জাফর ইকবালের পক্ষে সুরঞ্জিত, ভিসির পদত্যাগ চাইলেন তিনিও

জাফর ইকবালদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়ার পদত্যাগ দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও। তিনি বলেছেন, ‘যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিজের স্বার্থে ছাত্রদের ব্যবহার করে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকার কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই।’

সোমবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিশনে একটি আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সুরঞ্জিত বলেন, ‘উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষকদের একটি দ্বন্দ্ব ছিল। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও তদন্ত করে একবার ফয়সালা করা হয়। এখন সেটি ভেস্তে গেছে। তাই শিক্ষামন্ত্রীর উচিৎ সিলেট গিয়ে এ ঘটনার রেশ আর না বাড়ানোর আগেই সমস্যার সমাধান করার।’

ছাত্রলীগের কাণ্ডে বিব্রত হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদেরও উচিৎ শিক্ষকদের সমস্যায় তাদের নাক না গলানোর। যখন বিষয়টির সাথে ছাত্রলীগ জড়িয়ে গেছে, তাই এ ঘটনায় আমরাও বিব্রত।’

আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘শুনলাম তারা (ছাত্রলীগ) শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেছে। গায়েও হাত দিয়েছে। এটা আমাদের বাঙালি সমাজের জন্য অপমানজনক। এ জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিকে আমি বলবো- সিলেট গিয়ে বিষয়টি সমাধান করার।’

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন হতাশা থেকে জাতীয় সনদ দিয়েছেন। তার সঙ্গে কেউ নেই। হঠাৎ করে কামাল সাহেবের ১১ দফা আবার খালেদার জাতিসংঘের অধীনে গুমের তদন্ত দাবি। এগুলা ষড়যন্ত্রের অংশ। এরা ষড়যন্ত্র ছাড়া কোথায়ও বের হয় না। তাই দেশবাসীকে তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। তাহলেই তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’

খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা শুনলাম খালেদা জিয়ার মক্কা ও ভারত যাওয়ার কথা ছিল। এখন উনি জাতিসংঘের কথা বলছেন। কালকে হয়তো শুনবো উনি নিউইয়র্ক যাওয়ার কথা বলছেন।’

সংগঠনের উপদেষ্টা হাজী মো. সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সাম্যবাদী দলের নেতা হারুন চৌধুরী ও সংগঠনের নেতারা।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ এপ্রিল থেকে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’। পর থেকে শিক্ষকদের বাধায় কোনো অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভা করতে পারেননি উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়া।

কিন্তু গতকাল রোববার বিকেলে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভার আহ্বান করেন শাবি উপাচার্য আমিনুল হক ভূইয়া। এর প্রতিবাদে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’।

তাদের কর্মসূচি পালনে বাধা দিতে সকাল ৬টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। অপরদিকে আন্দোলনরত শিক্ষকরাও তাদের কর্মসূচি পালন করতে ক্যম্পাসে অবস্থান নেয়।

ওইদিন সকাল ৮টায় ভিসি তার কার্যালয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ড. ইয়াসমিন হকের নেতৃত্বে আন্দোলনরত শিক্ষকরা ভিসিকে তার কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেয়। এরপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এসে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলা করে। একপর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ব্যানার ছিনিয়ে নেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত ও হতবাক হয়েছেন অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল। বলেছেন, ‘আজকে যারা আমাদের শিক্ষকদের ওপর হামলা করলো তারা যদি আমার ছাত্র হয়, তাহলে আমার গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিৎ। আমি তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি। যারা একটু একটু করে বিশ্ববিদ্যালয়কে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে তাদেরকেই পেটানোর দৃশ্য আমাকে দেখতে হল। আজ যা ঘটল আমি আমার জীবনে এমনটা কখনো কল্পানাও করিনি।’



মন্তব্য চালু নেই