চোখে জল, হাতে দানবাক্স

চোখে জল, হাতে সহায়তা সংগ্রহ বাক্স। ভাঙা ভাঙা শব্দে কথা বলছে বাংলায়। এরা সবাই নেপালি। শিক্ষার্জনের উদ্দেশ্যে এসেছে সিলেটে।

হিমালয়কন্যার বুকে জন্ম নেয়া এসব ছেলে-মেয়ের মাঝে গত শনিবার দুপুর পর্যন্ত ছিল প্রশান্তি আর আভিজাত্যের ছাপ। তাদের প্রায় সবার পরিবারই স্বচ্ছল-বিত্তবান। কিন্তু মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে তারাই হয়ে গেলো সবচেয়ে দুঃখী মানুষ।

শনিবার এবং রোববারের দফায় দফায় ভূ-কম্পনে তাদের প্রিয় জন্মভূমি পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। স্বজনরা চাপা পড়েছেন ভেঙে পড়া বিভিন্ন স্থাপনার নিচে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মৃতদেহ এবং কয়েক হাজার আহত লোককে উদ্ধার করা হলেও এখনো পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছেন অগণিত মানুষ।

নিজ দেশ ও স্বজনদের সহায়তায় সিলেটের রাজপথে নেমেছে বিদ্যার্জনে আসা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে সহায়তা বাক্স হাতে নিয়ে। সিলেটবাসীও সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন, দিচ্ছেন সান্ত্বনা, জানাচ্ছেন সহমর্মিতা।

সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সিলেট নগরীর বিভিন্ন বিপণীবিতান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সহায়তা তুলেছেন নেপালি শিক্ষার্থীরা।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে নগরীর জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজার এলাকায় ‘সাহায্যের বাক্স’ নিয়ে রাস্তায় নামে রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজে অধ্যায়নরত ৩৫ জন নেপালি শিক্ষার্থীরা। সিলেটের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের কাছে তারা সাহায্য চান। তাদের হাতে দানবাক্স, চোখ জলে টলমল।

সাহায্য সংগ্রহকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা নগরীতে দু’টি দলে ভাগ হয়ে সাহায্য সংগ্রহ করছেন। সংগৃহিত টাকা নেপালে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন।

ত্রাণ সহায়তা সংগ্রহকারী দলের সদস্য অর্জুন কেছি বলেন, ‘নেপাল আজ ধ্বংসস্তূপ। ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এই দুঃসময়ে সবার ক্ষুদ্র সাহায্যই অনেক বড় কিছু। আমরা সবার কাছে সাহায্যের আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছি। যে যা দিচ্ছেন সেটুকুই আমাদের কাছে বিশাল কিছু।’

সাহায্য তুলতে আসা আরেক শিক্ষার্থী রমেছ থাপা বলেন, ‘অনেক আত্মীয়স্বজনই আজ আমাদের মাঝে নেই। হঠাৎ দুর্যোগ কেড়ে নিয়েছে তাদের। যারা চলে গেছেন তাদের তো আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু যারা বেঁচে আছেন, যারা আহত অবস্থায় আছেন তাদের জন্য আমাদের কিছু করা প্রয়োজন। এদের সাহায্যার্থেই আজ আমরা রাস্তায় নেমেছি। এই দুর্দিনে বাংলাদেশের মানুষদের আমরা পাশে চাই। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হয়েছে। আমরা এবার সাধারণ মানুষের দ্বারস্থ হয়েছি।’

প্রসঙ্গত, গত শনি ও রোববার কয়েক দফা ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছে তিন হাজারের চেয়ে বেশি মানুষ। নেপালিদের সাহায্যার্থে বিশ্বের অনেক দেশ এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশও নেপালে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই