জাতীয় নির্বাচনের প্রতীক স্থানীয়তে নয়

এখন থেকে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের জন্য আলাদা প্রতীক ব্যবহার করতে হবে। একই প্রতীক একাধিক নির্বাচনে ব্যবহা করা যাবে না। ফলে জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পৃথক প্রতীক বরাদ্দ থাকবে।

এ জন্য প্রতিটি নির্বাচনের জন্য ‘নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা’ সংশোধন করে ২১৩টি প্রতীক চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান ১৪০টি প্রতীকের তালিকায় নতুন করে আরো ৭৩টি প্রতীক যুক্ত করা হয়েছে।

এখন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৬৫টি, উপজেলা পরিষদে ৪৬টি, সিটি করপোরেশনে ৩৪টি, পৌরসভায় ৩৪টি এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য ৩৪টি প্রতীক সংরক্ষণে থাকবে।

প্রতীক সংরক্ষণের জন্য সংশোধিত বিধিমালা সম্মতির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্মতি এলেই গেজেট প্রকাশ করবে ইসি।

ইতোমধ্যে সংসদ নির্বাচনের ৬৫টি প্রতীক চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করেছে ইসি। সংসদের প্রতীক সংক্রান্ত সংশোধনী ভেটিংয়ের (সম্মতি) জন্য আগেই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। ভেটিংয়ের পর আইন মন্ত্রণায়ল এসআরও জারি করলে গত ৮ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে ইসি।

এর আগে ইসির সংরক্ষিত ১৪০টি প্রতীকের মধ্যে টেবিল, চেয়ার, ছাতা, আনারস, টেলিভিশনসহ অন্তত এক ডজনেরও বেশি প্রতীক বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহার করা হতো। এতে ভোটারদের মধ্যেও এক ধরনের বিভ্রান্ত সৃষ্টি হয়। এ কারণে ইসি আলাদা প্রতীকের কথা চিন্তা করে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, নতুন যুক্ত হওয়া প্রতীকগুলোর মধ্যে সার্কভুক্ত দেশ ভারত, নেপালসহ কিছু দেশের ব্যবহৃত প্রতীকও রয়েছে।

জানা গেছে, সিটি করপোরেশনে মেয়র পদের জন্য ১২টি, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের জন্য ১০টি এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য ১২টি প্রতীক চূড়ান্ত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য ১৪টি, ভাইস চেয়ারম্যান ১২টি, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য ১০টি এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০টি প্রতীক চুড়ান্ত করা হয়েছে। পৌরসভার মেয়র পদের জন্য ১২টি, সংরক্ষিত সদস্য পদে ১০ এবং সাধারণ সদস্য পদের জন্য ১২ প্রতীক চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের জন্য ১২টি, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদের জন্য ১০টি এবং সাধারণ সদস্য পদের জন্য থাকছে ১২টি প্রতীক।

প্রতীক নির্ধারণ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনে বিশেষ প্রতীক ব্যবহার করা হবে। এজন্য প্রচলিত প্রতীকগুলো থেকে আলাদা আলাদা তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এর ফলে এক নির্বাচনের প্রতীক অন্য নির্বাচনে ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ হবে। প্রতিটি নির্বাচনের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করে তা ভেটিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’

সচিব এর আগে বলেছিলেন, বর্তমানে ১৪০টি প্রতীক রয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি প্রতীক রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাকিগুলো সংসদ নির্বাচনসহ ও স্থানীয় নির্বাচনে বরাদ্দ দেয়া হয়।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারক বলেন, ‘এখনও অনেক প্রতীক রয়েছে সেগুলো কয়েকটি নির্বাচনে বারবার ব্যবহার হচ্ছে। মানুষ যেন প্রতীক দেখেই বলতে পারে এটা কোন নির্বাচন হচ্ছে। এ কারণেই প্রতিটি নির্বাচনের জন্য আলাদা আলাদা প্রতীক রাখতে চায় ইসি।’

