জুমাতুল বিদায় মসজিদে মসজিদে প্রার্থনা
যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে শুক্রবার মসজিদে মসজিদে জুমাতুল বিদা পালিত হয়েছে।
মহান আল্লাহপাকের কাছে প্রার্থনা ও পুণ্য লাভের আশায় শুক্রবার জুমাতুল বিদায় নামাজ আদায় করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। জুমাতুল বিদার খুতবায় উচ্চারিত হয় ‘আলবিদা, আল বিদা, ইয়া শাহর রামাদান। অর্থাৎ বিদায়, বিদায় হে মাহে রমজান।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ সব মসজিদে জুমাতুল বিদায় বিপুলসংখ্যক মুসল্লি নামাজে অংশ নেন। শত শত মুসল্লি মসজিদে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় জায়নামাজ, খবরের কাগজ বিছিয়ে নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে দেশের কল্যাণ, বিশ্বশান্তি ও নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য দোয়া করেন মুসল্লিরা।
এ দিকে শুক্রবার নামাজের আগে থেকেই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে চোখে পড়ার মতো মুসল্লিদের ভিড় দেখা গেছে।
মুসল্লিদের ভিড়ের কারণে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের সামনে মুসল্লিদের ওযুর জন্য জন প্রতি ৫ টাকা করে নিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে মসজিদের বাইরে পানি জমায় অনেক মুসল্লিদের নামাজ পড়তে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। নামাজ পড়ার জন্য বড় কাগজ বিক্রি করছে ১০ টাকা করে।
রমযানের শেষ জুম্মা উপলক্ষে দেশের সকল মসজিদগুলোতে বিশেষ মোনাজাতের ব্যবস্থা ছিল।
রমজান মাসের শেষ জুমাবার। সারাবিশ্বের মুসলমানরা আল কুদ্স দিবস হিসেবেও এ দিনটি পালন করে থাকেন। রমজান মাসজুড়ে রোজাব্রত পালন আর ইবাদত বন্দেগীর পর আজকের এই জুমাতুল বিদায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রমজান মাসকে বিদায় জানাতে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন।
ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, রমজানে জুমার নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা কর হয় জুমাতুল বিদাকে। তাদের মতে রমজান মাসের সর্বোত্তম বা উৎকৃষ্ট দিবস হলো জুমাতুল বিদা। রমজান মাসের শেষ শুক্রবার অথবা শেষ জুমার দিনকে জুমাতুল বিদা হিসেবে মুসলিম বিশ্বে পরিচিত। তাই এদিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।
তাদের মতে এ দিনটি মুসলমানদের কাছে বিশেষ তাৎপর্য যে এ দিনে আল্লাহর নবী হযরত দাউদ (আ.)-এর পুত্র হযরত সুলাইমান (আ.) জেরুজালেম নগর প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহর মহিমা তুলে ধরতে তিনি সেখানে মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদ আল-আকসা পুননির্মাণ করেন। মক্কার মসজিদে হারাম, মদিনার মসজিদের নববীর পর মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হচ্ছে বায়তুল মোকাদ্দাস বা মসজিদ আল-আকসা।
প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ শুক্রবারে বিশ্বের মুসলমানরা ইসরাইলের কবল থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসকে মুক্ত করার জন্য নতুন শপথ নিয়ে থাকেন। এজন্য রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে আল কুদ্স দিবস বলা হয়। এদিনের বিশ্বের মুসলমানরা মুসলিম উম্মার ঐক্য, তাদের উন্নয়ন, আল কুদ্সের মুক্তি জন্য আল্লাহ্র দরবারে বিশেষ প্রার্থনা করে থাকে।
ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, রমজান মাসের জুমা দিনের ফজিলত ও মর্যাদার দিক থেকে অন্য সময়ের চেয়ে অবশ্যই ভিন্ন। তাই মুসল্লিরা রমজানের জুমা দিনগুলোকে একটু ভিন্ন পরিবেশেই দেখে থাকেন। এ কারণে অন্য সময়ের তুলনায় রমজানে জুমার নামাজে মুসল্লিদের ভিড় থাকে বেশি। রমজান এবং জুমা দিন উভয় মিলেই এ দিনের মর্যাদা অনেক অনেক বেশি। তাই এদিনে রোজাদার ব্যক্তি নিজেদের আমলের ঝুড়িকে ভারি করতে আরও বেশি তৎপর হয়ে থাকেন। জুমা নামাজ বাদেও এদিনে রোজাদার ব্যক্তি বেশি পরিমাণ দানের জন্য নিজেদের হাতকে প্রসারিত করে থাকেন। জুমা দিনের ফজিলত রোজার মাসে সবচেয়ে বেশি হওয়াতে মুসল্লিরা ইবাদতের পরিমাণকে বৃদ্ধি করে থাকেন। বিশেষ করে এদিনে গরিব অসহায় রোজাদারদেরও ইফতার করানোর সুযোগ কেউ হাত ছাড়া করতে চায় না। একই কারণে রমজানের শেষ জুমাবার আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ রোজাদারদের কাছে।
মন্তব্য চালু নেই