‘জঙ্গি আস্তানা’র পরিবারটির সঙ্গে কারো কথা হতো না
পনেরো দিনের ব্যবধানে ঝিনাইদহে আবারও ‘জঙ্গি আস্তানা’র সন্ধান মিলল। এর আগে গত ২১ এপ্রিল সদর উপজেলার একটি গ্রামে ‘জঙ্গি আস্তানা’য় অভিযান চালিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আজ রোববার ভোরে মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর গ্রামের হঠাৎপাড়ায় একটি ‘জঙ্গি আস্তানা’ এবং সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের আরেকটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
সকালে মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর গ্রামে অভিযান শুরু হলে সেখানে দুই ‘জঙ্গি’ নিহত হন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই সদস্য আহত হয়েছেন বলে রোববার সকালে জানিয়েছেন মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদুল কবীর।
ঝিনাইদহ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানিয়েছেন, নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযানকালে বজরাপুর গ্রামের হঠাৎপাড়ার বাড়ির মালিক জহিরুল ইসলামসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।
বজরাপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন ও গৃহিণী ফাতেমা বেগম সকাল ১০টায় জানান, জহিরুল ইসলাম গ্রামেরই নুরু বাঁশিওয়ালার ছেলে। তাঁর বাবা যাত্রাদলে বাঁশি বাজাতেন।
জহিরুল ফুসকার ব্যবসা করতেন। বাড়িতেই ফুসকা বানাতেন। বছর তিনেক আগে জহিরুল বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই পাল্টাতে থাকেন তিনি। তাঁর স্ত্রী বাড়ির বাইরে বেরোতেন না। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রতিবেশী বা গ্রামের লোকজনের সঙ্গে তাঁদের তেমন কোনো যোগাযোগ হতো না। লোকজন তাঁদের বাড়িও যেত না।
তবে ‘জঙ্গি আস্তানা’য় নিহতরা কারা, পরিবারের সদস্য কি না কিংবা বাইরে লোক হলে কীভাবে তারা সেখানে এলো—এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা গ্রামের লোকজন কিছুই জানেন না।
গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন ও গৃহিণী ফাতেমা বেগম দাবি করেন, জহিরুল আহলে হাদিসের অনুসারী। তাঁদের নামাজের কায়দা ভিন্ন। এটা গ্রামের লোকজন জানত। তবে গ্রামের লোকজন তাঁদের ভালো বলেই জানত। কারো সঙ্গে কোনো ঝগড়াঝাঁটি ছিল না।
এদিকে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং অভিযানের সুবিধার্থে বজরাপুর গ্রামের ‘জঙ্গি আস্তানা’র আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেখানে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে রয়েছেন। গ্রামটি ঘিরে প্রচুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, সকালে অভিযান শুরুর পর সেখানে তাঁরা প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শুনেছেন। এর পর আর কোনো শব্দ তাঁরা পাননি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ আরো জানিয়েছেন, সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে আরো একজনকে আটক করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার গভীর রাত থেকে ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে বজরাপুর গ্রামের ওই বাড়ি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ জানায়, আজ ভোর থেকে বাড়িটিতে অভিযান শুরু করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় আত্মঘাতী এক জঙ্গিসহ দুজন নিহত হন।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনিপাড়ার ‘জঙ্গি’ আবদুল্লাহ ওরফে প্রভাতের বাড়ি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরদিন সেখানে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ধরা পড়েনি কোনো জঙ্গিও।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই বাড়ি থেকে ২০ ড্রাম রাসায়নিক দ্রব্য, বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রিক ডিভাইস, একটি বিদেশি পিস্তল, সাতটি গুলি, একটি মোটরসাইকেল ও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে।
মন্তব্য চালু নেই