ছাত্রী হোস্টেলে ছাত্রলীগের হামলা, ভাঙচুর

রাজশাহী কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে ছাত্রলীগের নারী নেতাকর্মীরা অনুপ্রবেশ করে ছাত্রীদের মারপিট ও হোস্টেলের বিভিন্ন কক্ষের জানালা-দরজাসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুরানো ছাত্রী হোস্টেলে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে সকালে ছাত্রলীগের নেত্রী শাবানা ও তার সহযোগিরা ২০১ নম্বর কক্ষের আবাসিক ও মনোবিজ্ঞান শেষ বর্ষের ছাত্রী সাবিনা আক্তারকে মারপিট করে।

এ ঘটনায় সাধারণ ছাত্রীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেত্রীর বিচার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। এরপরে উত্তেজনা আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ে। পরে ছাত্রলীগের নারী নেতাকর্মীরা আহত সাবিনা আক্তারকে উঠিয়ে আনতে গেইট ভেঙে হোস্টেলে প্রবেশ করে আবাসিক ছাত্রীদের ওপরে হামলা চালায়।

ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা আহত ছাত্রীকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া জন্য এ হামলা চালিয়েছে। হোস্টেলের গেইট ভেঙে হামলাকারীরা ছাত্রী সাবিনা আক্তারের খোঁজ করতে থাকে। শেষে তাকে না পেয়ে হোস্টেলের বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করে।

তারা আরো অভিযোগ করেন, সকালে হামলার ঘটনার বিচার সন্ধ্যায় করা হবে বলে জানিয়েছিলেন কলেজ অধ্যক্ষ মোহা. হবিবুর রহমান। কিন্তু সন্ধ্যায় তিনি তা না করে রাজশাহীর বাইরে কোনো একটা কাজে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যায় ছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এসময় দুই হোস্টেলের ছাত্রীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভ চলার সময় রহমতুন্নেসা ছাত্রী হোস্টেলের (পূর্ব পাশের ভবনটি) প্রধান ফটকে কে বা কারা তালা লাগিয়ে দেয়।

এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরে অপর ছাত্রী হোস্টেলে (পশ্চিম পাশের ভবনে) বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সুযোগে ছাত্রলীগের নারী নেতাকর্মীরা হোস্টেলে অনুপ্রবেশ করে। এতে আবাসিক ছাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। হামলাকারীরা হোস্টেলের বিভিন্ন কক্ষের দরজা, জানলাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। পরে সংবাদ পেয়ে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ ছাত্রী হোস্টেলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ছাত্রী হোস্টেলে অন্যায়ভাবে ছাত্রলীগ নারী নেতাকর্মীদের প্রবেশের বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আবাসিক ছাত্রীরা। তারা এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হোস্টেলের আবাসিক ছাত্রীরা জানিয়েছেন, বুধবার গভীর রাতে রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও রাজশাহী কলেজের তৃতীয় বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী শাবানা খাতুন তার ১০৭ নম্বর কক্ষের সামনের বারান্দায় চেয়ার নিয়ে উচ্চশব্দে মোবাইল ফোনে গান শুনছিলেন।

এ সময় ২০১ নম্বর কক্ষের আবাসিক ও মনোবিজ্ঞান শেষ বর্ষের ছাত্রী সাবিনা আক্তার ছাত্রলীগ নেত্রী শাবানাকে স্পিকার বন্ধ করে ইয়ার ফোনে গান শোনার জন্য বলেন। পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত না ঘটানোর জন্যও ছাত্রলীগ নেত্রী সাবিনা আক্তার অনুরোধ করেন। এই নিয়ে শাবানার সঙ্গে সাবিনা আক্তারের কথা কাটাকাটি হয়।

এদিকে রাতেই তর্ক-বিতর্কের মধ্যে ঘটনাটির নিষ্পত্তি হলেও বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্রলীগ নেত্রী শাবানা হোস্টেলের বাইরে যান এবং কিছুক্ষণের মধ্যে মহানগর ছাত্রলীগের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুন নাঈম ঝিলিক, ছাত্রলীগ নেত্রী রেসমাসহ সাত আটজন সহযোগিকে নিয়ে হোস্টেলে ফেরেন। শাবানার নেতৃত্বে সহযোগিরা সরাসরি ২০১ নম্বর কক্ষে গিয়ে ঝাড়ু ও লাঠি নিয়ে সাবিনা আক্তারকে পেটাতে শুরু করেন।

হামলাকারীরা সাবিনাকে পেটাতে পেটাতে টেনে হিঁচড়ে হোস্টেলের নিচতলায় নিয়ে আসে। এক পর্যায়ে সাবিনা আক্তারকে হোস্টেলের প্রধান ফটকে নিয়ে গিয়ে বের করে দেয়ার চেষ্টা করেন।

পরে হোস্টেলের অন্য ছাত্রী ও তত্ত্বাবধায়ক ছুটে গিয়ে ছাত্রলীগ নেত্রীদের হাত থেকে সাবিনাকে উদ্ধার করে কাছাকাছি একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সাবিনা ফিরে এসে হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়কের কাছে ছাত্রলীগ নেত্রী শাবানা ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন।

আহত সাবিনা আক্তার অভিযোগ করেন, শাবানা ও তার সহযোগিরা হোস্টেল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। এমনকি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজেই হোস্টেল ছেড়ে না গেলে তাকে বের করে দেয়া হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়েছে।

মহানগর ছাত্রলীগের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুন নাঈম ঝিলিক হামলার ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, ‘তারা সাত আটজন মিলে সাবিনার কাছে গেলে সে উল্টো আমাদের সাথে খারাপ ভাষায় গালি দেয়। এতে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলেও তাকে পিটিয়ে আহত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

ছাত্রলীগের হামলার বিষয়ে উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ফারুক চৌধুরী জানান, ছাত্রী হোস্টেলে বাইরের কেউ প্রবেশ করেনি। ভাঙচুরের ঘটনাগুলো ছাত্রীরাই ঘটিয়েছেন।

বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন জানান, হোস্টেলে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। কলেজ বা ছাত্রীদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই