চর্বি জাতীয় খাবার খেলেই শরীরের চর্বি বৃদ্ধি পায় না

উচ্চমাত্রার চর্বি যুক্ত খাবার খেলে তা শরীরের চর্বির মাত্রা বৃদ্ধি করবে এমনটা ভাবাই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু নতুন গবেষণায় একে ভুল বলা হয়েছে। বরং সেখানে দেখানো হয়েছে যে, নির্দিষ্ট কিছু চর্বি জাতীয় খাবার খেলে এর বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে।

গবেষণাটির মতে, গবেষণায় অংশ গ্রহণকারী নারী এবং পুরুষদের মধ্যে যারা উচ্চমাত্রার চর্বি জাতীয় খাবার (অলিভ অয়েল ও বাদাম সমৃদ্ধ খাবার) খান তাদের কোমরের মাপ অন্য যে দলটি চর্বি গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে দিয়েছিলো তাদের চেয়ে অনেক কমে গিয়েছিলো বলে জানা যায়।

মেডিটেরানিয়ান ডায়েটে (ভূমধ্যসাগরের পাশের এলাকায় যারা বাস করেন তাদের খাদ্যাভ্যাস) প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া খাবারের প্রতি প্রাধান্য দেওয়া হয়, যেখানে অস্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাবার এবং লাল মাংস খাওয়ার পরিমাণ সীমিত রাখা হয়। বিভিন্ন ধরণের গবেষণায় এ ধরণের খাবার খাওয়াকে উপকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে।

স্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাবার এবং উদ্ভিজ প্রোটিন হৃদরোগ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। এই দুটি রোগ স্থূলতার সমস্যার সাথে সম্পর্কিত।

স্পেনের বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন ফিজিশিয়ান এবং গবেষণার প্রধান লেখক ডা. র‍্যামন এস্ট্রাচ বলেন, “স্থূলকায় মানুষেরা এক্সটা ভার্জিন অলিভ অয়েল এবং বাদামের মত উদ্ভিজ চর্বি জাতীয় খাবার খেতে অনীহা প্রকাশ করেন, কারণ তারা বিশ্বাস করেন যে এ ধরণের খাবার ওজন বৃদ্ধি করে”।

নতুন গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, মেডিটেরানিয়ান বা ভূমধ্যসাগরীয় ডায়েটের মত চর্বি সমৃদ্ধ খাবার এবং শাকসবজি ওজন বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করেনা।

গবেষণায় গবেষকেরা PREDIMED Trial এ অংশগ্রহণকারীদের উপাত্তের উপর আলোকপাত করেন, পাঁচ বছরের এই গবেষণাটি স্পেনে হয়, এতে হৃদস্বাস্থ্যের উপর মেডিটেরিয়ান ডায়েটের প্রভাব লক্ষ করা হয়। এই গবেষণায় ৭,৫০০ পূর্ণ বয়স্ক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এদের অধিকাংশই ছিলেন স্থূলকায় বা অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী এবং তাদের প্রত্যেকেরই টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের অন্তত ৩টি রিস্ক ফ্যাক্টর ছিলো।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের তিন ধরণের ডায়েট অনুসরণের কথা বলা হয় : মেডিটেরানিয়ান ডায়েটের সাথে ৪ টেবিলচামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল প্রতিদিন খেতে বলা হয়, মেডিটেরানিয়ান ডায়েটের সাথে প্রতি সপ্তাহে তিন মুঠো (৩০গ্রাম) বাদাম খেতে বলা হয়, নিয়ন্ত্রিত ডায়েট বা অংশগ্রহণকারীদের চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

অলিভ অয়েল এবং বাদামে উচ্চমাত্রার ফ্যাট থাকে। কিন্তু এই ফ্যাট মনোস্যাচুরেটেড ধরণের যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলেই মনে করা হয় মাংস ও পনিরের মত প্রাণীজ খাবারে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাটের তুলনায়।

