চিঠি চালাচালির মধ্যেই আটকে তনুর ময়নাতদন্ত

তনুর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের পর ৫৬ দিন পার হয়েছে। এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি ময়নাতদন্তকারী মেডিকেলবোর্ড। তনুর মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিতে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান কামদা প্রসাদ সাহাকে চিঠি দিয়েছেনতদন্ত কর্মকর্তা, সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম।

তবে কামদা প্রসাদ সাহা গতকাল (বুধবার) বলেছেন, ডিএনএ প্রতিবেদন ছাড়া কোনো অবস্থাতেই তাঁরা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেবেন না।

কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও ডিএনএ প্রতিবেদন নিয়ে এক মাস ধরে চিঠি চালাচালি চলছে মেডিকেল বোর্ড ও মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির মধ্যে।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম চিঠি দেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও মেডিকেল বোর্ডের প্রধান কামদা প্রসাদ সাহাকে। তাতে বলা হয়, ‘সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে সোহাগী জাহান তনুর মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষার রিপোর্ট যথাযথভাবে সংগ্রহ করে সঠিকভাবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রদান করার জন্য আপনার সদয় মর্জি হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, ‘সিআইডির চিঠি পাওয়ার পর আমরা গত শনিবার ঢাকায় ফরেনসিক মেডিসিন সোসাইটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছি। মঙ্গলবার মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেছি। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের পরামর্শ নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে আদালতে যাব। আদালত ডিএনএ প্রতিবেদন দিলে দ্রুত আমরা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেব।’

তিনি বলেন, ‘সিআইডি বলছে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার রিপোর্ট সংগ্রহ করে যথাযথভাবে প্রতিবেদন দিতে। কিন্তু ডিএনএ প্রতিবেদন না দিলে কীভাবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেব?’

প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্ক ওঠায় এবং তনুর মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করতে ব্যর্থ হওয়ায় আদালতের নির্দেশে গত ৩০ মার্চ কবর থেকে লাশ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। তখন তনুর দেহ ও কাপড়ের কিছু নমুনা সিআইডি তাদের ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে ডিএনএন পরীক্ষা করায়। পরবর্তী সময় সিআইডির কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ডিএনএ পরীক্ষায় তনুকে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। তিনজন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির ডিএনএ প্রোফাইল মিলেছে ওই পরীক্ষায়।

এর আগে গত ১৬ এপ্রিল কামদা প্রসাদ সাহা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন চান। এর জবাবে ২১ এপ্রিল পাল্টা চিঠি দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আদালতের নির্দেশ ছাড়া ডিএনএ প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া ময়নাতদন্তে ডিএনএ প্রতিবেদন সহায়ক নয়।

এরপর ২ মে আবার চিঠি দিয়ে ডিএনএ প্রতিবেদন চান কামদা প্রসাদ। ৪ মে আবারও একই জবাব দেয় সিআইডি। তারপর ১৪ মে আবার কামদা প্রসাদ সিআইডিকে চিঠি দিয়ে ডিএনএ প্রতিবেদন চান, একই সঙ্গে এ বিষয়ে আদালতের মনোভাব কী, তা জানানোর জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেন।

তদন্ত কর্মকর্তা, সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে তিনি আদালতের অনুমতি ছাড়া আইনত কোনো প্রতিবেদন হস্তান্তর করতে পারেন না। তিনি বলেন, তিনি কামদা প্রসাদকে যে চিঠি দিয়েছেন, তার অনুলিপি কুমিল্লার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে তনুর প্রথম ময়নাতদন্তের পর কেন বিভ্রান্তিমূলক প্রতিবেদন দেওয়া হলো, তা জানতে চেয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, ‘নোটিশটি আমরা পেয়েছি। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জবাব দেওয়া হবে।’

এদিকে দ্রুত দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম। তিনি ফোন করে এই দাবির কথা জানান। একই সঙ্গে তিনি সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সঙ্গে দ্রুত ডিএনএ পরীক্ষায় পাওয়া নমুনা মেলানোর দাবি করেছেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী তনু গত ২০ মার্চ খুন হন। ওই রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের ভেতরের একটি ঝোপ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। সূত্র: প্রথম আলো।



মন্তব্য চালু নেই