চা বিক্রেতা সোলায়মানের বিস্ময়
মোঃ সোলায়মান হোসেন(২২)। গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেদীগঞ্জ থানায়। ২০০৮ সালে চাকুরীর জন্য প্রথম ঢাকার উদ্দেশ্য যাত্রা। ঢাকায় এসে কিছুদিন চাচাতো ভাইয়ের কাছে থাকতে হয়। পরে সেই চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমেই রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ডিআরইউতে চা বিক্রির পেশায় জড়িয়ে যাওয়া। গ্রাম থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে আসাই তার শেষ পাঠ্যজীবন। এরপর জীবিকার চাহিদায় চা বিক্রির পেশায় জড়িয়ে যাওয়ায় আর পড়াশুনার বিষয়টা ভাবার সময় হয়নি তার। তাই পরিবারের চার ভাই-বোনের বড় সোলায়মান পরিবারের ছোট ভাই-বোনদের পড়াশুনার খরচ জোগাতে আয়ের কিছু অংশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। বাবার কৃষি কাজের উপার্জন আর সোলায়মানের পাঠানো টাকায় তার পরিবার কোনোভাবে দিন কাঁটায়। তবে শুধু চা বানালেও সোলায়মানের বিশেষ এক গুণ রয়েছে। যা সম্পর্কে ডিআরইউতে নিয়মিত চা খেতে আসা সকলেই বেশ পরিচিত।
শুধু চা বানিয়ে মানুষকে খুশি করার এক অভিনব স্মৃতি শক্তি রয়েছে সোলায়মানের মধ্যে। মজার বিষয় হলো, সাধারণ চা বিক্রেতারা যখন ক্রেতার চাহিদা মেনে নিয়ে চা বানান সেখানে সোলায়মান চা বানান ক্রেতার চেহারা দেখে। এ বিষয়টি গোলক ধাঁধাঁর মত মনে হলেও তা মেনে নিতে হবে অকপটে!
সোলায়মানের দোকানে অর্ডার দিয়ে চা খেতে এলে সে তার বা তাদের চেহারা মনে রাখতে পারে। শুধু তাই নয়! চেহারাগুলো তাকে কে, কেমন স্বাদের চায়ের অর্ডার দিয়েছিলো সেটাও সোলায়মান তার স্মৃতিতে গেথে নেয়। তাই একবার অর্ডার করলেই যথেষ্ট। এরপর যতবারই এখানে চা পানের উদ্দেশ্যে আসবেন আপনাকে আর নিজের স্বাদ সম্পর্কে সোলায়মানকে বলে দিতে হবে না। শুধু চায়ের অর্ডার করলেই হবে।
জানতে চাইলে সোলায়মান অবিশ্বাস্য এক তথ্য দিলো। সোলায়মানের মতে, সে এক নাগারে পাঁচ থেকে ছয়শো লোকের চায়ের স্বাদ তাদের মুখ দেখে বানিয়ে দিতে পারে। তবে এই সংখ্যার মধ্যে নিয়মিত ডিআরইউতে চা খেতে আসা প্রায় তিন শতাধিক সাংবাদিকের চায়ের স্বাদ সম্পর্কে সোলায়মানকে কখনোই বলে দিতে হয় না।
আরো অবিশ্বাস্য বিষয় হলো, ডিআরইউ’র ১,৪০০ সদস্যের মধ্যে এখানে চা খেতে আসা যে কেউ ১ সপ্তাহ বা ১ মাস পরে এলেও নির্দ্বিধায় তার প্রিয় স্বাদের চা বানিয়ে দিতে পারে সোলায়মান। বিগত ৭ বছরের চা বিক্রির অভিজ্ঞতা থেকেই সাংবাদিকদের চায়ের স্বাদ বোঝে এমনটাই দাবি সোলায়মানের। তবে সোলায়মানের ভালো চা বানানোর পেছনের গল্প একটাই। আর তা হলো, ভালো চা বানানোর জন্য মন ভালো থাকা চাই। এছাড়াও চায়ের উপকরণগুলোর মিশ্রণও চাই পরিমিত।
সোলায়মানের ইচ্ছে ছিল পড়ালেখা করে বড় হয়ে ভালো চাকুরী করার। কিন্তু তা হয়নি। এরপরও যদি পড়াশোনার সুযোগ আসে তবে সে পড়তে চায়। চা বিক্রির কাজ বাদ দিয়ে যদি তাকে অন্য কাজে দায়িত্ব দেয়া হয় তবে সে কাজ ভালোভাবে করতে পারবে এমন দৃঢ় প্রত্যয়ও রয়েছে সোলায়মানের মাঝে। সোলায়মানের মতে, যেকোনো কাজ করার পেছনে আগে ‘মন ভালো’ থাকা চাই। তাহলে সব কাজই করা সম্ভব।
এর মাঝেও কাজের প্রয়োজনে ডিআরইউ’র সবার ব্যবহারে মুগ্ধ সোলায়মান। তবে কেউ যখন তাকে বকা দিয়ে কথা বলেন তখন কেমন একটু কষ্ট লাগে তার। তবে সোলায়মানের কথা হলো, ‘বড়দের কথা মেনে কাজ না করলে বকাতো একটু খেতেই হবে’। সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝে সোলায়মানের মুখে ঘামের বিচ্ছুরণ ঘটতে থাকে। সোলায়মানের উদ্দেশ্যে বাগানের কর্ণারের টেবিল থেকে হঠাৎ চায়ের অর্ডার ভেসে আসে। দাঁত বের করে হাসি দিয়ে চকিত নয়নে চেহারাগুলো দেখে নেয় সে। ‘দিচ্ছি স্যার’ বলে চায়ের কাচে চামচের ঝঙ্কার তুলে শুরু হয়ে যায় বিস্ময় বালক সোলায়মানের ব্যস্ততা।
সংগৃহীত।
মন্তব্য চালু নেই