জামায়াতের ডাকা ২৪ ঘণ্টার হরতাল শুরু

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার প্রতিবাদে সংগঠনটির ডাকা ২৪ ঘণ্টার হরতাল সকাল ৬টায় শুরু হয়েছে। চলবে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ মঙ্গলবার বহাল রাখে হাইকোর্টের আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ২৪ ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে বিবৃতি দেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ।

সকাল ৬টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় দেশের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে, জামায়াতের ডাকা হরতালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৩৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে মোতায়েন করা হয়েছে ১৮ প্লাটুন। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

জামায়াতের প্রচার বিভাগের দায়িত্বে থাকা এস আলম স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে মকবুল আহমাদ বলেন, ‘সরকারের দায়ের করা মিথ্যা, বায়বীয় ও কাল্পনিক অভিযোগে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করার প্রতিবাদে ও তিনিসহ আটক সব নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবিতে এ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে হত্যার সরকারি ষড়ন্ত্রের প্রতিবাদে, তিনিসহ আটক জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবিতে ১৭ জুন বুধবার সকাল ৬টা থেকে ১৮ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী ২৪ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করছি। ঘোষিত এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার জন্য দেশের বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, আইনবিদ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’

হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ওষুধের দোকান প্রভৃতি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির অভিযোগ করেন, সরকার জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে বিচারের নামে প্রহসনের আয়োজন করেছে। সরকারি ষড়যন্ত্রের শিকার আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ। তার আপসহীন নেতৃত্বে দিশেহারা হয়ে সরকার তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করে। মাননীয় ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদকে ১, ৬, এবং ৭ নং অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। মুজাহিদ এ রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। মাননীয় আপিল বিভাগ জনাব মুজাহিদের আপিল খারিজ করে ৬ নং অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল প্রদত্ত মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এ রায়ে জনাব মুজাহিদ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দেশের জনগণ এ রায়ে হতাশ হয়েছে।

তিনি বিবৃতিতে বলেন, ‘সরকারের দায়ের করা মামলাটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত মুজাহিদের বিরুদ্ধে ফরিদপুর জেলাধীন কোনো থানায় বা বাংলাদেশের অন্য কোনো থানায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সংঘটিত কোনো অপরাধের জন্য কোনো মামলা হয়েছে, এমন কোনো তথ্য তিনি তার তদন্তে পাননি। মামলার আইও এটাও স্বীকার করেছেন যে, জনাব মুজাহিদ আলবদর, শান্তি কমিটি, রাজাকার বা আলশামস বা এই ধরনের কোনো সহযোগী বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, এমন কোনো তথ্য তিনি তার তদন্তকালে পাননি। এর পরও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে সরকারের সাজানো মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো। তিনি জুলুমের শিকার হয়েছেন।’



মন্তব্য চালু নেই