জুলহাজ-তনয় হত্যা: এক বছরেও তদন্তে হয়নি কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি
সমকামীদের অধিকারবিষয়ক সাময়িকী ‘রূপবান’-এর সম্পাদক জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বি তনয় হত্যাকাণ্ডের এক বছরেও সরাসরি জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তদন্তেও হয়নি কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি। এদিকে গত এক বছরে ১২ বার পিছিয়েছে ওই ঘটনায় করা দুই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়ার তারিখ।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করায়ই জুলহাজ মান্নানকে টার্গেট করে জঙ্গিরা। আনসার আল ইসলামের পাঁচ সদস্যের একটি দল এ হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলেও জানা গেছে। ইতিমধ্যে তিনজনকে শনাক্ত করেছে ডিবি।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, জুলহাজ-তনয় হত্যায় এখনো সরাসরি কাউকে গ্রেফতার করা না গেলেও দুইজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ভিন্ন মামলার আসামি গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকেও এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তথ্য মিলেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় শিহাব ও রশিদুন্নবী নামে দুজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে আরও ৪-৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. রাজীব আল মাসুদ বলেন, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচজনের সাংগঠনিক নাম পাওয়া গেছে। তবে তাদের এখনো শনাক্ত করা যায়নি। হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সেলিম গ্রেফতার হলে এই মামলার তদন্তে অগ্রগতি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
গত বছরের ২৫ এপ্রিল মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা ও ইউএসআইডিতে কর্মরত জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। দুজনকে হত্যার সময় বাধা পেয়ে কিলার গ্রুপের সদস্যরা জুলহাজ মান্নানের বাড়ির দারোয়ান পারভেজ মোল্লার ওপরও হামলা চালায়। হত্যাকাণ্ডের পর আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ (একিউআইএস) শাখা ঘটনার দায় স্বীকার করে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার দিন ৫ সদস্যের কিলার গ্রুপ পালানোর সময় তাদের একজনের কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে রাখেন কলাবাগান এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এএসআই মমতাজ। যেখানে একটি পিস্তল, একটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও মোবাইল ফোন পায় পুলিশ। এ ছাড়া খুনিদের পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য স্থানীয় একটি বাড়ির ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
হত্যাকাণ্ডের ১৯ দিন পর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের সদস্যরা কুষ্টিয়া থেকে শরিফুল ইসলাম ওরফে শিহাবকে গ্রেফতার করেন। তার কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারে পুলিশ। সে এই জোড়া খুনের ঘটনায় অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। তবে শিহাব ঘটনাস্থলে ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমউদ্দিন সামাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে রাশেদুন্নবী নামে আনসার আল ইসলামের এক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। পরে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ‘রাশেদুন্নবী ব্লগার নাজিম হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি। এছাড়া সে ইউএসএআইডি কর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিল।’
তিনি জানান, ‘জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যাকাণ্ডের পুরো পরিকল্পনা করেন সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত সাবেক মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ও তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড সেলিম। এর মধ্যে সেলিম ছিলেন অপারেশন কমান্ডার। পুরো কিলার গ্রুপকে সেলিমই পরিচালনা করেন।’
মন্তব্য চালু নেই