জেনে নিন বায়তুল মোকাররম মসজিদের ইতিহাস ( ভিডিও )

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, থানা, ইউনিয়ন, পাড়া-মহল্লা ও গ্রামভিত্তিক অসংখ্য মসজিদ রয়েছে। সংখ্যার দিক থেকে বিচার করলে অন্যান্য জেলার তুলনায় ঢাকায় মসজিদের সংখ্যা অনেক বেশি। যার ফলে ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের শহর। গ্রামাঞ্চলে যেখানে গ্রামভিত্তিক একটি মসজিদ খুজেঁ পাওয়া অনেকক্ষেত্রে দুষ্কর হয়ে পড়ে সেখানে ঢাকার এক একটি এলাকায় একাধিক মসজিদের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। তবে দেশের সকল মসজিদের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে যেই মসজিদ সেটি হলো বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। প্রতিদিন এখানে দূর-দুরান্ত থেকে আগত অসংখ্য মুসল্লির সমাগম ঘটে। কৌতূলি দর্শকেরা মসজিদটির দিকে অপলক নয়নে দীর্ঘ সময় চেয়ে থাকেন। অনেকে ছবিও উঠিয়ে নিয়ে যায়। কেননা বায়তুল মোকাররম মসজিদের স্থাপত্য সৌন্দর্য সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ভিন্নরূপ।

অবস্থান:
ঢাকার গুলিস্তান থেকে উত্তর দিকে অবস্থিত জিরো পয়ন্টে সংলগ্ন ঢাকা জিপিও ভবন – এর পূর্ব দিকে এই মসজিদটি অবস্থিত। এর পূর্ব দিকে রয়েছে বঙ্গবন্ধু আন্তজার্তিক স্টেডিয়াম। পশ্চিম দিকে জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন জিপিও ভবন; উত্তর দিকে পল্টন সড়ক এবং দক্ষিণে রমনা ভবন।

শুরুর ইতিহাস :
১৯৫৯ সালের কথা। এ ভূ-খন্ডটি তখন পাকিস্তানের অংশ। দেশে তখন চলছিল সামরিক শাসন। দেশের এই ক্রান্তিলগ্ন সময়ে বিখ্যাত বাওয়ানী জুট মিলস গ্রুপের মালিক হাজী আবদুল লতিফ বাওয়ানী পূর্ব পাকিস্তান শামরিক শাসক মেজর জেনারেল ওমরাও খানের নিকট বায়তুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ওমরাও খান মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে কোনো প্রকার অনীহা প্রকাশ না করে সরকারের সক্রিয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ১৯৫৯ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকায় আব্দুল লতিফ বাওয়ানীর বাড়িতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।বায়তুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণের এ সভায় উপস্থিত ছিলেন শিল্পপতি জি.এ.মাদানী, হাজী আব্দুল লতিফ বাওয়ানী, এম.এইচ. আদমজী, এস. সাত্তার, মুহাম্মদ সাদিক, এ জেড.এন. রেজাই করিম, ইয়াহিয়া আহমদ বাওয়ানী ও মেজর জেনারেল ওমরাও খান। সভায় উপস্থিত সকলের সর্বসম্মতিক্রমে মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।এখন যে জায়গায় মসজিদটি অবস্থিত সেখানে আগে ছিল বিশাল একটি পুকুর। এই পুকুরটি সকলের নিকট পল্টন পুকুর নামে পরিচিত ছিল। পুকুর ভরাট করে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।

সিদ্ধান্ত পরবর্তী বিভিন্ন দিক :
প্রথম থেকেই বায়তুল মোকাররম মসজিদ সরকার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। পুকুর ভরাট হলে ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের ডিজাইন করেন প্রকৌশলী আবুল হোসেন থারিয়ানী। প্রকৌশলী মঈনুল হোসেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের নির্মাণ কাজের তদারকি করেন।