সংসদ নির্বাচনের প্রতীক: আপেল, আম, উদীয়মান সূর্য, একতারা, কবুতর, কলার ছড়ি, কাঁঠাল, কাস্তে, কুমির, কড়াল, কুলা, কুঁড়ে ঘর, কোদাল, খাট, খেজুর গাছ, গরুর গাড়ি, গাভি, গামছা, গোলাপ ফুল, ঘন্টা, চাকা, চাবি, চেয়ার, ছড়ি, ছাতা, ট্রাক, টেলিভিশন, ডাব, তবল, তারা, তরমুজ, দাঁড়িপাল্লা, দাবাবোর্ড, দালান, দেওয়াল ঘড়ি, ধানের শীষ, নোঙ্গর, নৌকা, ফুলকপি, ফুলের মালা, বাঘ, বটগাছ, বাই-সাইকেল, বাঁশি, বেঞ্চ, বেলুন, মই, মোটরগাড়ি (কার), মশাল, মাছ, মাথাল, মিনার, মোমবাতি, রকেট, রিকশা, লাঙ্গল, শঙ্খ, সিংহ, স্যুটকেস, হাত (পাঞ্জা), হাতঘড়ি, হাতপাখা, হাতুড়ি, হারিকেন ও হুক্কা জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে।

উপজেলার নির্বাচনের প্রতীক: চেয়ারম্যান পদের জন্য আনারস, কাপ-পিরিচ, ঘোড়া, চিংড়ি মাছ, জোড়া ফুল, টেলিফোন, দোয়াত কলম, ফেজ টুপী, ব্যাটারি, মুকুট, মটর সাইকেল, হেলিকপ্টার, হাঙ্গর ও জোড়া নারিকেল প্রতীক নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে আইসক্রিম, উড়োজাহাজ, গ্যাস সিলিন্ডার, চশমা, টাইপরাইটার, টিউবওয়েল, টিয়া পাখি, তালা, পালকি, বই, বৈদ্যুতিক বাল্ব ও মাইক। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কলস, ক্যামেরা, তীর ধনুক, পদ্মফুল, প্রজাপতি, ফুটবল. ফুলের টব, বৈদ্যুতিক পাখা, সেলাই মেশিন ও হাঁস। মহিলা সদস্য পদে খরগোস, গীটার, চাঁদ, টেবিল, ঢেঁকি, পেঁপে, বক, বালতি, মোরগ ও হরিণ ব্যবহার করা হবে।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন: মেয়র পদে কমলা লেবু, ক্রিকেট ব্যাট, চরকা, টেবিল ঘড়ি, টেলিস্কোপ, ডিস এন্টেনা, দিয়াশলাই, ফ্লাস্ক, বাস, ময়ূর, হাতী ও ইলিশ মাছ। সাধারণ কাউন্সিল পদে কাঁটা চামচ, মিষ্টি কুমড়া, এয়ারকন্ডিশনার, করাত, ঘুড়ি, টিফিন ক্যারিয়ার, ট্রাক্টর, ঠেলাগাড়ি, ঝুড়ি, ব্যাডমিন্টন র্যাটেক, রেডিও, লাটিম। সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে কেটলী, গ্লাস, পান পাতা, পিঞ্জর, টিস্যু বক্স, বৈয়ম, মুলা, মোড়া, শীল পাটা ও স্টিল আলমারি।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন: চেয়ারম্যান পদে অটোরিকশা, কোট, খড়ের গাদা, টেবিল ফ্যান, ঢোল, তাবু, তালগাছ, দুটি পাতা, পাগড়ি, ফ্রিজ, রজনীগন্ধা, সাহেবী টুপি (হ্যাট)। সাধারণ আসনে খাম, সাঁকো, টর্চ লাইট, তাল, পানির পাম্প, পাহাড়, বসার টুল, ভ্যান গাড়ী, মরিচ, যাঁতা, রেললাইন ও লিচু। সংরক্ষিত আসনে কড়াই, গলার হার, চিরুণী, জবা ফুল, নুপুর, পাউরুটি, পেন্সিল কাটার, বিড়াল, বেগুন ও স্কুল ব্যাগ ব্যবহার করা হবে।

পৌরসভা নির্বাচন: মেয়র পদে ইস্ত্রি, কম্পিউটার, ক্যারাম বোর্ড, চামচ, জগ, টাই, নারিকেল গাছ, বড়শী, মোবাইল ফোন, রেল ইঞ্জিন, হ্যাঙ্গার, হেলমেট। সাধারণ কাউন্সির পদে উটপাখি, গাজর, টিউবলাইট, টেবিল লাইট, ডালিম, ঢেঁড়শ, পাঞ্জাবি, পানির বোতল, ফাইল কেবিনেট, ব্রিজ, ব্ল্যাক বোর্ড ও স্ক্রু ডাইভার। সংরক্ষিত কাউন্সিল পদে আঙ্গুর, কাঁচি, গ্যাসের চুলা, চকলেট, চুড়ি, পুতুল, ফ্রক, ভ্যানিটি ব্যাগ, মৌমাছি ও হারমোনিয়াম ব্যবহার করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই