চোখের সামনেই ভারতীয় নাবিককে মেরে ফেলল ( ভিডিও )

দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছর পর দেশে ফিরে বিমানবন্দরেই জলদস্যুদের হাতে বন্দি থাকার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার দুর্বিষহ চিত্র তুলে ধরলেন নাবিক জাকির হোসেন৷ এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন৷

জাকির হোসেন বলেন, ‘‘ভারতীয় একজন নাবিককে আমাদের চোখের সামনেই নির্যাতন করতে করতে মেরে ফেলল জলদস্যুরা৷ তখন ওরা বলছিল মুক্তিপণ না দিলে একে একে সবাইকেই ওই (ভারতীয়) নাবিকের মতো ভাগ্য বরণ করতে হবে৷ শুধু ভারতীয় ওই নাবিকই নন, বন্দি প্রত্যেককেই পালাক্রমে নির্যাতন করা হতো৷ পেটাতে পেটাতে অচেতন করে ফেলত৷ জ্ঞান ফিরলেও পানি বা খাবার দেয়া হতো না৷”

আরেক তরুণ নাবিক আমিনুল ইসলাম বললেন, ‘‘গত সাড়ে তিন বছর অত্যন্ত দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে দিন কেটেছে৷ কী যন্ত্রণার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে, সেটি আমরা আর আমাদের পরিবারের সদস্যরাই জানে৷ মুক্তিপণের জন্য ওরা আমাদের মারধর করতো৷ কখনো কখনো আমাদের দিয়ে অমানবিক পরিশ্রমের কাজ করিয়েছে৷ আর এত পরিশ্রমের পর সারা দিনে একটি রুটি ও এক লিটার খাবার পানি দিত৷ মনে হতো, কখনো হয়তো মরেই যাবো৷ কখনো কখনো একবেলা খেয়েই কোনো রকমে বেঁচে থাকা৷ আমাদের পরিবারের কাছে ফোন করে মুক্তিপণ চাইতো৷ আল্লাহর রহমত না হলে দেশে ফিরতে পারতাম না৷ কখনো ভাবিনি দেশে ফিরতে পারবো৷”

দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশি সাত নাবিক বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছেন৷ সকাল পৌনে নয়টায় এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে করে তারা হজরত শাহজালাল (র.) বিমানবন্দরে নামেন৷ এ সময় তাদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল খোরশেদ আলম৷

ফিরে আসা বাংলাদেশি নাবিকরা হলেন – সাতক্ষীরার গোলাম মোস্তফা, হাবিবুর রহমান, আবুল কাশেম সরকার ও নুরুল হক, চাঁদপুরের লিমন সরকার এবং চট্টগ্রামের আমিনুল ইসলাম ও জাকির হোসাইন৷ তাদের সঙ্গে একই দলে একজন পাকিস্তানি, দু’জন শ্রীলঙ্কান এবং একজন ইরানি নাবিকও ছিলেন৷ বিমানবন্দরে নামার পর সাত নাবিককে রাখা হয়েছে উত্তরার মেরিনো নামের একটি আবাসিক হোটেলে৷

শুক্রবার বিকেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে নাবিকরা তাদের বন্দি জীবনের বর্ণনা দেবেন৷ এ কারণে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে নাবিকদের দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে দেননি তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা৷

অভ্যর্থনা জানানোর পর নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের সাত নাবিককে এভাবে এত দীর্ঘ সময় পর জীবিত ও অক্ষত উদ্ধার করাটা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের৷ আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল খোরশেদ আলম বলেন, ‘‘আমাদের অপহৃত সাত নাবিক জীবিত আছেন, এটা জানার পর থেকে তাদের সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বিভিন্ন পক্ষের সহযোগিতায় আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছিলাম৷ এরই ফলে সাতজনকে জীবিত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে৷”

গত ৭ জুন জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাদের জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দপ্তর (ইউএনওডিসি)-র একটি বিশেষ বিমানে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে নেয়া হয়৷ ইউএনওডিসি এবং লন্ডনভিত্তিক সামুদ্রিক দস্যুতা ও মানবিক সহায়তা কর্মসূচি (এমপিএইচআরপি)-র সহযোগিতায় তাদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়৷

এর আগে ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর সোমালিয়ার উপকূল থেকে ৯০০ মাইল দূরে ভারত মহাসাগরে অপহরণ করা হয় মালয়েশিয়ার পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আলবেদো৷ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে কেনিয়া যাওয়ার পথে অপহৃত জাহাজটিতে বাংলাদেশের সাতজনসহ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ইরানের ২৩ জন নাবিক ছিলেন৷ অপহরণের ৬ মাস পর জলদস্যুদের নির্যাতনে একজন ভারতীয় নাবিক মারা যান৷ এরপর ২০১৩ সালের জুলাই মাসে জাহাজটি ডুবে গেলে শ্রীলঙ্কার চারজন নাগরিক নাবিক মারা যান৷ তখন বাকি ১৮ জন নাবিককে ছিনতাই করা আরেকটি জাহাজ ‘নাহাম-৩’ এ তোলা হয় বলে ইইউ নেভাল ফোর্স জানিয়েছিল৷ এর মধ্যে বাংলাদেশের ৭ জনসহ ১১ জন নাবিক জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন৷ এখনো ৭ জন নাবিক জলদস্যুদের হাতে বন্দি আছে বলে জানিয়েছেন ফিরে আসা বাংলাদেশের নাবিকরা৷

http://www.youtube.com/watch?v=hzalfmVDOmk

[ জুন ২০১৪ এর আর্কাইভ সংবাদ]



মন্তব্য চালু নেই