চাটখিলের আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি, জনমনে আতঙ্ক
এম.এ আয়াত উল্যা, স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী : নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলা আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। ১ টি পৌরসভা ও ৯ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এক সময়কার শান্তির নীড়, চাটখিল এখন সন্ত্রাসের জনপদে পরিনত হয়েছে। প্রতিনিয়ত চুরি, ডাকাতি, ইভটিজিং, সন্ত্রাসী মহড়া, মুক্তিপন আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এতে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ডাকাত, সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে রহস্য জনক ভূমিকা পালনের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, এখানে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী রাতে মোহাম্মদপুর গ্রামের পূর্ব নাগরপাড়া পাটোয়ারী বাড়ীতে প্রবাসী সুমন ও তার চাচার ঘরে এবং একই রাতে মলংচর মিজি বাড়ীর আলী আকবরের ঘরে, ১৩ ফেব্রুয়ারী গোপাইর বাগের মুক্তিযোদ্ধা জিতেন্দ্র লাল ওরফে শনিদাসের বাড়ীতে দুধর্ষ ডাকাতী সংগঠিত হয়েছে। তাছাড়া ডাকাতি হয়েছে নারায়নপুর গ্রামের সুধাংশু ডাক্তারের বাড়ীতে, পুরুষোত্তমপুর মিত্তের বাড়ীর শহিদুল্লার ঘরে একই গ্রামের মন্দার বাড়ীর ইব্রাহিম কোম্পানী এবং চৌধুরী বাড়ীর আবু জাহের চৌধুরীর ঘর সহ আরো কয়েকটি ঘরে এসব ডাকাতির ঘটনায় স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা সহ অর্ধ কোটি টাকার মালামাল লুট হয়েছে। সংঘঠিত ডাকাতির মামলা সমূহের ঘটনাস্থল থানা পুলিশ পরিদর্শন করলেও ১টি মামলার ও কোনো অগ্রগতি নেই। তাছাড়া ৪ মার্চে পশ্চিম শোশালিয়া গ্রাম থেকে অজ্ঞাতনামা মহিলা (৬০) লাশ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি বদলকোট চুনি পাটোয়ারী বাড়ির সামনে বাবুল পাটোয়ারী নামে এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। ২০ ফেব্রুয়ারী রাতে ১১ নং পোলের গোড়ায় নিহত হয়েছে আলমগীর হোসেন আগুন (৪৫)। তাছাড়া সন্ত্রাসীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছে ছয়ানী টবগা গ্রামের যুবলীগ নেতা আক্তার হোসেন স্বপন ও স্বপন হত্যার জের ধরে উত্তেজিত জনতা খুনি রবিনের ঘরে আগুন দিলে তার বৃদ্ধ দাদা ঝলসে পরদিন মারা যায়।
আরো খুন হন দশঘরিয়া বাজারে পরকোট গ্রামের নজরুল ইসলাম নজু, পরানপুর গ্রামের সিএনজি চালক মাহফুজ আলম, চাটখিল দশঘরিয়া বাজারের আল বারাকা কাউন্টারের ম্যানেজার কামাল হোসেন, চাটখিল বদলকোট সড়কের বাস শ্রমিক দুলাল হোসেন, অমরপুর গ্রামের মিন্টু সহ আরো ৮-১০ জন। এসব হত্যাকান্ডের মামলা তদন্ত এবং আসামী গ্রেফতারের অগ্রগতি না থাকায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষ কয়েকটি মামলা ডি.বি ও সি.আই.ডি তে হস্তান্তর করেছেন। সন্ত্রাস কবলিত চাটখিলের দক্ষিণ অঞ্চলের খিলপাড়া ইটপুকুরিয়া সড়কের ১০/১৫ জনের একদল সঙ্গবদ্ধ সশ¯্র সন্ত্রাসী পুরো এলাকাকে জিম্মী করে রেখেছে। এ বাহিনী ২৩ ফেব্রুয়ারী রাতে খিলপাড়া বাজারে হানা দিয়ে শতাধিক রাউন্ড গুলি ও ককটেল বিস্ফোরন ঘটায় এবং উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক সালা উদ্দিন সুমনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে, ১৫/১৬ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ বাহিনী সশ¯্র অবস্থায় বাজারের মহড়া দিলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করার অভিযোগ রয়েছে। এ বাহিনী ১৮ ফেব্রুয়ারী তারিখে কালিকাপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সেকান্তর দেওয়ানের বাড়ীতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে। ১৯ ফেব্রুয়ারী খিরীহাটি গ্রামের রুইর বাড়ীর কামালকে এবং গোমাতলী গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা নাছির উদ্দিন কে অপহরনের চেষ্টা করে। এ বাহিনী পশ্চিম দেলিয়াই গ্রামের তুফানী বাড়ীর কালামের ছেলে সিরাজ, কাদের মিয়ার ছেলে সুজন, দক্ষিণ শংকরপুর আখন বাড়ীর জালালের ভাই কামালসহ অনেকের কাছ থেকে মুক্তিপন আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। এদের সমস্ত কার্যক্রম থানা পুলিশকে জানালেও কোন প্রতিকার নেই। থানার কয়েকজন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন এখানে কর্মরত থাকায় সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেছে। এতে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। চাটখিল থানার অফিসার ইনচার্জ নাছিম উদ্দিন জানান আমরা আইন শৃঙ্খলা উন্নতির জন্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
মন্তব্য চালু নেই