চোখের পাতার প্রদাহজনিত রোগ ব্লেফারাইটিস এর ঘরোয়া প্রতিকার

ব্লেফারাইটিস হচ্ছে এক ধরণের চোখের ইনফেকশন যার কারণে চোখের পাতা অত্যধিক ফুলে যায়। আর পাপড়ির গোঁড়ায় অবস্থিত তৈলগ্রন্থিগুলো যখন কোন কারণে বন্ধ হয়ে যায় তখন চোখের পাতার প্রদাহ বৃদ্ধি পায় এবং এই অবস্থাকেই ব্লেফারাইটিস বলে। চোখের পাতার প্রদাহ দুই ধরণের হয় যেমন- এন্টেরিওর ও পোস্টেরিওর। এন্টেরিওর প্রদাহ চোখের পাতার বাহিরের দিকে হয় এবং পোস্টেরিওর প্রদাহ হয় চোখের ভেতরের কোণায় হয়।

ব্লেফারাইটিসের নির্দিষ্ট কারণ এখন ও জানা যায়নি। তবে মাথার তালুতে বা আইব্রুতে খুশকি হলে, চোখের পাপড়িতে মাইট বা উকুনের আক্রমণে, চোখে মেকআপ এর ফলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ায়, ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়, নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এবং তৈল গ্রন্থিতে কোন ত্রুটি দেখা দিলে ব্লেফারাইটিস হতে পারে। ব্লেফারাইটিস হলে অনেক বেশি অস্বস্তি হয় এবং দৃষ্টিশক্তির ওপরেও প্রভাব ফেলতে পারে।
ব্লেফারাইটিস হলে সম্ভাব্য যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হল- চোখের পাতার চুলকানি, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া বা প্রদাহ হওয়া, জ্বলুনি হওয়া, তৈলাক্ত চোখের পাতা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে পানি আসা, পাপড়ির গোড়ায় আস্তর জমা, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং চোখে কিছু একটা পড়েছে এমন অনুভূতি হয়। খুব বেশি জটিল আকার ধারণ করলে চোখের পাপড়ি কমে যেতে থাকে।
চিকিৎসা করা না হলে ব্লেফারাইটিস জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ফাঙ্গাস এর সংক্রমণ শনাক্ত করা যায়। ছোটখাট বা কম উপসর্গের ক্ষেত্রে ঘরোয়া কিছু উপায় আছে যা অনুসরণ করলে উপসর্গের মাত্রা কমানো যায়। এবার তাহলে জেনে নেই ঘরোয়া প্রতিকারগুলো সম্পর্কে।

১। ঘন ঘন মুখ পরিষ্কার করা
ব্লেফারাইটিসের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির সারাদিনে নিয়মিত বিরিতিতে চোখ পরিষ্কার করতে হয় যেনো চোখের পাতায় স্তর না জমে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি উষ্ণ তোয়ালে দিয়ে চোখের পাতা মুছে ফেলা যায়। এর ফলে আস্তর ও তেল জমতে পারবেনা। উষ্ণ তোয়ালে চোখের পাতার উপর ২০ মিনিট হালকা ভাবে চেপে ধরে রাখলে চোখের পাতার ভেতরের অংশও পরিষ্কার হবে। এছাড়াও চোখ ও মুখ উষ্ণ পানি দিয়ে ধুলে ফোলা, চুলকানি ও জ্বলুনি কমে।

২। বেবি শ্যাম্পু
ব্লেফারাইটিস নিরাময়ে বেবি শ্যাম্পু অনেক কার্যকরী। একটি ভেজা ও উষ্ণ গরম তোয়ালের মধ্যে এক ফোঁটা বেবি শ্যাম্পু লাগিয়ে চোখের পাতার উপর আস্তে আস্তে ঘষুন। অথবা ১ কাপ গরম পানিতে ২/৩ ফোঁটা বেবি শ্যাম্পু মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণে একটি কটন বল চুবিয়ে নিয়ে এটি দিয়ে উভয় চোখের পাতায় ঘষুন ১৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো করে চোখ ধুয়ে নিন।

৩। আলুর প্যাক
ব্লেফারাইটিসের ফোলা, ব্যথা ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে আলুর প্যাক। পাতলা করে কাটা আলুর টুকরো চোখের পাতার উপর দিয়ে রাখলে ব্লেফারাইটিসের সংক্রমণ ও উপসর্গ কমে। এর জন্য আলু পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে পাতলা করে টুকরা করে চোখের পাতার উপর দিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। দিনে দুই থেকে তিন বার এই প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করলে কয়েক দিনের মধ্যেই ব্লেফারাইটিসের প্রাদুর্ভাব কমে যায়।

৪। টি ট্রি অয়েল
ব্লেফারাইটিস নিরাময়ে সাহায্য করে টি ট্রি অয়েল। ২০১২ সালে জার্নাল অফ কোরিয়ান মেডিকেল সাইন্স এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায় যে, ডেমোডেক্স মাইটের আক্রমণে সৃষ্ট ব্লেফারাইটিস নিরাময় করতে পারে টি ট্রি অয়েল। এর জন্য ১ টেবিল চামচ নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল এর মধ্যে ২/৩ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটিতে একটি কটন বল চুবিয়ে নিন। চোখ বন্ধ করে তেলে ভেজা তুলার বলটি চোখের পাতায় লাগান এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত। ৫-১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে রাখুন। সমস্যা দূর হওয়া পর্যন্ত দিনে দুইবার এটি ব্যবহার করুন।
২০১৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ অপথ্যালমোলজিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড চোখের পাতার শুষ্কতার সমস্যার পাশাপাশি ব্লেফারাইটিস ও মিবোমিয়ান গ্রন্থির রোগে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তাই ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।



মন্তব্য চালু নেই