জিল্লুর রহমানের কবরে আ.লীগের শ্রদ্ধা নিবেদন

বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি, বর্ষীয়ান রাজনীতিক, ভাষা সৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মো. জিল্লুর রহমানের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো।

শুক্রবার সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

এ সময় আওয়ামী লগের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রাজ্জাক ছাড়াও ছাত্রলীগের সভাপতিসহ সাহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও জিল্লুর রহমানের পরিবার, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

২০১৩ সালের এই দিনে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মো. জিল্লুর রহমান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে বাবা-মা-ভাইসহ সবাইকে হারানোর পর বঙ্গবন্ধু পরিবারের অঘোষিত অভিভাবক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ এই সহচর।

‘জিল্লুর রহমান স্মৃতি পরিষদ’ ও ‘জনতার প্রত্যাশা’ এর যৌথ উদ্যোগে তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া জিল্লুুর রহমানের গ্রামের বাড়ি ভৈরবের বিভিন্ন স্থানে মিলাদ ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।

যে কয়েকজন কীর্তিমান পুরুষ স্বাধিকার, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা আর মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্যে জিল্লুর রহমান অন্যতম। একজন স্বেচ্ছাসেবক হয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করে দীর্ঘ ৬২ বছরের রাজনৈতিক পথচলায় দেশের ১৯তম রাষ্টপতি হয়েছিলেন জিল্লুর রহমান। তিনি ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি নবম জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ এম.এ. ও এল.এল.বি. ডিগ্রি লাভ করেন।

ছাত্রজীবন থেকেই জিল্লুর রহমান রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৪৬ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সিলেটে গণভোটের কাজ করার সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৬২ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণআন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে তিনি অংশগ্রহণ করেন।

জিল্লুর রহমান রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক। তিনি মুজিবনগর সরকার কর্তৃক পরিচালিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পরিচালনা এবং জয় বাংলা পত্রিকার প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে ২০ বছর কারাদ-ের সাজা দেয় ও সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনসহ `৭৩, `৮৬, `৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ জেলার একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জিল্লুর রহমান। এর আগে ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি বাকশালের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পর মারা যান জিল্লুর রহমানের স্ত্রী, মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী আইভী রহমান। তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। ছেলে নাজমুল হাসান পাপন জাতীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও (বিসিবি) সভাপতি।



মন্তব্য চালু নেই