জঙ্গি আস্তানায় অতিথি হলেন দুই সংসদ সদস্য

জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত এবং রামুর বৌদ্ধ বিহারে হামলার অন্যতম সন্দেহভাজন আসামি সালাউল ইসলামের মাদ্রাসায় অতিথি হয়ে গেলেন দুজন সংসদ সদস্যসহ শীর্ষ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

কক্সবাজারের ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টারে মঙ্গলবার আয়োজিত বিজয় দিবস অনুষ্ঠানে উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতারা জঙ্গি সালাউল ইসলাম সম্পীর্কিত গোয়ন্দা সংস্থার প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি বৈধতা দিলেন তার সমস্ত কর্মকাণ্ডের।

সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, হাফেজ সালাউল ইসলাম মূলত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন আরএসওর সামরিক বিভাগের প্রধান। কক্সবাজারের শহরের লিংক রোডের সরকারি কলেজের পেছনে গড়ে ওঠা ইমাম মুসলিম (রা.) ইসলামিক সেন্টার নামের মাদ্রাসাটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেই ব্যবহার হয়ে আসছে।

জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারও হয়েছিলেন এ সালাউল। এমনকি রামু বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার শহরে জামায়াতের তাণ্ডবের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু সে সালাউলের মাদ্রাসায় আয়োজিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে গেলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আহমদ হোসেনের সভাপতিত্বে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ইমাম মুসলিম (রা.) ইসলামিক সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিজয় দিবসের আলোচনা নামের একটি অনুষ্ঠান। আর এ অনুষ্ঠানে সরকার দলীয় দুজন এমপি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ অনেক নেতা।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাতকানিয়া লোহাগাড়ার আসনের সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী বললেন, ‘হাফেজ সালাউল ইসলামকে মেধাবী এবং ছাত্র জীবন থেকে তার পরিচিতি। তার সম্পর্কে তিনি যতটুকু জানেন সালাউল জঙ্গি নন।’

গোয়েন্দা সংস্থার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এটি জঙ্গি আস্তানা হলে, সালাউল জঙ্গি হলে এর তদন্ত এতদিন লাগবে কেন?’ অনুষ্ঠানে ওই মাদ্রাসায় ভবন তৈরির জন্য তিনি অনুদানের ঘোষণাও দেন।

জেলা আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আবছার চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, সালাউল জঙ্গি নন। সালাউলকে প্রকাশ্যে এটি মোকাবেল করার পরামর্শও দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘একটি মহল নিজের অপকর্ম আড়াল করলে সালাউলকে জঙ্গি বলে প্রচার চালাচ্ছে।’

তবে ভিন্ন কথা বলেছেন কক্সবাজার ২ আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক। তিনি জানান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আহমদ হোসেনের অনুরোধে তিনি ওখানে গিয়েছেন। তিনি জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি নিয়ে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত করার দাবি তোলেন। একই সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট পেলে প্রতিষ্ঠানটি বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তিনি।

তবে জঙ্গি তৎপরতার কথা অস্বীকার করে হাফেজ সালাউল ইসলাম জানান, তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ হয়রানী করেছে ব্যাপক। কিন্তু কোথাও তার প্রমাণ মেলেনি। তিনি সাংবাদিকদের সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার আহ্বানও জানান।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমদ হোসেন বলেন, শীর্ষ আলেমদের একজন সালাউল। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।

অনুষ্ঠান শেষে সাতকানিয়া লোহাগাড়ার আসনের সংসদ সদস্য নেজাম উদ্দিন নদভীকে হাফেজ সালাউল ইসলাম গোয়েন্দা তথ্য মতে রোহিঙ্গা জঙ্গি, রামু বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার শহরে জামায়াতে হামলার জন্য শনাক্ত করার বিষয়টি জানালে তিনিও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আহমদ হোসেনের অনুরোধে ওখানে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেন।

গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, হাফেজ সালা উল ইসলাম ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে মিয়ানমার বিদ্রোহী জঙ্গি আরএসও- এর সঙ্গে জড়িয়ে যান। হাফেজ সালা উল ইসলাম আরএসও- এর সামরিক বিভাগের সম্বনয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেস। তিনি কৌশলে বাংলাদেশে ভোটার হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন। কক্সবাজার সদরের ঝিলংজার মহুরি পাড়ার ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টার নামে এ মাদ্রাসার পরিচালক তিনি। আর মাদ্রাসাটি তৈরি হয়েছে সরকারি পাহাড় কেটে।

অনুষ্ঠানে জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি জহিরুল ইসলামও বক্তব্য রাখেন। তবে এমপি সাইমমু সরওয়ার কমল, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান অতিথি হলেও তারা ওখানে যাননি।



মন্তব্য চালু নেই