জবি ছাত্রী লাঞ্ছিত: ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ উপাচার্যের
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে দুইঘন্টা আটকে রেখে ‘মিথ্যা’ লিখিত অভিযোগ আদায়ের অভিযোগ ওঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সপ্তম তলায় কন্ট্রোলারের কার্যালয়ে গত সোমবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ, জবি ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফুল ইসলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে অস্ত্র ঠেকিয়ে বহিষ্কৃত ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলার আসামি সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্ব দেন। ওই ছাত্রীর কাছ থেকে শরীফুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলামের প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশীদের কর্মীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ আদায় করা হয়েছিল।
এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগা ওই ছাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বলেছেন, কন্ট্রোলারের দপ্তরে যা হয়েছে তা ঠিক হয়নি। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ছাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং লাঞ্ছিতের ঘটনার মীমাংসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া যেটা লিখিত নেয়া হয়েছে সেটি অকার্যকর করা হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বসেছিলেন। এ সময় বহিরাগত এআইইউবির শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত ও জবির ছাত্রলীগকর্মী সজীব ছাত্রীকে লাঞ্চিত করেছিল।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দর্শন বিভাগের মিন্টু সরকার মেয়েকে বাঁচাতে এসে তাদের মারধরের শিকার হন। পরে বহিরাগত ইয়াসির আরাফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারধরের শিকার হন। এ ঘটনায় সজীব কোতয়ালী থানায় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। তবে ওই ছাত্রী ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফুল ইসলাম ও বহিরাগত ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেলে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মামলা নেওয়া যাবে না বলে জানান।
গত সোমবার রাতে এব্যাপারে আবুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফরোয়ার্ড করায় সজীবের মামলা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ছাত্রীর মামলাটি প্রক্টর ফরোয়ার্ড না করায় নেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর নূর মোহাম্মদ সোমবার রাতে এব্যাপারে বলেন, মামলা করতে হলে আমার অনুমতি লাগবে। মেয়ে আমার মাধ্যম দিয়ে মামলা করেনি তাই থানা মামলা নেয়নি।
এদিকে এ ঘটনায় সোমবার বিকালে দর্শন বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নির্দেশে ওই ছাত্রীকে কন্ট্রোলারের কাযালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি কন্ট্রোলার কার্যালয়ে গিয়ে প্রক্টরের সাথে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দেখেন। এসময় প্রায় দুই ঘন্টা ওই রুমে এ ছাত্রীকে জেরা করেন তারা। এক পর্যায়ে চাপ প্রয়োগ করে ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশীদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ আদায় করেন তারা।
এব্যাপারে প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বলেন, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় মেয়েটি লাঞ্ছিত হয়েছিল। তাই এ ঘটনার বিস্তারিত জানতে মেয়ের সাথে আমাদের কথা হয়েছে।
আগে থেকেই ছাত্রলীগ নেতাদের উপস্থিত করে মেয়েটিকে কন্ট্রোলার রুমে জিম্মি করা হয়েছিল জানালে তিনি বলেন, মেয়েটি আগেই কন্ট্রোলারের সাথে কথা বলতে তার রুমে গিয়েছিল। আমরা তাকে ডাকিনি। তবে বক্তব্যটি মিথ্যে দাবি করে কন্ট্রোলার আক্তারুজ্জামান সোমবার রাতে বলেন, প্রক্টর মেয়েটিকে ডেকে এনেছিলেন।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রশাসনিক ভবনে প্রক্টরের কাযালয়ে না নিয়ে কন্ট্রোলার রুমে কেন ডাকা হল- এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি জবি প্রক্টর। ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে মেয়েটির কাছ থেকে লিখিত নেয়া হয়েছে জানালে তিনি বলেন, কারো কথা একটু জোরে হয়, কারো বাচনভঙ্গি ভিন্ন হতে পারে। সেটা কারো কাছে অন্যরকম মনে হতে পারে। কিন্তু তাকে কোন চাপ দেওয়া হয়নি। তিনি নিজেই বক্তব্য দিয়েছেন। এদিকে গত বৃহস্পতিবারের ঘটনায় চারজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে মেয়েটি লাঞ্ছিত হওয়ার পরও বিচার পায়নি জানালে তিনি বলেন, লাঞ্ছিত হয়েছে এ আর কি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিব। বহিরাগত শিক্ষার্থী মারধরে শিকার হওয়ায় ৪ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হলেও প্রক্টরের বৈঠকে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম কিভাবে উপস্থিত ছিলেন জানালে তিনি বলেন, এটা ভিন্ন বিষয়, বলা যাবে না।
এদিকে ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফুল ইসলাম ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কর্মীর হাতে চড় খাওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছিল কিন্তু গণমাধ্যমে ছাত্রীটির লাঞ্চিতের ঘটনা প্রকাশিত হলেও ব্যবস্থা না নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, যে চড় খেয়ে জরিমানা আদায় করেছে তাতে তার আরো সম্মানহানি হয়েছে।
এদিকে কন্ট্রলারের কার্যালয়ে ওই ছাত্রীকে আটকে রেখে স্টেটমেন্ট লেখার পরে তিনি বরে হয়ে আসেন। পরে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে চাই না। আমার এই ব্যাপারটি নিয়ে আপনারা আর আমাকে প্রশ্ন করবেনা। যা হবার হয়েছে, এখন সব সমাধান হয়ে যাক। আমার ন্যায় বিচার পাওয়া লাগবে না। আর কোন ঝামেলা চাই না। স্টেটমেন্ট লেখার বিষয় স্বীকার করে তিনি বলেন, আমাকে ডেকে নিয়ে প্রশ্ন করেছিল, আমার উত্তর গুলি লেখা হয়েছিল এবং সেই স্টেটমেন্টে আমি সাক্ষর করে বের হয়ে আসি। তিনি আরও বলেন, আমার বক্তব্য এটাই যে আমি একজন ছাত্রী, বড় কথা হলো আমি একজন মেয়ে। আমার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই মেনে নেবো। তবে আমি চাই মিউচুয়াল হয়ে যাক।
ওই ছাত্রীর দর্শন বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, লাঞ্ছিত হওয়ার পর বিচার না পেয়ে উল্টো হয়রানির শিকার হয়ে সে নিরাপত্তাহীনতা ভুগছে।
মন্তব্য চালু নেই