জনশক্তি রফতানি বাড়লেও রেমিটেন্সে উল্টো গতি
এছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে মাত্র ৯৩ কোটি ৬২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত পাঁচ বছরে কোনো একক মাসের প্রবাসী আয় হিসাবে সবচেয়ে কম। ২০১১ সালের নভেম্বরের পর এত কম রেমিটেন্স আসেনি এখনো।
জানুয়ারি মাসে রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল একশত কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এ হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ফেব্রুয়ারিতে কমেছে ৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ হচ্ছে ৫৮৫ কোটি ৬০ লাখ।
গত কয়েক মাস ধরেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স কমে আসছে। অপরদিকে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বিদেশে জনশক্তি রফতানি বাড়ছেই। কিন্তু এর প্রভাব পড়ছে না প্রবাসী আয়ে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আশঙ্কা করা হচ্ছে এতে, টাকার বিনিময়ে ডলার আরো শক্তিশালী হবে।
সূত্র জানিয়েছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০১৫ সালের চেয়ে ২০১৬ সালে ৩৬.৩১ শতাংশ বেশি মানুষ কাজের জন্য বিদেশে গিয়েছেন। সর্বশেষ মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে ২০১৬ বিদেশে গিয়েছে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন। এর আগের বছর অর্থ্যাৎ ২০১৫ সালে গিয়েছিল ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন।
বিষয়টি স্বীকার করে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী মুহিত পর্যন্ত বলেছেন, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রবাসী নিয়োগ হলেও প্রবাসী আয়ে গতি আসেনি।
গত কয়েক মাস ধরেই প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ১০০ কোটি ডলারের কম রেমিটেন্স এলেও জানুয়ারি মাসে তা কিছুটা বেড়ে ১০০ কোটি ডলারের বেশি হয়। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে তা ফের কমে ৯৩ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে এসেছে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছে ১১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছে ১১৮ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় এবার এই মাসে রেমিটেন্স কমেছে ১৭ দশমিক ৬০ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে সর্বনিম্ন ৯০ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। এর পর টানা ৪ বছর রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ার পর ২০১৬ সালের শুরুতে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানো কমতে শুরু করে।
২০১৬ সালে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার, ২০১৫ সালে যা ছিল ১ হাজার ৫৩২ কোটি ডলার। সে হিসাবে ২০১৬ সালে বছরে প্রবাসী আয় আগের বছরের চেয়ে ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ কমেছিল।
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থ-বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই- ফেব্রুয়ারি) ৮১১ কোটি ২৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে, যা গত অর্থ-বছরে একই সময়ের তুলনায় ১৬৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার কম। শতাংশ হিসাবে তা ১৭ শতাংশ কম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে ২০১৪-১৫ অর্থ-বছরে। সে সময়ে দেড় হাজার কোটি ডলারেরও বেশি রেমিটেন্স এসেছে দেশে।
এভাবে চলতে থাকলে চলতি বছরেও রেমিটেন্স আরো কমার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। রেমিটেন্স কেন কমছে তা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুটি প্রতিনিধি দল সৌদিআরবসহ মধ্যপ্রাচ্যর কয়েকটি দেশ, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় সরেজমিনে তদন্তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই