জানা গেল, লন্ডনে বসে তারেক রহমানের গোপন তালিকার গরম খবর!

ওয়ান ইলাভেনের পকিল্পনাকারী, নায়ক, পেছনের ইন্ধনদাতা, তাদের সহযোগী, সরকারের কর্মকর্তা এবং ওই সরকারের উপদেষ্টাদের দুর্নীতির তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করছে বিএনপি। এই জন্য বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি বিশেষ সেল দেশে ও লন্ডনে বসে গোপনে কাজ করছেন। তারা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনের ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ওই সব তথ্যের প্রেক্ষাপটে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিযোগ প্রমাণের জন্য তাদের বিরুদ্ধে নথিপত্র সংগ্রহ করার জন্য সংশ্লিস্ট সূত্র বলেছেন। তারা এই ব্যাপারে কাজ করছেন।

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ওয়ান ইলেভেন সরকারের বেশ কয়েকজনের দুর্নীতির ব্যাপারে প্রমাণও সংগ্রহ করেছে। যাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করেছেন এদের বেশ কয়েকজনের বিদেশে বাড়ি রয়েছে। তারা বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করে বিদেশে পাচার করেছেন বলেও জানতে পেরেছেন। অষ্ট্রেলিয়াতে ওই সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের শীর্ষ এক কর্মকর্তা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের আরেক শীষ কর্মকর্তার বিদেশে বাড়ির ঠিকানাও সংগ্রহ করেছেন। এদের একজন বিদেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ করে সেখানে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন। ব্যাংকের পরিচালক হিসাবে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। আরো কয়েকজন বাড়ি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে, দুবাইয়ে ফ্ল্যাট উপহার নিয়েছেন একটি বৃহৎ গ্রুপের কাছ থেকে তার ব্যাপারেও তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। দেশে অবস্থানকারীও বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছেন। তাদের দুর্নীতির তথ্য পেয়েছেন। এখন চলছে নথিসংগ্রহ করার কাজ। পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের কাছ থেকেও তথ্য ও ঘটনা জানতে পারছেন।

সূত্র জানায়, সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমদ এর সম্পদের অনুসন্ধান করছেন। আমেরিকায় তার বাড়ির সন্ধানও পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি সেখানে প্রচুর সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তার ব্যাপারে তারেক রহমানের কয়েকজন প্রতিনিধি যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। তিনি ছাড়াও সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ এর ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তাদের কাছে খবর রয়েছে জেনারেল মইন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হয়েছেন। সেখানে তার বাড়ির সন্ধানও পেয়েছেন। তবে ওই বাড়ি নিজের নামে না করে ছেলের নামে করেছেন সেটাও জানতে পেরেছেন। ফ্লোরিডার ওই বাড়ির ঠিকানাও তারা সংগ্রহ করেছে। জেনারেল মইনের আতœীয় ও ভাইয়ের ব্যাপারেও তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তবে এব্যাপারে প্রমাণ ও নথি সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন। যদিও মইনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, জেনারেল মইনের নাম ভাঙ্গিয়ে তার পরিবার ও ভাইয়েরা কোন দুর্নীতি করেননি। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের কেউ কেউ জেনারেল মইনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছেন। তাছাড়া জেনারেন মইন কোন দুর্নীতি করেননি।

খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্র জানায়, তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ ওই সময়ের ওয়ান ইলেভেনের নায়কদের অন্যতম একজন ও নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, পরবর্তী কালে পিএসও, এরপর অষ্ট্রেলিয়ার সাবেক হাইকমিশনারের উপর। তার কারণেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মনে করছেন। এই কারণে তার দেশে বিদেশে সম্পদের অনুসন্ধান চলছে। তারেক রহমানের বেশ কয়েকজন অস্ট্রেলিয়াতে তার নামে বেনামে সম্পদের অনুসন্ধান করেন। পাশাপাশি তার দেশে ফিরে আসা এরপর রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, তার নামে বেনামে আরো যেসব ব্যবসা রয়েছে ওই সব ব্যবসার ব্যাপারেও খোঁজ খবর করছেন। ইতোমধ্যে তার মালিকানাধীন ঢাকার পিকাসো রেস্টুরেন্ট ও একটি হোটেলের ব্যাপারেও তথ্য সংগ্রহ করেছে। এছাড়াও তার ব্যাপারটি বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান কঠোরভাবে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। ওই সময়ে তাদের সঙ্গে যারা কাজ করেছেন তাদের কেউ কেউ তথ্য সংগ্রহ করার কাজে সহায়তা করছেন বলেও জানা গেছে।

ওইসময়ের ক্ষমতাশালী আরো দুই জন শীর্ষ কর্মকর্তার ব্যাপারেও তথ্য সন্ধান করছেন। এদের একজন সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। আর একজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এদের একজন স্বপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন আর একজন দুবাইয়ে রয়েছেন। দুবাইয়ের থাকা সাবেক কর্মকর্তার ব্যাপারে তারা অনেক তথ্য পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের কারণেই বিএনপির আজকের পরণতি বলেও মনে করছেন।

