জামায়াতের ডাকে প্রথমদিনের হরতাল চলছে

আজ বুধবার জামায়াতের ডাকা প্রথম দিনের হরতাল শুরু হয়েছে। দেশব্যাপী এ হরতাল চলবে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাতটুকু বিরতি দিয়ে আগামীকাল বৃহষ্পতিবারও সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে। বুধবার সকাল থেকে এ হরতাল শুরু হলেও দেশের কয়েকটি স্থানে ঝটিকা মিছিল ও পিকেটিং-এর খবর পাওয়া গিয়েছে।
মঙ্গলবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এর প্রেক্ষিতে ওইদিন দুপুরে দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা এবং বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলবে।

অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এতোদিন সাংবাদিকদের গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকলেও এবার বিবৃতিতে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ ৩টি অপরাধে এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড দেন।

এছাড়া আরো দুই অভিযোগের মধ্যে একটিতে ২৫ বছর এবং অপরটিতে পাঁচবছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তবে একটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সেখান থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।

জামায়াতের মিছিল পিকেটিং, পুলিশের ধাওয়া

ফাইল ফটো জামায়াতের মিছিল পিকেটিং, পুলিশের ধাওয়া

ঢাকা: হরতালের সমর্থনে রাজধানীর মগবাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামি। এছাড়াও মগবাজার, নয়াটোলা, মধুবাগসহ আরো বেশ কয়েকটি স্পটে পিকেটিং করেছে রমনা থানা জামায়াতের কর্মীর।

বুধবার সকাল সাতটায় মগবাজার রেলগেট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন রমনা থানা জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

মিছিলটি মগবাজার রেলগেট থেকে শুরু হয়ে চৌরাস্তায় পৌঁছলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়।

থানা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে অংশ নেন থানা কর্মপরিষদ সদস্য ইউসুফ আলী মোল্লা, আব্দুল কাইয়ুম শিবির নেতা আশ্রাফ উদ্দিন, মুরাদ হোসেন ও আকরাম হোসেন প্রমুখ।

উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করার প্রতিবাদে বুধবার ও বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াত।

গতকাল মঙ্গলবার আজহারের রায় ঘোষণার পর এক বিবৃতিতে এ হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।

উত্তরা ও মহাখালীতে শিবিরের মিছিল
মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে ডাকা হরতালের প্রথম দিনে রাজধানীর উত্তরা ও তিতুমীর কলেজ এলাকায় মিছিল ও পিকেটিং করেছে ইসলামি ছাত্রশিবির।

বুধবার সকাল ৭টায় উত্তরার দক্ষিণ খান এলাকায় মিছিল করে শিবিরের ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখা। মিছিলে নেতৃত্ব দেন শাখা সেক্রেটারি তারিক হাসান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রচার সম্পাদক জাকের হোসাইন, বিতর্ক সম্পাদক কাউসারুজ্জামান, উত্তরা পূর্ব সভাপতি মনোয়ার হোসেন, উত্তরা পশ্চিম সভাপতি জোবায়ের হোসাইনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

shibir উত্তরা ও মহাখালীতে শিবিরের মিছিলএদিকে মহাখালীর কলেরা হাসাপাতাল এলাকায় সকাল সোয়া সাতটায়  হরতালের সমর্থনে মিছিল করেছে ইসলামি ছাত্রশিবির তিতুমীর কলেজ শাখা। মিছিলে নেতৃত্ব দেন তিতুমীর কলেজ সভাপতি সোয়াইব আক্তার। অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন- বনানী থানা সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, আইএইচটি সভাপতি শহিদুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

চোরাগুপ্তা পিকেটিং ও বিক্ষোভে চলছে হরতাল

রংপুর: জেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় চোরাগুপ্তা পিকেটিং আর খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিলের মধ্য দিয়ে রংপুরে চলছে জামায়াতে ইসলামীর দু’দিনের ডাকা হরতালের প্রথম দিন।

যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজাহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রত্যাখ্যান করে তার গ্রামের বাড়ি বদরগঞ্জের বাতাসন গ্রামে বিক্ষুদ্ধ আজাহার সমর্থকরা পিকেটিং ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। রংপুর ম্যাপ চোরাগুপ্তা পিকেটিং ও বিক্ষোভে চলছে হরতাল

এ সময় তারা বেশ কয়েকটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। সড়কে ইট ফেলে এবং টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের চেষ্টা করে।

এদিকে, হরতালের সমর্থনে বদরগঞ্জের লোহানী ইউনিয়ন, নাগেরহাট, রামনাথপুরসহ মিঠাপুকুর, তারাগঞ্জ, পীরগাছা ও রংপুরে বিক্ষোভ করেছে জামায়াত-শিবির।

