়ে চলেছে তাঁদের সুখী দাম্পত্য জীবন।

amazing-life-history-of-aishwarya-rai-pic8

ভারতীয় সফল নারী ও গুগল সার্চে শীর্ষে

অনেকেই ভাবছেন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন ফুরিয়ে গেছেন। কিন্তু তারা জানেন না যে, ২০১৩ সালে এসেও গুগল ট্রেন্ডস এর প্রস্তুতকৃত এক তালিকায় দেখা যায় ভারতীয় ২০ জন সফল নারীর মধ্যে ঐশ্বরিয়া রাই রয়েছেন সবার প্রথমে। দুই মাস ধরে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভারতীয় ২০ সফল নারীর তালিকা প্রস্তুত করেছে গুগল ট্রেন্ডস। তলিকাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছেন যথাক্রমে বিদ্যা বালান ও সোনিয়া গান্ধী।

aishwarya-rai-miss-world-1994

এখনও বিশ্বের সেরা সুন্দরী

১৯৯৪ সালে বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বিশ্ব সুন্দরীর খেতাব জিতেন ভারতীয় ঐশ্বরিয়া রাই। এরপর কেটে গেছে অনেক বছর। স্বাভাবিকভাবে অনেক বিশ্ব সুন্দরী হারিয়ে গেছেন বিশ্বের সেরা সুন্দরীর তালিকা থেকে। কিন্তু ২০১৩-১৪ সালে প্রকাশিত এক জরিপে বিশ্বের সেরা সুন্দরীর তালিকায় ৪ নম্বরে উঠে এসেছেন ঐশ্বরিয়া রাই। ‘হলিউড বুজ’ পরিচালিত এই জরিপে বিশ্বের ৪০ লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। বিশ্বের সেরা সুন্দরী নারীর তালিকায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অর্জন করছেন মনিকা বেলুচি, কেপ আপটন ও অ্যাঞ্জেলিনা জোলি।

বাজে অভিনেত্রী

চাঁদেও কলঙ্ক রয়েছে, সেদিক থেকে ঐশ্বরিয়া রাইও বাদ পড়েননি। বলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের খারাপ অভিনয় ও বিরক্তিকর সব কার্যক্রমের জন্য ‘ঘণ্টা অ্যাওয়ার্ড’ নামে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এই তালিকায় মিস ইউনিভার্স ঐশ্বরিয়া রাইও রয়েছেন। বলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বিরক্তিকর সব কার্যক্রমের জন্য ঘণ্টা অ্যাওয়ার্ড নিতে হয়েছে ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনকে। ২০১০ সালের ‘ঘন্টা অ্যাওয়ার্ড’ এর জন্য ২০০৯ সালের দিওয়ালি হতে ২০১০ সালের দিওয়ালিতে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকটি ছবি বাছাই করা হয়। কর্তৃপক্ষের বিচার বিশ্লেষণের পর এবারের ঘণ্টা অ্যাওয়ার্ডে সবচেয়ে বাজে অভিনেত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন।

article-2227049-15D1794C000005DC-95_634x520

নাইট অফ দ্য অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস

শিল্প, সংস্কৃতি বা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবেই ফ্রান্সের অন্যতম সম্মানসূচক ‘নাইট অফ দ্য অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস’ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে ঐশ্বরিয়া রাইকে। ২০১১ সালের ১৩ জুলাই ঐশ্বরিয়া রাই এই সম্মাননায় ভূষিত হন। এশিয়ার অভিনেত্রীদের মধ্যে ঐশ্বরিয়াই প্রথম, যিনি এই সম্মাননা পেলেন। এ ছাড়া সবচেয়ে কম বয়সী ভারতীয় নাগরিক হিসেবেও এই সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। এর আগে এই সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান, জর্জ ক্লুনি, মেরিল স্ট্রিপ এবং রবার্ট রেডফোর্ড। ভারতের পদ্মবিভূষণ পদকের মতোই সম্মানজনক অ্যাওয়ার্ড এটি।

Aishwarya

জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত ঐশ্বরিয়া

জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ঐশ্বরিয়া নারী এবং শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রসারে জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মসূচিতে কাজ করবেন। জাতিসংঘের ৬৭তম সাধারণ অধিবেশনে এইচআইভি/এইডস কর্মসূচিতে তাকে আন্তর্জাতিক শুভেচ্ছা দূতের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে তিনি বেশ কিছু দেশে সফরও করেছেন।

51373840

 

ঐশ্বরিয়ার মোমের ভাস্কর্য

ভারতীয় নায়িকাদের মধ্যে একমাত্র ঐশ্বরিয়া রাইয়ের মোমের মূর্তি লন্ডনের মাদাম তুসো মিউজিয়ামে আছে। এছাড়া প্যারিসের ‘মিউজি গ্রাভিন’ জাদুঘরে রয়েছে দ্বিতীয় ভারতীয় অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন এর মোমের ভাস্কর্য। এটি ইউরোপের অতি পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী একটি জাদুঘর। ঐশ্বরিয়া রাই এর পূর্বে ভারতীয় তারকা শাহরুখ খানের ভাস্কর্য এ জাদুঘরে স্থান পায়। ২০০৮ সালে সাবেক বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের ভাস্কর্য তৈরির প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে ঐশ্বরিয়া সে সময় নিজের বিয়ে ও পরবর্তীতে সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আগে তৈরি করা হয় শাহরুখের ভাস্কর্য। ২০০৯ সালে ঐশ্বরিয়ার কান উত্সবে যোগদানের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে এই ভাস্কর্য। মিউজি গ্রাভিনির নতুন শাখা মন্ট্রিয়ালে ঐশ্বরিয়ার মোমের ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। এ জাদুঘরে স্থান পেয়েছে বিশ্বের আরও অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তির ভাস্কর্য। সে তালিকায় রয়েছে ব্রাড পিট, মেরিল স্ট্রিপ, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, পিনিলোপ ক্রুজ, ক্যামেরুন ডায়াজ, সেলিন ডিওন ও আরও অনেকে।

Aishwarya-Rai-Snapped-with-her-Baby-Aaradhya-

শ্রেষ্ঠ মা ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন

অভিনয়ের মাঠের মতো পরিবারের মাঠেও সফল একটি নাম ‘ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন’। বিয়ের পর পরিবার-পরিজন নিয়ে গুছিয়ে নিতে বলিউড থেকে বিরতি নেন। এই বিরতি শেষ না হতেই যখন কোলজুড়ে সন্তান আসে তখন তাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এর যথাযথ স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছেন। ভারতীয় মেট্রিমোনিয়াল পোর্টাল শাদি.কম বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে সম্প্রতি ভিজিটরদের মধ্যে এক জরিপ পরিচালনা করে। এতে ভিজিটরদের ভোটে ‘সেলিব্রেটিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মা’ নির্বাচিত হয়েছেন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। জরিপে তার পক্ষে ৫৪ভাগ ভোট পড়ে। তারপরেই বলিউডের আদর্শ মায়ের তালিকায় রয়েছেন দুই সন্তানের জননী কারিশমা কাপুর। তার পক্ষে ২৭ ভাগ ভোট পড়ে।

280044-aishwarya-rai

অজানা কিছু তথ্য

২০০৫ সালে প্লেবয় ম্যাগাজিনের ভারতীয় সংস্করণ বের করার পরিকল্পনা করেছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা হিউ হেফনার। আর প্রচ্ছদ-কন্যা হিসেবে তিনি চেয়েছিলেন ঐশ্বরিয়াকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেননি হেফনার।
‘অপরাহ উইনফ্রে’ অনুষ্ঠানটিতে বলিউড অভিনেত্রীদের মধ্যে ঐশ্বরিয়া রাই প্রথম অংশ নেন।

২০০৬ সালে ভারত সফরে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। তখন বুশের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন ঐশ্বরিয়া ও আমির খান। কিন্তু শুটিংয়ের ব্যস্ততার কারণে লোভনীয় এ সুযোগটি হারাতে হয়েছিল ঐশ্বরিয়াকে। তিনি তখন ব্রাজিলে ‘ধুম ২’ ছবির শুটিং করছিলেন।
ঐশ্বরিয়া ভারতের সীমানা পেরিয়ে অনেক আগেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যেও রয়েছে ঐশ্বরিয়ার অগুনতি ভক্ত। তিনি একবার সাবানের বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিংয়ে দুবাই গিয়েছিলেন। তখন তাঁকে কাছ থেকে একনজর দেখার জন্য ভিড় করতে থাকেন তাঁর ভক্তরা। এ জন্য দুবাই-এর বেশ কয়েকটি রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম বেধে গিয়েছিল। সেই জ্যাম ছুটতে সারা দিন সময় লেগে যায়।
রাশিয়ায় তার নামে একটি টিউলিপ ফুলের নামকরণ করা হয়েছে।

২০০৫ সালে ঐশ্বরিয়ার অল্প কিছু বারবি পুতুল যুক্তরাজ্যের বাজারে ছাড়া হয়েছিল। সবগুলো পুতুল বিক্রি হতে সময় লেগেছিল মাত্র কয়েক মিনিট।
শুধু ভারতেই নয়, পৃথিবীব্যাপী তিনি সুন্দরীদের সেরা সুন্দরী হিসেবে অনেকবার স্বীকৃতি লাভ করেছেন।
সব পোশাকেই সমান সুন্দরী, রাইয়ের প্রিয় পোশাক হচ্ছে ব্যাগি শার্ট এবং নীল জিন্স। তার প্রিয় ডিজাইনার হলেন নীতা লুল্লা এবং সাহাব দর্জি। উল্লেখ্য, বিয়েতে তিনি নীতা লুল্লার ডিজাইন করা পোশাক পরেছিলেন।
তার প্রিয় রঙ সাদা, নীল এবং লাল।