মসজিদের আয়তন :
বায়তুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণের লক্ষ্যে ৮.৩০ একর জমি বরাদ্দ দেয় সরকার। মসজিদের আয়তন ৬০ হাজার বর্গফুট। বাইরে থেকে দেখলে বায়তুল মোকাররম মসজিদকে ‘কাবার’ মডেলের মতো মনে হবে। বায়তুল মোকাররম মসজিদটি প্রধানত ৮তলা। নীচতলায় বিপণী বিতান ও গুদামঘর, প্রথমতলা থেকে ষষ্ঠ তলা ভবন বা ইমারত। মেজেনাইন ফ্লোর বা ব্যালকুনি। এই হল আটতলা। কিন্তু সাধারণ ব্যবহৃত হচ্ছে ৬ তলা। মুসল্লিরা যে জায়গা বায়তুল মোকাররম মসজিদের ব্যবহার করে থাকে, তা হলো পুরুষদের নামাজের জায়গা ১ম তলা ২৬,৫১৭ বর্গফুট। মেজেনাইন ফ্লোর ১,৮৪০ বর্গফুট। দ্বিতীয় তলার আয়তন ১০,৬৬০ বর্গফুট। তৃতীয় তলার আয়তন ১০,৭২৩ বর্গফুট। চতুর্থ তলার আয়তন ৭৩৭০ বর্গফুট, পঞ্চম তলার আয়তন ৬,৯২৫ বর্গফুট এবং ষষ্ঠ তলার আয়তন ৭৪৩৮ বর্গফুট। জুমআ-ঈদ উপলক্ষে নামাজ পড়া হয় বাড়তি ৩৯,৮৯৯ বর্গফুট। মহিলাদের নামাজের জায়গা ৬,৩৮২ বর্গফুট। পুরুষদের ওজুখানার জন্য ব্যবহৃত হয় ৬,৪২৫ বর্গফুট। মহিলাদের ওজুখানার জন্য ব্যবহৃত হয় ৮৮০ বর্গফুট। সব মিলিয়ে মুসল্লিরা বায়তুল মোকাররম মসজিদের ১ লাখ ২৫ হাজার ৬২ বর্গফুট এলাকা ব্যবহার করে। মসজিদের প্রবেশ পথটি রাস্তা হতে ৯৯ ফুট উঁচুতে।

নির্মাণ পরবর্তী বিভিন্ন দিক :
১৯৬৩ সালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রথম পর্বের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।১৯৬৩ সালের ২৫ জানুয়ারি শুক্রবার বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রথম জুমআর নামাজ আদায় করা হয়। আর তারাবীহ নামাজও হয় ২৬ জানুয়ারি শনিবার ১৯৬৩ সালে।বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রথম খতিব ছিলেন মাওলানা আবদুর রহামন বেখুদ (রহ:)। তিনি ১৯৬৩ সালে এই মসজিদের খতিব হন। এরপরে খতিব হন মাওলানা ক্বারী উসমান মাদানী (রহ:)। তিনি এ মসজিদের খতিব ছিলেন (১৯৬৩-১৯৬৪) মাত্র এক বছর। পরবর্তী খতিব ছিলেন মুফতী সাইয়েদ মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান। তিনি ১৯৬৪-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর এ মসজিদের খতিব হন মুফতী মাওলানা মুইজ (রহ:)। তিনি দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৪-১৯৮৪ সাল পর্যন্ত। এরপরে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দায়িত্ব পালন করেন খতিব মাওলানা উবায়দুল হক (রহ:)। তিনি ছিলেন দেশ বরেণ্য আলেম। তিনি খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮৪-২০০৯ সাল পর্যন্ত। তারপর ২৪ বছর যিনি এখানে ইমামের দায়িত্ব পালন করেছিলেন সেই মুফতি মাও: নুরুদ্দীন সাহেব এক বছর ভারপ্রাপ্ত খতিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বর্তমানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিবের দায়িত্বে রয়েছেন প্রফেসর মাওলানা মো:সালাহ্উদ্দিন। তিনি ৫ জানুয়ারি ২০০৯ সালে এ মসজিদের খতিব নিযুক্ত হন।

পরিচালনা পর্ষদ :
বায়তুল মোকাররম মসজিদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন। সরকারি বেতন স্কেল, পদমর্যাদা, পদবিন্যাস ইত্যাদি মসজিদের খেদমতে নিয়োজিত কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও সমান। বায়তুল মোকাররম মসজিদের বিভিন্ন পদে যারা নিয়োজিত আছেন তারা হলেন: খতিব ১ জন, ইমাম ৩ জন, মুয়াজ্জিন ২ জন, খাদেম ২০ জন, মাইক অপারেটর ১ জন, গার্ড ৫ জন।১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। বিশ্বের বিখ্যাত মসজিদগুলোর একটি ঢাকা বায়তুল মোকাররম মসজিদ।

https://www.youtube.com/watch?v=0znVMsVb44I



মন্তব্য চালু নেই