জেনে নিন : ক্রিকেটের ইতিহাসে কেন ঐ দিনটি অমর হলো

একটি খেলাতে জিতবার জন্য আলিমদার, ইয়ান গোল্ড আর তৃতীয় আম্পায়ারের তীব্র পরিশ্রম , থেলা চলাকালীন স্কোর বোর্ডে জিতেগারে জিতেগা ইন্ডিয়া জিতেগা লিখে দেয়া, আইসিসির নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব, সব মিলিয়ে অসাধারণ এক বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল উপহার দেবার জন্য আই সি সি বা ইন্ডিয়ান চিটিং কাউন্সিলকে অভিনন্দন।

আসুন ক্রিকেটের ইতিহাসে এই দিনটি কেন অমর হলো, সেটি দেখা যাক।

১. কোমরের নিচ দিয়ে চলে যেতো যে বল সেটাকে নো বল বলে ঘোষণা করে নতুন নো বল আইন তৈরী করেছে আলিমদার। এই গর্দভটা যখন ম্যাচ টানটান তখন পোকার কামড় খাবার উসিলায় সময় নষ্ট করেছে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে ঠান্ডা হবার সময় দিয়েছে।এর ভুল সিদ্ধান্ত দেবার ঘটনা এটাই প্রথম না।

২. লেগ এর বাইরে নাকি হাফ মিলিমিটার ছিল এই উসিলায় একটা নিশ্চিত এলবিডাব্লিউ আবেদন বাতিল করেছে গোল্ড।

৩. ম্যাচ চলাকালীন স্কোরবোর্ডে ভারতীয় দলকে উৎসাহ দেয়া হয়েছে।

৪. রিয়াদের মারা বল ফিল্ডারের হাতের স্পর্শ পেয়েছে যখন তখন, ধাওয়ানএর পা লেগে আছে বাউন্ডারী লাইনে। তার মানে সেটা ৬। অথচ সেটাকে আউট দিয়েছে থার্ড আম্পায়ারের কথা ছাড়াই।

৫. তামিমের আউটটার সময় রিপ্লেতে ব্যাটে বল লাগার যে নয়েজ দেখানোর নিয়ম, টিভিতে সেটা দেখায় নাই। শুধু তাই না, বলটা যে ধোনি মাটি থেকে কুড়ায় নাই, সেটাও রিপ্লেতে ভালো করে বোঝা যায় নাই।এসব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত বেনেফিট অব ডাউটে সবসময় ব্যাটসম্যানের পক্ষে যাবার নিয়ম।অথচ আউট দেয়া হলো তামিমকে।

৬. সময় মতো আউটগুলি দিলে ভারতের ৫০ থেকে ৬০ রান কম হতো, আমাদের উপর মানসিক চাপ কমে যেতো, আর ফালতু আউট এর সিদ্ধান্তগুলি না দিলে আমরা ম্যাচটাতে আরো ভালো ব্যাটিং করতাম।আরো উজ্জিবীত থাকতো বাংলাদেশ দল।

অন্য সময় আমরা হারলে রেগে যাই, দুঃখ পাই, কাঁদি। এবার আমরা হেরে গর্বিত হয়েছি।ভারত নামের গণমাধ্যমনির্ভর কাগুজে দলটির পেট পাতলা করে দিতে পেরেছে আমাদের ক্রিকেট দল। এটা সেই ভারত যারা আজো আমাদের সাথে কোন হোম সিরিজ খেলে নাই। এটা সেই ভারত যারা হেরে গেলে আজহার, ধোনী, কিংবা শেহওয়াগের বাড়ীতে হামলা করে। এরা সেই ভারতীয় অসভ্য সমর্থকদের দল, যাদের অসভ্যতার জন্য মাঠ খালি করে ক্রিকেট খেলতে হয়।

আজকে ভারত হারলে কি হত?

তাদের কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বানিজ্য শেষ হয়ে যেত। খেলোয়াড়দের অনেকের ক্যারিয়ার বিপন্ন হতো। ধোনীর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানানোর হুমকি দিতো আর এস এস, বজ্রং দল আর শিবসেনা। ভারতীয় মিডিয়া গালাগালের চুড়ান্ত করতো, বিএসএফ বেহুদা সীমান্তে গোলাগুলি করতো, গরু পারাপার বন্ধ করে কিছুদিন আমাদের গোমাংস ভক্ষনে ব্যাঘাত ঘটাতো।

Capture

নরেন্দ্র সিং কিংবা মমতা মন খারাপ করতেন, গলা দিয়ে ইলিশ মাছ নামতো না।চুকা ঢেকুর উঠতো বুড়ো ভাম দাড়িয়াল সিং সিধুর।

আর আমরা হেরেছি, তাতেও আমাদের হাসি অমলিন।আমাদের হারাতে স্বরুপ উন্মোচিত হয়েছে ভারত ও তার মোড়ল বন্ধুদের সংগঠন আইসিসির।১৪ জন মিলে মাঠে খেলেছে বাংলাদেশের বিপরীতে।টেলিভিশনে তাদের হয়ে খেলেছে ভাষ্যকারেরা। আজকের খেলা আবার প্রমান করেছে কেন ক্রিকেট একদল অপদার্থ অভিজাতের খেলা যেখানে তারা তাদের ইচ্ছামত নিয়ম বদলায়, বানায়, বাতিল করে, যাতে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব কোনভাবেই হুমকির মুখে না পড়ে।ভারতীয় বাজার বিরাট, ক্রিকেটের টাকা প্রায় পুরোটাই আসে ভারত খেকে, তাই আইসিসির ভারতকে ফাইনালে চাই। একারনেই এত জোচ্চুরীর আয়োজন।

আমাদের এগারজন খেলোয়াড় প্রতিকুলতার বিপরীতে তাদের যোগ্যতা ও প্রতিভা প্রমান করেছে। তারা বুঝিয়ে দিয়েছে , আমাদের মুখোমুখি হবার সাহস কমে গেছে এই মোড়লদের। তাই তারা তাদের মাটিতে আমাদের খেলতে ডাকে না, আমাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে।তারপরেও আমাদের ভয় পায়।

আর আমরা?

রিয়াদের কব্জিতে, সাকিবের ঘুর্ণিতে, তামিমের সাহসে, মাশরাফির আগ্রাসী চেহারায়, তাসকিনের হাসিতে, রুবেলের চোখের আগুনে, মুশফিকের গ্লাভসে বাংলাদেশ এর ষোলকোটি মানুষ একসাথে খেলে।

আমরা ঝড়, জলোচ্ছাস বন্যায় একসাথে থাকি।ছেড়া শাড়ী দিয়ে কাঁথা বানাই আবার নৌকার পালও বানাই।অভাবের দিনের জন্য তুলে রাখা মুড়ি গুড় দিয়ে অতিথিকে আপ্যায়ন করে নিজে না খেয়ে থাকি। আমরা একসাথে মরি, বাঁচি।

এই তো শুরু কেবল… আগামীর মানুষেরা তৈরী হচ্ছে…. ওরা আমাদের জন্য প্রস্তুত নয়, আমরা প্রস্তুত।

আমাদের হিংসার রাজনীতি, আকাশপ্রমাণ দুর্নীতি, বিচারহীনতা ও সামাজিক অন্যায় সব ছাপিয়ে , আমাদের ভালোবাসা চিরকাল জয়ী হয়, আজো হয়েছে।

পৃথিবী প্রতিবছর আমাদের নানারকম তকমা লাগায়, সেরা দুর্নীতিবাজদের তালিকাতে নাম ছাপে, ঢাকাকে বসবাস অযোগ্য বলে, আরো কত কি? বিদেশী রাষ্ট্রদুতদের আমাদের নিয়ে চিন্তার অন্ত থাকে না, জাতিসংঘ প্রায়ই আমাদের নিয়ে উৎকন্ঠায় ওরস্যালাইন খায়।

আমরা তারপরেও প্রতিদিন সমস্বরে গাই আমাদের জাতীয় সংগীত।আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।

উষার দুয়ারে আঘাত হেনে রাঙ্গা প্রভাত নিয়ে আসি।

আর একদিন করবো জয় এই বিশ্বাস নিয়ে মরি, বাঁচি, যেমনই থাকি না কেন, দেশকে এক মুহুর্তের জন্য ছেড়ে যাই না, ভুলে থাকি না । মেলবোর্ণ তাই হয়ে ওঠে শেরে বাংলা স্টেডিয়াম, আমরা প্রত্যেকে হয়ে যাই একটুকরো বাংলাদেশ।

আমাদের অন্তরে বাজে…

ওমা তোমার চরণদুটি বক্ষে আমার ধরি,
আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি।

মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও জননন্দিত উপস্থাপক আব্দুন নূর তুষারের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেওয়া



মন্তব্য চালু নেই