গবেষকেরা ৫ বছর পরে দেখেন যে, যে দলটির অংশগ্রহণকারীরা অলিভ অয়েল গ্রহণ করেছিলো তাদের ওজন নিয়ন্ত্রিত ডায়েট গ্রুপটির তুলনায় খুব কম পরিমাণে কমলেও তা পরিসংখ্যানগতভাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ছিলো। অলিভ অয়েলের গ্রুপটির সদস্যদের ওজন নিয়ন্ত্রিত গ্রুপের তুলনায় গড়ে ১ পাউন্ড (০.৪ কিলোগ্রামের) এর অধিক কমে।

নিয়ন্ত্রিত ডায়েট গ্রুপের তুলনায় বাদাম গ্রহণকারী গ্রুপটির অংশগ্রহণকারীদের ওজন কম পরিমাণে কমে। যদিও অলিভ অয়েল ও বাদাম গ্রহণকারী উভয় দলের মধ্যে পরিসংখ্যানগত তাৎপর্যপূর্ণ কোন পার্থক্য দেখা যায় না।

গবেষণা মতে, অলিভ অয়েল এবং বাদাম গ্রহণকারী উভয় দলটির অংশগ্রহণকারীদের কোমরের মাপ সামান্য কমে নিয়ন্ত্রিত গ্রুপের তুলনায়।

এস্ট্রাচ লাইভ সাইন্স কে বলেন, মূল যে বিষয়টি পাওয়া গেছে তা হচ্ছে দুটি ডায়েটেই চর্বির পরিমাণ বেশী থাকা সত্ত্বেও কোমরের মাপ বাড়তে সাহায্য করে না।

অলিভ অয়েল এবং বাদাম গ্রহণকারী দলটির ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা কমাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। গবেষণার শেষের দিকে উভয় দলটিরই ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা গড়ে কমে গিয়েছিলো প্রথম যখন গবেষণাটি শুরু হয় তার তুলনায়। গবেষকেরা তাদের গবেষণাপত্রে লেখেন যে, ফ্যাট জাতীয় খাবারের পেট ভরা রাখার ক্ষমতার কারণেই এমনটা হতে পারে।

এস্ট্রাস বলেন, শরীরের নির্দিষ্ট ওজন বজায় রাখার জন্য ক্যালরি গ্রহণ এবং ক্যালরি পোড়ানোর মধ্যে ভারসাম্য রাখা জরুরী। কিন্তু এটিও লক্ষ্য করা গেছে যে, অ্যানিমেল ফ্যাটের তুলনায় ভেজিটেবল ফ্যাট ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রভাব ফেলে।

যদিও গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা অধিক ওজনের বয়স্ক মানুষ ছিলেন, এস্ট্রাস বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে মেডিটেরিয়ান ডায়েট ওজন এবং কোমরের মাপের ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে যেকোন বয়স এবং যেকোন ওজনের মানুষের ক্ষেত্রেই।

উদ্ভিজ ফ্যাট কোমরের মাপ বৃদ্ধিতে সাহায্য করেনা বলে পরামর্শ দেয়া হয়েছে এমন গবেষণা এটাই প্রথম নয়। “অনেক বেশি চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া মানুষের ওজনের পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত নয় বলে এই পর্যবেক্ষণীয় গবেষণায় পরামর্শ দেয়া হয়েছে” – এমনটাই বলেন টাফট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রাইডম্যান স্কুল অফ নিউট্রিশন সাইন্স এন্ড পলিসি বিভাগের ডিন এবং কার্ডিওলজিস্ট ডা. দারিউশ মোজাফফারিয়ান, যিনি এই গবেষণার সাথে যুক্ত ছিলেন না। মোজাফফারিয়ান একটি সম্পাদকীয় লেখেন যা গবেষণা পত্রটির পাশাপাশি প্রকাশিত হয়।

মোজাফফারিয়ান লাইভ সাইন্সকে বলেন, চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়ার বিষয়ে চিন্তা না করে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি অধিক মনোযোগ দেয়া উচিৎ। গবেষণাটি দ্যা ল্যান্সেট ডায়াবেটিস এন্ড এন্ডোক্রাইনোলজি নামক সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়।



মন্তব্য চালু নেই