প্রত্যাহার হতে পারে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার
জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহার ও জাতীয় জাদুঘরে রাখা পুরস্কারের মেডেল, সম্মাননাপত্র সেখানে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মন্ত্রিসভা কমিটির এই সুপারিশ ও সিদ্ধান্ত খুব শিগগির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেয়ার পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সব সদস্য এ ব্যাপারে বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে একমত পোষণ করেছেন। তবে এ বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের বিষয়টি অত্যন্ত গোপন রাখা হয়।
জানা গেছে, জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি প্রাধান্য দিয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হলো হাইকোর্টের রায়। যেখানে রায়ের প্রথমেই বলা হয়, ১৯৭৫-এর নভেম্বর থেকে ১৯৭৯ সালের মার্চ পযর্ন্ত সংসদ ছাড়াই বাংলাদেশে সরকার চলেছে। একনায়কতন্ত্র হিসেবে দেশ চালিয়েছে সরকার। যেখানে ছিল না কোনো গণতন্ত্রের ছোঁয়া।
ওই বৈঠকে মন্ত্রিসভা কমিটি সুপ্রিমকোর্টের আপিলেট ডিভিশনের আদেশটির ওপর গুরুত্ব দেয়। যেখানে বলা হয়েছে, ‘সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের শাস্তি পাওয়া উচিত। যেন মানুষ সংবিধান লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ভয় পায়।’ যেহেতু জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা আরোহণকে হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট ও আপিলেট ডিভিশন অবৈধ ঘোষণা করেছেন তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে আমলে নিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
এ ছাড়া কমিটি মনে করে, স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত ২০১৬ সাল পর্যন্ত সংশোধিত নির্দেশাবলির ২০০৩ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্তটি সাংঘর্ষিক। আর এই পুরস্কার যদি জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয় তা হলে আগামী প্রজšে§র কাছে ভুল ইতিহাস উপস্থাপিত হবে। একই সঙ্গে একটি ভুল বার্তা যাবে। যে কারণে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একইভাবে জাতীয় জাদুঘরে আর এই পুরস্কার সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে জিয়াউর রহমানকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় পুরস্কারের মেডেল, সম্মাননাপত্র কোনো উত্তরাধিকারকে না দিয়ে বাংলাদেশ জাদুঘরের একটি কর্নারে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
চলতি বছরের জুলাই মাসে অর্থাৎ ২৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি নথি পাঠানো হয়। যেখানে প্রয়াত জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি পদ বা রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাষ্ট্র ক্ষমতা আরোহণের বিষয়টি হাইকোর্টে রিট পিটিশন আদেশের মাধ্যমে অবৈধ ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়াও নথিতে স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত সংশোধিত নির্দেশমালা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, স্বাধীনতা পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। তাই এই পুরস্কারের জন্য চূড়ান্তভাবে প্রার্থী নির্বাচনকালে দেশ ও মানুষের কল্যাণে অসাধারণ অবদান রেখেছেন এমন সীমিত সংখ্যক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেই বিবেচনা করা হবে।
মন্তব্য চালু নেই