বুধবার সকালে মিঠাপুকুরের গড়েরমাথার কাছে দিনাজপুর-ফুলবাড়ী মহাসড়কে ট্রাক, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলে পিকেটিং করেছে জামায়াত-শিবিরের লোকজন। এ সময় তারা ইট পাকটেল ছুড়ে বেশ কয়েকটি অটোরিকশা ও দু’টি ট্রাকের সামনের গ্লাস ভেঙে যায়।

রংপুরে হরতালের কারণে দোকানপাট একটু দেরি খুলতে দেখা গেছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের। তবে দূরপাল্লার ভারী যানবাহন বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক রয়েছে ট্রেন চলাচল। জেলার কোথাও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রংপুরসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের টহল অব্যহত রয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।

রংপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদের জিলানী জানান, হরতালে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

জামায়াতের হরতাল চলছে, আটক ১৫

খুলনা: জামায়াতের ডাকা হরতালের প্রথম দিন খুলনায় পালিত হচ্ছে ঢিলেঢালাভাবে। নগরী ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে অন্তত ১৫ জামায়াত-শিবির কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

বুধবার সকাল থেকে হরতালের সমর্থনে জেলা ও নগরীতে কোথাও পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি।

বুধবার ভোর থেকে সারা দেশের মতো খুলনাতেও জামায়াতের ডাকা দুই দিনব্যাপী হরতালের প্রথম দিন শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে। নগরীতে রিকশা, ইজিবাইকসহ ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করলেও প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত নগরীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেশিরভাগ বন্ধ রয়েছে।Khulna-Hortal-pic-by-Hedayet-2--31-12-14 জামায়াতের হরতাল চলছে, আটক ১৫

সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টারমিনাল থেকে দূরপাল্লা বা স্থানীয় রুটে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এমনকি অন্য কোনো রুট থেকে সকাল ৬টার পর আর কোনো বাস প্রবেশও করেনি। তবে খুলনায় রেল ও নৌপথে চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তাছাড়া মালবাহী ট্রাক চলাচল করতে দেখা গেছে।

জামায়াতের জেলা পর্যায়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ‘ডুমুরিয়া উপজেলায় ৪ জন ও ফুলতলা উপজেলায় ১ জন কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আরও কিছু নেতাকর্মী আটক হয়েছে বলে সংবাদ পেয়েছি তবে সংখ্যা বলতে পারছি না।’

খুলনা রেল স্টেশনের মাস্টার কাজী আমিরুল ইসলাম জানান, হরতালে রেল চলাচলে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়নি। রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে। রেল লাইনের বিভিন্ন স্থানে রেলকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে রাখা রয়েছে। যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে রেলকর্মীরা তৎপর রয়েছে।

খুলনা বিভাগীয় বাস মিনিবাস মালিক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক মো. আব্দুল ওয়াদুদ সরদার বাংলামেইলকে জানান, হরতালে এক শ্রেণীর দুর্বৃত্তরা বাসের ক্ষতিসাধনসহ প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটায়। তাই সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে বাস চলাচল বন্ধ রাখা রয়েছে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখার (সিটিএসবি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, নগরীতে কোথাও পিকেটিং দেখা যায়নি। নগরীতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা তাদের টহল ব্যবস্থা জোরদার করেছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন অভিযোগে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।

খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান জানান, জেলার ৯ উপজেলায় কোথাও হরতালে পিকেটিং বা নাশকতার খবর পাওয়া যায়নি। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও র‌্যাব টহল ব্যবস্থা জোরদার করেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিজিবি টহল দিচ্ছে।

রাস্তায় ব্যারিকেট দেয়ার চেষ্টা, পুলিশের ধাওয়া

লক্ষ্মীপুর: জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুলের ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে জামায়াতের ডাকা হরতালের ১ম দিনে জামায়াত-শিবির কর্মীরা রাস্তা ব্যারিকেট দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশ এক শিবিরকর্মীকে আটক করে।

বুধবার সকালে দিকে এ ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরা হরতাল রাস্তায় ব্যারিকেট দেয়ার চেষ্টা, পুলিশের ধাওয়া

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, হরতাল চলাকালে সকালে শহরের দক্ষিণ তেমুহনী এলাকায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা রাস্তা অবস্থায় নিয়ে ব্যারিকেট দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ধাওয়ার করলে হরতাল সমর্থকরা পালিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ রাস্তায় ব্যারিকেট উঠিয়ে দেয়।

অপরদিকে, শহরের টারমিনাল এলাকা থেকে রাকিব হোসেন (২৩) নামে এক শিবিরকর্মীকে আটক করে। তিনি পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড শিবিরের সেক্রেটারি বলে দলীয় সূত্রে দাবি করা হচ্ছে।

এদিকে স্থানীয়রা জানান, ভোরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ শহরের টাররমিনাল এলাকা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালায়। এ সময় হরতাল সমর্থকরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। হরতালের জেলা সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

জেলা সহকারী পুলিশ সার্কেল মো. নাছিম মিয়া জানান, হরতালে যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে পুলিশ সর্তক অবস্থায় রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই