ছাত্রসংঘ মানেই আলবদর : প্রধান বিচারপতি

জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর আপিল শুনানির শেষ দিনে (বুধবার) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা বলেছেন, আলবদর ছিল একটি কিলিং স্কোয়াড। ইসলামী ছাত্রসংঘ মানেই আলবদর। ছাত্রসংঘের মেম্বাররাই আলবদর গঠন করে। ছাত্রসংঘের মেম্বার মানেই আলবদর।

রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ করার পরে আসামি পক্ষে যুক্তি খণ্ডন করার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন। তখন মীর কাশেম আলীর প্রধান ও সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন যুক্তি খণ্ডন করছিলেন। অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

মীর কাসেম আলীর পক্ষে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আলী আমিন, ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম, অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম।

পরে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর আপিলের ওপর আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে আগামী ৮ মার্চ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে।

বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদেস্যর বেঞ্চ এই আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুর রহমান।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মীর কাসেম আলী কখনো আলবদর ছিলেন না। কোনো সাক্ষী বলেননি তিনি আলবদর ছিলেন। তখন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আলবদর ছিল একটি কিলিং স্কোয়াড। ইসলামী ছাত্রসংঘ মানেই আলবদর। ছাত্রসংঘের মেম্বাররাই আলবদর গঠন করে। ছাত্রসংঘের মেম্বার মানেই আলবদর।

এছাড়া সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, উই আর কনসাশ অ্যাবাউট আওয়ার ফাইন্ডিংস অ্যান্ড অবজারভেশনস। তিনি বলেন, তখন দেশে হত্যাযজ্ঞ (কিলিং স্কোয়াড) চলছিল। সে সময় দেশে আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু ছিল না। কার কথা কে মানত? জেনারেলরা বলেছে তারা মানুষ চায় না। পোড়া মাটি চায়। তখন অবস্থা কি দাঁড়ায়? আমরা আইনের ব্যাখ্যায় বলেছি পাকিস্তানের তখনকার পরিস্থিতিতে কমান্ড রেসপনসিলিটি বিবেচনা করতে হবে।

বুধবার সকালে শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুক্তি উপস্থাপনের সময় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী থেকে পড়ে শোনান। এরপর তিনি মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আবেদন করেন।

শুনানি শেষে তিনি তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি আদালতে বলেছি যে দুটি অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, ট্রাইব্যুনালে তা সঠিকভাবেই দেয়া হয়েছে এবং তা বহাল রাখা হোক।

শুনানি শেষে খন্দকার মাহবুব হোসেন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতে মীর কাসেম আলীর খালাস চেয়েছি। মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে কখনও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করা হয়নি অতীতে। হঠাৎ করেই তাকে রাজনৈতিক কারণে তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে সরাসরি অপরাধে জড়িত থাকার কোনো অভিযোগ নেই। সব শোনা সাক্ষীর ভিত্তিতে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। এমনকি শেখানো সাক্ষীরাও বলতে পারেননি তিনি কোথাও ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। আমরা বলেছি দুর্বল সাক্ষ্য প্রমাণের মামলায় বেনিফিট অব ডাউট আসামির পাওয়া উচিত। অথবা মামলা রিমান্ডে পাঠানো উচিত।

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাসেম অালীকে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। একটি অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে সর্বসম্মতভাবে ও আরেকটি অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া অপর আরো আটটি অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মোট ১৪টি অভিযোগ আনা হয়েছিল। চারটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়। ২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে গ্রেফতার করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই