জঙ্গি হামলার পরও মুখ ফিরিয়ে নেয়নি বিদেশিরা

বিদেশি নাগরিকদের ওপর একের পর এক জঙ্গি হামলা হলেও বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি তারা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে আসছেন। করছেন তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম।

বিদেশি নাগরিকদের ক্যাটাগরি অনুযায়ী, ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে সরকার। তবে যারা সরকারি প্রয়োজন ছাড়া আসছেন তাদের নিরাপত্তায় এখনো পূর্ণাঙ্গ নিশ্চয়তা দিতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় এক হাজার বিদেশি বাংলাদেশে আসেন তাদের মধ্যে চীনা নাগরিক শতকরা ২৫ ভাগ। বাকিদের মধ্যেও পর্যটকের সংখ্যা কম। যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কনসালটেন্ট হিসেবে আসেন তারা এককভাবে চলাফেরা করেন।’

মোজাম্মেলে হক বলেন, ‘অনেস্টলি যদি বলি তাহলে বলতে হয় একক কাউকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। এককভাবে যারা চলেন তাদের পাহারা দেওয়া কঠিন। একজনের পেছনে একজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য দেওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব।’

স্বরাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ‘জঙ্গিবাদবিরোধী গণসচেতনতা তৈরি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কোথাও অচেনা মানুষ দেখলেই তাকে সামাজিকভাবে যাচাই করতে হবে।’

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছে। তবে কেউ ব্যক্তিগত অস্ত্র ব্যবহার বা নিজস্ব নিরাপত্তার আবেদন করেনি।

মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা গেছে, যে সব দেশের বেশি লোক এ দেশে থাকে তারাই বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছে। সব দেশ চায়নি।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, কূটনীতিকরাতো আছেনই, বিদেশিরা যারা এ দেশে কাজ করেন, তারা যেন নিরিবিলি কাজ করতে পারেন। এমনকি যে সব ভিজিটর দল বেধে আসেন তাদের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগ আছে। আবার বাড়তি ব্যবস্থাও আছে।

তিনি বলেন, ‘কূটনীতিকরা প্রায়ই নিজেরা মিটিং করেন। তখন এক দেশের দেখাদেখি অন্য দেশও তাদের ন্যূনতম নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সরকারের কাছে নিরাপত্তা চায়।’

সূত্র জানায়, জাপান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের কূটনীতিক এবং নাগরিকদের জন্য জোর দিয়ে নিরাপত্তা চেয়েছে। দূতাবাস ও কূটনীতিকদের বাসস্থান নিরাপত্তায় বাড়তি কর্মী মোতায়েনের আবেদন করেছে। সম্প্রতি ইরানও তার দেশের নাগরিকদের জন্য একই রকম আবেদন করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, যেখানে গুচ্ছভাবে অনেকজন বিদেশি কাজ করেন তাদের জন্য এরই মধ্যে নিরাপত্তার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পদ্মাসেতু, মাওয়া সেতু, কাঁচপুর ব্রিজের মেরামত কাজ, মেঘনা-গোমতি সেতু এলাকা, কেপিআই, রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট, মাতারবাড়ি পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকায় কাজ করা অসংখ্য বিদেশির জন্য বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। যে সব জায়গায় পুলিশের ঘাটতি ছিল সে সব জায়গায় বিশেষ প্রশিক্ষিত আর্মড পুলিশ সদস্যদের আধুনিক অস্ত্র দিয়ে মোতায়েন করা হয়েছে।

বিদেশির ওপর যে জঙ্গি হামলা হয়েছে তার বেশির ভাগ হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্ট বা তাদের কর্মস্থলে যাওয়ার পথে। সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা?-এমন প্রশ্নের জবাবে গুলশান জোনের পুলিশের ডিসি মোস্তাক আহমেদ খান পরিবর্তনকে বলেন, ‘কূটনীতিক ও বিদেশিদের নিরাপত্তায় গুলশান এলাকায় পুলিশ র‌্যাবের মোটরসাইকেল ও অন্য টহলসহ চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। বিদেশিরা যে সব হোটেল রেস্টুরেন্টে যান সে সব জায়গায় মতবিনিময় করে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ এ ছাড়া বিদেশিদের নিরাপত্তায় নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে বলে জানান মোস্তাক আহমদ।-পরিবর্তন



মন্তব্য চালু নেই