‘যৌন সন্ত্রাসের পক্ষে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অবস্থান’

জবিতে শিক্ষিকার লাঞ্ছণাকারীকে বাঁচালো ছাত্রলীগের অপরাধীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষিকাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছণাকারী ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আরজ মিয়াকে বাঁচাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়েছে ছাত্রলীগের চিহ্নিত অপরাধীরা। পাশাপাশি তারা পুলিশের হাত থেকে আরজ মিয়াকে ছিনিয়েও এনেছে।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সজীব বলেন, এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের স্বত:স্ফুর্ত প্রতিবাদে ছাত্রলীগ নেতারা বাধা দেয়ার মধ্য দিয়ে যৌন সন্ত্রাসের পক্ষে তাদের সাংগঠনিক অবস্থান ব্যক্ত করল।

রবিবার বেলা দেড়টার দিকে আরজ মিয়া ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে ঐ শিক্ষিকাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছিলেন। এ ঘটনায় আরজ মিয়ার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নিযাতন দমন আইনে বিকালে মামলা দায়ের করেছেন তিনি। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আরজ মিয়া তাকে ধাক্কা দেয়, জামা ধরে টান দেয় এবং চড় মারে।

এ ব্যাপারে রবিবার দুপুরে কোতোয়ালি থানার অপারেশন কর্মকর্তা মো. রফিক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি আরজ মিয়াকে কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পরে পুলিশের কাছ থেকে জগন্নাথ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি দল আরজ মিয়াকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে জানান মো. রফিক।

এ ঘটনার প্রতিবাদে বেলা দুইটার দিকে আরজ মিয়ার বিচারের দাবিতে পুরো ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ‘যৌন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে উপাচার্য ভবন ঘেরাও করলে সেখানেও ছাত্রলীগ নেতারা হামলা করে তাদের ব্যানার কেড়ে নেয়। পাশাপাশি তাদের ভয় দেখিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়।

এতে নেতৃত্ব দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম শিশির, সহ-সভাপতি হিমেলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জিয়াউর রহমান মিশু। যাদের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

এর মধ্যে ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আলমকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ৫ লাখ টাকার টেন্ডার ছিনতাই করেছিলেন জগন্নাথ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম শিশিরসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অশোক কুমার সাহা ১৫ মার্চ রাতে কোতয়ালী থানায় শিক্ষককে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হত্যার হুমকির অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সিরাজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও ১৮ মার্চ তাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিরাজকে এ ঘটনায় বহিষ্কার করলেও কাযত ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের প্রভাব খাটিয়ে এবার শিক্ষিকা লাঞ্ছনাকারীকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিলেন সিরাজ।

এর আগে ২০১৩ সালের ১৮ এপ্রিল এক ছাত্রলীগ কর্মীকে পুনঃভর্তির সুযোগ না দেওয়ায় তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আশরাফুল আলম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নূর মুহাম্মদ ও উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক আল-আমিনকে লাঞ্ছিত করে পরিসংখ্যান বিভfগে ভাংচুর করেছিল ছাত্রলীগ কর্মীরা।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ জগন্নাথ ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছিল।

এছাড়া চলতি বছর বর্ষবরণ উৎসব থেকে ফেরার পথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরণ বাসে নাজমুলসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী ছাত্রীদের উত্যক্ত করছিলেন। বাসটি চানখারপুলে আসলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নাজমুলকে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে গণধোলাই দেয়। এ ঘটনার ছবি তুলায় ছাত্রলীগ কর্মী নাজমুল, আলাউদ্দীন ও চঞ্চল বাংলা ট্রিবিউনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রুহানকে লাঞ্ছিত করেছিল।

শিক্ষিকা লাঞ্ছণাকারীকে বাঁচাতে শিক্ষা্র্থীদের হুমকি দেওয়া সিরাজুল ইসলাম, জগন্নাথ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিমেলুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম শিশির ২০১৪ সালের জুলাইয়ে পুরান ঢাকার আল বারাকা পাবলিকেশন্সে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সিসি ক্যামেরা ধরা পড়েছিলেন।

এছাড়া মফিজুল ইসলাম শিশিরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালের ১৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ১১ জনকে আটক করা হয়েছিল। এ জালিয়াতি চক্রের ডেপুটি চিফ আলমগীরকে প্রকাশ্যে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন শিশির। এ সময় টাকার বিনিময়ে জালিয়াত চক্রের সঙ্গে তার জড়িত থাকার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

এছাড়াও বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিতর্কিত ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির সভাপতি শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে টয়লেট দখল করে দোকান বসানো এবং মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জিয়াউর রহমান মিশুর বিরুদ্ধে নিজেকে সহ-সভাপতি দাবি করে পুরান ঢাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরজ মিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনা তদন্তে শিক্ষক সমিতির সভাপতি আলী নূরকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই