জঙ্গিদের অর্থায়ন করছে কারা?
সম্প্রতি নব্য জেএমবির বিভিন্ন আস্তানায় অভিযান শেষে মিলছে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, শক্তিশালী বোমা, বোমা তৈরির উপকরণ ও ছোট-বড় আগ্নেয়াস্ত্র। ঘর ভাড়া করে দেয়া হচ্ছে জঙ্গিদের আত্মঘাতী হওয়ার প্রশিক্ষণ। জঙ্গিদের এসব কার্যক্রম চালাতে প্রয়োজন বিপুল অংকের অর্থের। একের পর এক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর তাই প্রশ্ন উঠেছে কারা এদের অর্থ দিচ্ছে?
সূত্রমতে, জঙ্গিদের এই কর্মকাণ্ডে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন তা নাকি আসছে দেশি-বিদেশি ‘দাতাদের’ কাছ থেকে। পাশাপাশি তারা তহবিল গঠনে ছিনতাই, ব্যাংক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি, স্বর্ণ চোরাচালানসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। তবে এতো বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, বোমা ও বিস্ফোরক দ্রব্য জব্দের পর বিস্ময়ের ঘোর কেটে সবার প্রশ্ন একটাই- জঙ্গিদের অর্থের উৎস কোথায়?
আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের পর সীতাকুন্ডের জঙ্গি আস্তানা ছায়ানীড় থেকে জব্দ করা হয় পাঁচ ড্রাম উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এবং এক ড্রাম অ্যাসিড। জব্দ করা প্রতি ড্রাম বিস্ফোরকের দাম কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত। শুধু কি তাই? এ আস্তানা থেকে আরো জব্দ করা হয়, ৩-৫ কেজি ওজনের ৩৯টি শক্তিশালী বোমাও।
এছাড়া গত দুই বছরে শুধু চট্টগ্রাম থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে এমকে-১১, একে-৪৭, একে-২২ এর মতো শতাধিক মারণাস্ত্র ও গ্রেনেড। বোমা তৈরির বিস্ফোরক জব্দ হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টন। এসব অস্ত্র ও বিস্ফোরকের দাম অন্তত ৬০ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জঙ্গিদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে অর্থ। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত অর্থায়ন বন্ধ করা গেলে জঙ্গি তৎপরতা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়বে। কিন্তু জঙ্গি অর্থায়ন ঠেকাতে আগে সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা প্রয়োজন এই অর্থায়নে জড়িত কারা। যদিও সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রী বিভিন্ন সময় বলছেন, জঙ্গি অর্থায়নে রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই জড়িত। তবে সেই অর্থায়নকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এখনও আনা হয়নি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও, মানি এক্সচেঞ্জার এবং রাজনৈতিক ব্যক্তি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জঙ্গিদের অর্থায়নের জড়িত। আবার বিদেশ থেকে বিভিন্ন উপায়ে জঙ্গিদের কাছে অর্থ আসছে। বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ লেনদেনে কড়াকড়ি থাকায় অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমেই টাকা আসছে জঙ্গিদের হাতে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. সিকান্দার খান বলেন, দেশীয় অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরাই জঙ্গিদের হাতে অস্ত্র-বিস্ফোরক পৌঁছে দিচ্ছে। বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে সেই অর্থ পরিশোধ হচ্ছে। আর এ দেশের এজেন্টরা টাকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জঙ্গিদের কাছে মালামাল সরবরাহ করছে। এ জন্য জঙ্গিদের অর্থায়ন বন্ধে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মন্তব্য চালু নেই