সূত্র জানায়, ওয়ান ইলেভেনের উপদেষ্টা পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্যর দুর্নীতির ব্যাপারেও তারা তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এখন নথিপত্র সংগ্রহ করছেন। ওই সময়ে দায়িত্বপালনকারী বিএনপি মনা বিভিন্ন সূত্র তথ্য ও নথি সরবরাহ করছেন। এছাড়াও ওই সময়ে যেই সব কর্মকর্তারা বিএনপি, তারেক রহমান, খালেদা জিয়া, কোকো ও বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন তাদের কয়েকজনের নামও তালিকায় রেখেছেন। পাশাপাশি ৪২০ জনের তালিকা করে এরমধ্যে যাদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সুবিধা নেওয়ার মাধ্যমে অনেককে অভিযোগের আওতায় আনা হয়নি, তালিকা ২২০ এ আনা হয়েছে, ওই সব সুবিধাভোগীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, ওয়ান ইলেভেনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো। অন্যান্য যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা নিজেরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছেন। তবে বিএনপি, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, আরাফাত রহমান কোকোর পরিবার তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একবার ঘোষণা করেছিলেন তিনি ক্ষমতাসীন হতে পারলে তাদের বিচার করবেন না। তবে ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিনকে ক্ষমা করবেন না। কিন্তু এখন তিনি আগের অবস্থানে নেই। তিনি কঠোর অবস্থান নিতে চাননি। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের সময়ে তাদের বিরুদ্ধে যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা এখনও চলমান। পাশাপাশি তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

ওয়ান ইলেভেনের সরকারের পদক্ষেপ তাদের ব্যাপারে এই সরকারও বহাল রেখেছে। এই কারণে তাদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত সব ধরনের চাপ ও মামলার ধারাবাহিকতা রয়েছে। সেই কারণেই তারা যাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে চাইছে। এই জন্য ওই বিশেষ সেল কাজ করছে।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ট বিএনপির একজন নেতা বলেন, ওয়ান ইলেভেনে আওয়ামী লীগ যা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা কাটিয়ে উঠেছে তারা ভাল আছে। এমনকি তাদের প্রায় সকলের নামে দায়ের করা মামলাও সরকার থেকে প্রত্যহারের সুপারিশ দুদকের কাছে পাঠানো হয়। বেশ কিছু মামলা আদালতের মাধ্যমে নিস্পত্তি করা হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলছে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, নতুন করে তার বর্তমান সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, আরাফাত রহমান কোকোর টাকা বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে দুদকের দাবি। পাশাপাশি কোকো মারা যাওয়ার পর তার মা, ভাই, স্ত্রী, কন্যরা মামলায় পক্ষভুক্ত হয়েছেন।
খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, আমাদের ম্যাডাম, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও কোকোর পরিবারে বিরুদ্ধে মামলা চলছে। ম্যাডামের ব্যাংক হিসাব থেকে প্রয়োজনীয় টাকা তোলার জন্য তা পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়নি। মাসে ৫০ হাজার টাকার বেশি তুলতে পারছেন না। এই জন্য বাড়িভাড়াও দিতে পারছেন না। সংসারের খরচও তিনি যথাযথভাবে করতে পারছে না। বাড়ি ভাড়া থেকে যে টাকা পান তাতে তার নিজের, বড় ছেলে, তার পরিবার ও ছোট ছেলের পরিবারের ব্যয় বহণ করতে পারছেন না। সব মিলিয়ে ওয়ান ইলেভেনের রেশ এখনও রয়েছে। তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সরকারের কারণে বিএনপি এখনও ক্ষতিপূরণ দিয়ে যাচেছ। আর আওয়ামী লীগ কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হচেছ না।

এদিকে ওয়ান-ইলেভেনের কুশিলবদের বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ। ১/১১ ষড়যন্ত্র: আমাদের বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় আমি বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের নেতাদের কাছে গিয়েছি। ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য। তখন কেউ আমাকে সহযোগিতা করেনি। তদন্ত করে ওই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের বিচার করা হবে।

তিনি আরো বলেন, আজ দু:খ হয়, আজকের এই ঘৃণ্য দিনটিতেও বড় কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নেই। বিএনপিও এর দায় এড়াতে পারে না। শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ওয়ান-ইলেভেনে যারা জড়িত ছিলেন দলের মধ্যে থাকা ওইসব কুশিলবদের তদন্ত করে চিহ্নিত করতে হবে।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ওয়ান ইলেভেনের সরকারের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ও ওই সরকারের যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন,জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদের মালিক হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দুদক আগামী দিনের ব্যবস্থা নিবে। বিএনপি ক্ষমতাসীন হলে এই ব্যাপারে কমিশনও গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে ।



মন্তব্য চালু নেই