চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির প্রস্তাব উঠছে সংসদে

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব জাতীয় সংসদে আলোচনায় উঠছে আজ বৃহস্পতিবার।

এদিন বিকালে জাতীয় সংসদে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার জন্য বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত-প্রস্তাব উত্থাপিত হবে।

জাতীয় সংসদের দিনের কার্যসূচি থেকে জানা গেছে, বেসরকারি সদস্যদের এই সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি দিয়েছেন যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম।

অপরদিকে বিকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমার বিষয়টিও আলোচনা হবে বলে সংসদীয় কমিটি সূত্র জানিয়েছে।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বিদ্যমান বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ করার গুঞ্জন রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে করা হবে ৩২ থেকে ৩৫ বছর।

সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে সাধারণ ছাত্র পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনে নেমেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

এই দাবিতে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ঘোষণা করেছেন তারা।

গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে তারা একটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। রাজপথ অবরোধের মত কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও অন্যান্য কলেজ-ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।

কিছুদিন আগে জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স সীমা বৃদ্ধি করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।

আন্দোলনকারীদের দাবি, দেশে চাকরিপ্রার্থী বেকারের মিছিল দীর্ঘ হইতে দীর্ঘতর হচ্ছে। প্রতি বছর শত-সহস্র যুবক উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বের হলেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি মিলে নতুন চাকরির যত সুযোগ সৃষ্টি হয়, তার তুলনায় প্রার্থীর সংখ্যা বহুগুণ বেশি। সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩০ হওয়ায় বাস্তব কারণেই সমস্যাটি প্রকট। লেখাপড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য নাই— এমন কর্মে বাধ্য হয়ে অনেকে যোগ দেন এবং নৈরাশ্যপূর্ণ জীবন যাপন করেন।

সরকারি চাকরির অবসরের বয়স ৫৯ বছর। মুক্তিযোদ্ধাদের বেলায় ৬০ বছর। কোনো কোনো চাকরিতে অবসরের বয়স করা হয়েছে ৬৫ বছর। আর চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে নিয়োগের বেলায় বয়সের বালাই নেই।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০, বিভিন্ন প্রদেশে বয়সসীমা ৩৮ থেকে ৪০, শ্রীলংকায় ৪৫, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫, ইতালিতে ৩৫ বছর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩৮, ফ্রান্সে ৪০, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও সুইডেনে যথাক্রমে সর্বনিম্ন ১৮, ১৮ ও ১৬ এবং সর্বোচ্চ অবসরের আগের দিন পর্যন্ত। আফ্রিকায় চাকরি প্রার্থীদের বয়স বাংলাদেশের সরকারি চাকরির মতো সীমাবদ্ধ নেই। অর্থাৎ চাকরি প্রার্থীদের বয়স ২১ হলে এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে যেকোনো বয়সে আবেদন করা যায়।

রাশিয়া, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যে যোগ্যতা থাকলে অবসরের আগের দিনও যে কেউ সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল গভর্নমেন্ট ও স্টেট গভর্নমেন্ট উভয় ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স কমপক্ষে ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫৯ বছর। কানাডার ফেডারেল পাবলিক সার্ভিসের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে, তবে ৬৫ বছরের উর্ধ্বে নয় এবং সিভিল সার্ভিসে সর্বনিম্ন ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৬০ বছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদন করা যায়।

অষ্টম জাতীয় সংসদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২১তম বৈঠকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে নবম জাতীয় সংসদের ১৪তম বৈঠকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রস্তাব গৃহিত হয়। এরপর আর কোনো কার্যক্রম নেই।



মন্তব্য চালু নেই