ছাত্রীর শ্লীলতাহানির শাস্তি চড়-থাপ্পর!

নাটোরের সিংড়ায় সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভায় অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে চড়-থাপ্পর মেরেই বিচার কাজ শেষ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তিনি অল্প দিনেই স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ম্যানেজ করে পুনরায় চাকরিতে বহাল হন। সিংড়া উপজেলার জয়নগর-তাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এঘটনা ঘটে।

স্কুল সূত্রে জানা যায়, জয়নগর-তাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাসিম আলী আকন্দ ওই স্কুলেরই নবম শ্রেণির ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করে আসছিলেন। কিন্তু মেয়েটি প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় গত ১৪ অক্টোবর স্কুলের একটি কক্ষে স্কুল ছাত্রীকে ডেকে নেয় শিক্ষক নাসিম হোসেন। এসময় ওই ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করে সে। বিষয়টি কাউকে জানালে ওই ছাত্রীকে হত্যার হুমকি দেন তিনি।

পরে বিষয়টি স্কুলছাত্রী তার অভিভাবককে জানালে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে অভিযোগ দেয়া হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার দুপুরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খবির উদ্দিন সরদার, প্রধান শিক্ষক মহসিন আলীসহ অন্যান্যরা অভিযুক্ত শিক্ষককে চড়-থাপ্পর মেরেই বিচার কাজ শেষ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্কুলের একাধিক শিক্ষক জানান, এর আগে শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত, ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, নেশাগ্রস্ত থাকা, অর্থ আত্মসাতসহ নানা অপর্কেমর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে নেশাগ্রস্ত হয়ে দায়িত্ব অবহেলার কারণে নাসিম আলী আকন্দকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া চলতি বছরে অন্যায়ভাবে ১০ শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগে শিক্ষক নাসিম হোসেনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

তাছাড়া অযোগ্য শিক্ষক হিসেবে গণ্য করে নাসিম হোসেনের শাস্তির জন্য রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ দেন প্রধান শিক্ষক মহসীন আলী। কিন্তু মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি খবির উদ্দিনসহ অন্যরা পুনরায় নাসিম হোসেন আকন্দকে চাকরিতে পুনর্বহাল করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ২০০৮ সালে ওই স্কুলেরই এসএসসির এক পরীক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে শিক্ষক নাসিমের বিরুদ্ধে।

এদিকে বারবার স্কুলের শিক্ষকের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্কুলের শিক্ষার্থীরা। স্কুলে যাতে এমন ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সেজন্য অভিযুক্ত শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেছেন তারা। এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক নাসিম আলী আকন্দ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খবির উদ্দিন সরদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এর আগেও নাসিম উদ্দিন আকন্দ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল, তখন ওই শিক্ষককে ক্ষমা করা হয়েছিল। মানবিক কারণে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়নি। মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাকে পুনর্বহাল করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে খবির উদ্দিন বলেন, এই ধরনের কথা সত্য নয়।

এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুসহাক আলী বলেন, এর আগেও স্কুলের ভেতরে এবং বাইরে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে নাসিম হোসেন আকন্দের বিরুদ্ধে। তাছাড়া ১০ জন শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগে ওই শিক্ষককে ম্যানেজিং কমিটি বহিষ্কারও করে। কিন্তু ব্যস্থাপনা কমিটি অবৈধ অর্থের বিনিময়ে তাকে পুনরায় বহাল রেখেছে।

এই শিক্ষা কর্মকর্তা আরো বলেন, সম্প্রতি শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির বিষয়ে কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। তবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ম্যানেজিং কমিটিকে বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।



মন্তব্য চালু নেই