গঠনগত দিক দিয়ে ছিপছিপে শরীরের অধিকারী। তিনি ফিগার ঠিক রাখার জন্য জিমে যান না বলিউডের অন্যান্য ফিগার সচেতন নায়িকার মতো। তিনি শুধু নিয়মিত নাচ প্র্যাকটিস করেন। আর কে না জানে, মাধুরীর পর এখনকার নায়িকাদের মধ্যে একমাত্র রাই-ই ক্লাসিক্যাল নৃত্যে পারদর্শী।
বলিউডের প্রায় সব নায়িকাই ফিগার ঠিক রাখতে যেখানে ক্যালরি মেপে খাবার খান, সেখানে সাবেক এ বিশ্বসুন্দরীর প্রিয় খাবার হচ্ছে আইসক্রিম। আর রূপচর্চার ক্ষেত্রে তার একমাত্র পছন্দ প্রাকৃতিক উপাদান।

aishwarya-rai-wedding-photos12

ঐশ্বরিয়া রাইয়ের বিয়ের মজার একটি ঘটনা

আপনারা কি জানেন ঐশ্বরিয়া রাই এর প্রথম বিবাহ একটি গাছের সাথে হয়েছিলো। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। একটু অপেক্ষা করুন বিশ্বাস না করে পারবেন না। ভারতে মাঙ্গলিক মনে করা হয় এমন মেয়েদের প্রথমে একটি গাছের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। তারপর সেই গাছটিকে কেটে ফেলা হয় এবং তারপর হয় তার স্বামীর সাথে বিয়ে হয়। এর কারণ হল যেসকল নারী মাঙ্গলিক হয় তাদের তাদের বিয়ের পর পরই তাদের স্বামী মারা যায়। এজন্য স্বামীর উপর থেকে এই অভিশাপ দূর করার জন্য প্রথমে গাছের সাথে বিয়ে দিয়ে গাছটিকে মেরে ফেলা হয়। ঐশ্বরিয়া রাইও ছিলেন একজন মাঙ্গলিক। এবার নিশ্চয়ই বিষয়টি ক্লিয়ার হয়েছে। অনেকের মনে মাঙ্গলিক নিয়ে একটু খটকা থাকতে পারে। তাদের বলছি কে মাঙ্গলিক এটা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। এটা কেবল পুরোহিতরাই বিভিন্ন ধরনের নিয়ম নীতি রক্ষা করে নির্ধারণ করেন।

aishwarya-1

ব্যতিক্রমী ঐশ্বরিয়া

কিংবদন্তি অমিতাভ বচ্চনের মোবাইল ব্যবহারে শিষ্টাচার রীতিমতো বিখ্যাত। এক দিন পর একটি মেসেজ হলেও বিগ বি আপনাকে জবাব পাঠাবেন। অন্যদিকে, তার পুত্রবধূর স্বভাবটা ঠিক উল্টো। ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের কাছ থেকে কেউ কখনোই কল বা মেসেজের জবাব পাননি।

aishwarya11

ফিরছেন ঐশ্বরিয়া রাই

২০১৩ সালের জন্মদিন পালনের মাধ্যমে ঐশ্বরিয়া রাইয়ের বয়স ৪০ এর ঘরে পৌঁছেছে। বিয়ের পর দুই-একটি ছবিতে অভিনয় করলেও সন্তান হওয়ার পর খুব একটা ছবিতে অভিনয় করা হয় নি। দীর্ঘ বিরতির পর ‘চন্দ্রমুখী’ ও ‘চিন্না থাম্বি’ খ্যাত দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা পি বাসু নিশ্চিত করেছেন, তাঁর পরিচালিত ছবির মধ্য দিয়েই রুপালি পর্দায় ফিরছেন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। তাঁর ত্রিভাষিক (হিন্দি, তামিল ও তেলেগু) ছবিতে ঐশ্বরিয়া অভিনয় করবেন মধ্যযুগের এক কালারাই (দক্ষিণ ভারতীয় মার্শাল আর্ট) যোদ্ধার ভূমিকায়। বাসু বলেছেন, ‘ঐশ্বরিয়া চিত্রনাট্যটি পছন্দ করেছেন। কালারাই যোদ্ধার ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য তিনি বিশেষ অনুশীলন করতেও রাজি আছেন।’



মন্তব্য চালু নেই