চাপের মুখে রোগীর স্বজন পেটানো ইন্টার্নদের সাজা প্রত্যাহার
রোগীর স্বজনকে পিটুনির ঘটনায় বগুড়ার চার শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে দেয়া সাজা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে চাপের মুখে। গত বৃহস্পতিবার এই সাজা দেয়ার পর বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মবিরতি শুরু করে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা। পরে তা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ছড়িয়ে যায়। আর চার দিনের মাথায় ওই সাজা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অনুরোধে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। সকালে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাকর্মীরা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান তার সরকারি বাসায়। এ সময় তার সঙ্গে ছাত্রলীগ সমর্থিত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা তার সঙ্গে ছিলেন। এরপরই মন্ত্রী এই ঘোষণা দেন।
সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা পরীক্ষিত চৌধুরী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার এই সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগী আলাউদ্দিনের ছেলে আবদুর রউফকে বেদম মারধর ছাড়াও অবমাননাকর সাজা দেন কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিও চিত্র প্রকাশের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমটি গঠন করে। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি গঠন করে।
গত বুধবার এই কমিটি প্রতিবেদন দেয়ার পরদিন চার শিক্ষানবীশ চিকিৎসকের ইন্টার্নশিপ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। সেই সঙ্গে বগুড়ার এই হাসপাতালের বদলে তাদেরকে অন্যত্র ইন্টার্নশিপ শেষ করতে হবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজ করলে তাদের পেশাগত সনদ বাতিল করা হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
শাস্তি পাওয়া চার শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের মধ্যে নূরজাহান বিনতে ইসলাম নাজকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, আশিকুজ্জামান আসিফকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, কুতুবউদ্দিনকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং এম এ আল মামুনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ শেষ করতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা আসার পর থেকেই বগুড়ায় ধর্মঘট শুরু করেন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাদের এই কর্মসূচির সমালোচনা করেন।
শিক্ষানবিশরা দাবি করছিলেন, একজন নারী শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে উত্ত্যক্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বগুড়া হাসপাতালে রোগীর স্বজনকে পিটুনি দেয়া হয়েছিল। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি এই অভিযোগের কোনো প্রমাণ পায়নি। তারপরও চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন শিক্ষানবিশদের দাবির পক্ষে দাঁড়াতে থাকে।
শিক্ষানবিশদের এই কর্মবিরতি নিয়ে রবিবার বিকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। শিক্ষানবিশদের কর্মবিরতিতে হাসপাতালে সেবায় যেন কোনো ঘাটতি না হয়, সে ব্যবস্থা করতে কড়া নির্দেশ দেন মন্ত্রী। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই উল্টো ঘোষণা দিলেন তিনি।
মন্তব্য চালু নেই