চার পা ওয়ালা এক মেয়ের গল্প

একজন মানুষের চারটি পা- এমন কথা কখনো শুনেছেন? এমন অদ্ভুত শরীরের মানুষদের কথা মাঝেমাঝে জানা গেলেও তারা পারতপক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না। কিন্তু মার্টল নামের এই মেয়েটি চার পা নিয়েও বেঁচে ছিলো ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত!

আমেরিকার টেনেসি অঞ্চলের লিঙ্কন কাউন্টিতে জন্ম নেন মার্টল করবিন নামের এই নারী।তার স্বাভাবিক দুইটি পায়ের ভেতরের দিকে উপস্থিত ছিলো আরো একজোড়া পা। চিকিৎসাবিদেরা ধারণা করেন তার যমজ বোনের শরীরের কিছু অংশ তার সাথে জোড়া লাগানো ছিলো। যমজ সেই বোনের শরীরের শুধুমাত্র কোমর থেকে নিচের অংশটুকু উপস্থিত ছিলো মার্টল এর শরীরে। এই দুইটি পায়েরও ছিলো মাত্র তিনটি করে আঙ্গুল। মার্টল এই দুই পা নাড়াতে পারতেন কিন্তু এই দুই পা হাঁটার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলো না। এ ছাড়াও তার নিজের পা দুটির মাঝে একটি ছিলো একটু বিকৃত। ফলে এই চার পা ওয়ালা মেয়েটির শরীরে মাত্র একটি পা ছিলো সুস্থ-সবল। পা ছাড়াও একটি অতিরিক্ত পেলভিস এবং যৌনাঙ্গ ছিলো মার্টলের শরীরে।

ছোটবেলা থেকেই সার্কাসের দলে যোগ দেন তিনি। টেক্সাসের চার পা ওয়ালা মেয়ে হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়ে পরে। তিনি নিজের কর্মক্ষম দুই পায়ের সাথে মিলিয়ে ছোট দুইটি পায়েও জুতো-মোজা পরতেন যাতে দর্শকেরা হতভম্ব হয়ে যায়। খ্যাতির কারণে প্রতি সপ্তাহে ৪৫০ ডলার করে আয় হতো তার, সে সময়ে এমন আয় করাটা ছিলো দুর্লভ। ১৮ বছর বয়সের মাঝেই তিনি প্রচুর অর্থ জমিয়ে ফেলেন এবং সার্কাস থেকে অবসর নেন। ১৯ বছর বয়সে মিয়ে করেন ক্লিন্টন বিকনেল নামের এক চিকিৎসককে।

বিয়ের পর তার এই অন্যরকম শরীরের বৈশিষ্ট্য আরো ভালোভাবে ফুটে ওঠে। তার দুইটি যৌনাঙ্গের আলাদা আলাদাভাবে সন্তান ধারণের ক্ষমতা ছিলো। Anomalies and Curiosities of Medicine বইতে লেখক জর্জ গোল্ড বলেন, তার দুই জরায়ু থেকেই ঋতুস্রাব পরিলক্ষিত হয় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় দুইটিই কর্মক্ষম ছিলো। বিয়ের এক বছরের মাথায় তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে অ্যালাবামার ডাক্তার লিউইস হোয়েলিকে ডাকা হয়। তার শরীরের বাম দিকের জরায়ুতে গর্ভসঞ্চার হয়েছে এ কথা জানতে পেরে অবাক হন মার্টল। কারণ তিনি আশা করতেন ডান দিকের জরায়ুতে সন্তান ধারণ করবেন তিনি। প্রথমবার গর্ভধারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আট সপ্তাহের মাথায় গর্ভপাত ঘটাতে হয়। কিন্তু এর পরেও তিনি পরবর্তীতে চার কন্যা এবং এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। বলা হয়ে থাকে, তার তিন জন সন্তান এক জরায়ু থেকে এবং বাকি দুই জন ওপর জরায়ু থেকে জন্ম নেয়।

শারীরিকভাবে অন্যদের চাইতে ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও মার্টলের ব্যাপারে বলা হয়, তিনি ছিলেন ভদ্র এবং মিষ্টি স্বভাবের মানুষ। তিনি ছিলেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে তার কোনো সমস্যা হতো না। তার ব্যাপারে আরও বলা হয়, তিনি ছিলেন বুদ্ধিমতি এবং সুরুচিপূর্ণ। ১৯২৮ সালে পরিবার ও পরিজনদের মাঝে মারা যান মার্টল। তখন তার বয়স ছিলো ৬০ বছর। প্রিয় নিউজ।
মূল: MYRTLE CORBIN – The Four-Legged Woman, The Human Marvels



মন্তব্য চালু নেই