চেয়ারপার্সন পদ নিয়ে বেরোবিতে ক্ষোভের সৃষ্টি

এইচ.এম নুর আলম, বেবোবি প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) সকল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পদের নামের পরিবর্তন করে রাজনৈতিক দল বিএনপির লালিত ও অনুসারিত চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নামের আগে ব্যবহৃত ‘চেয়ারপার্সন’ নাম ব্যবহার করার সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহনে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অনতিবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে ক্যাম্পাসে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে আওয়ামীপন্থি একাধিক শিক্ষক।

জানা যায়, গত ২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত প্রথম সিনেট অধিবেশনে সকল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নামের পরিবর্তে ‘চেয়ারপার্সন’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহনের বিষয়টি সেদিনই জনসংযোগ দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তির দ্বারা জানানো হয়। কিন্তু ‘চেয়ারপার্সন’ পদ ব্যবহারের বিষয়টি দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এমনকি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দল বিএনপি দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার নামের পূর্বে এই ‘চেয়ারপার্সন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত বিএনপির লালিত ও অনুসারিত ‘চেয়ারপার্সন’ পদটি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকাশ্যে খালেদা জিয়ার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে এর বিরোধীতা করে আসছে আওয়ামীপন্থী একাধিক শিক্ষক। বিষয়টি ক্যাম্পাস খোলার পর শসমালোচিতহওয়ায়অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে এই ‘চেয়ারপার্সন’ পদের ব্যবহারের পক্ষে প্রস্তাব দেয়া শিক্ষকরা।

একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন অদ্ভুত ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত সবাইকে ব্যাপক ভাবিয়ে তুলেছে। এই সিদ্ধান্ত মূলত বিএনপি ও খালেদা জিয়ার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্যই নেয়া হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক মো: মশিউর রহমান এমন সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করা না হলে সকলকে নিয়ে ক্যাম্পাসে দুর্বার আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি প্রদান করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ‘বাংলারমুখ’র সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য সচিব মশিউর রহমান বলেন, ‘বিএনপির আদর্শ ‘চেয়ারপার্সন’ পদ ব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিএনপি-খালেদা জিয়ার গুপ্ত এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শ বিরোধী এমন সিদ্ধা প্রত্যাখান করে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হোক। অন্যথায় ক্যাম্পাসে দুর্বার আন্দোলন-কর্মসূচির ডাক দেয়া হবে।’

বিষয়টি নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, ‘চেয়ারপার্সন’ শব্দটি ব্যবহার না করে এখানে সভাপতি পদটি ব্যবহার করা যেত। কি কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো সেটি ভালোভাবে একাডেমিক কমিটির সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যই জানেন। আমরা সবসময় ‘জেন্ডার ফেয়ার‘ এর কথা বললেও এতে ডিসক্রিমিনেশনের বিষয়টি উঠে এসেছে। এখানে বিষয়টি একটু উস্কে দেয়ার মতো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘চেয়ারপার্সন’ পদটি ব্যবহারের সিদ্ধান্তটি সিনেট সভায় গৃহীত হয়েছে। এক্ষেত্রে কারও দ্বিমত থাকতেই পারে। সেই সভায় বর্তমান সরকারের উচ্চ পর্যায় সহ চার জনসংসদ সদস্য উপস্থিত ছিল। ওনাদের উপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’



মন্তব্য চালু নেই