চবির তিন ছাত্রী হলে জামায়াতের বইয়ের স্তুপ

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ প্রচারে বিভিন্ন বইয়ের স্তুপ পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রী হলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের লাইব্রেরি থেকে জামায়াতের শতাধিক বই উদ্ধারের কয়েকদিন যেতে না যেতেই এই ঘটনা ঘটলো।

উদ্ধার হওয়া এসব বইয়ের একটি বড় অংশই লিখেছেন পাকিস্তানে জামায়াতের প্রতিষ্ঠানা বিতর্কিত ইসলামী চিন্তাবিদ সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী। তার দর্শন নিয়ে ইসলামী চিন্তাবিদদের মধ্যে শুরু থেকেই আপত্তি ছিল। তাকে ইসলামবিরোধীদের এজেন্ট দাবি করে তার বিচারের দাবিতে আন্দোলনও হয়েছে পাকিস্তান আমলে।

মওদুদী ছাড়াও মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর লেখা বিপুল পরিমাণ বই উদ্ধার হয়েছে ছাত্রী হল থেকে।

যুদ্ধাপরাধীদের কোনো বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ছাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে রাত আটটার দিকে প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্যদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা, খালেদা জিয়া ও শামসুন্নাহার হলে তল্লাশি চালায় পুলিশ। দুই ঘণ্টা ধরে চলে তল্লাশি চালিয়ে ১০ বস্তা বই উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা হয় দুটি মোবাইল সেটও। তবে অভিযানে কাউকে আটক পারেনি পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে হল তিনটিতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। অভিযানে কাউকে আটক করা না হলেও বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের গতিবিধিও নজরদারিতে রয়েছে। ভবিষ্যতেও এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

অভিযানে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের নারী শাখা ইসলামী ছাত্রী সংস্থা নিয়ন্ত্রিত কক্ষগুলো থেকে এসব বই উদ্ধার করা হয়।

হলের সাধারণ ছাত্রীদের অভিযোগ, ছাত্রী সংস্থার কর্মীরা প্রায়ই এসব বই ছাত্রীদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাদের ছাত্রী সংস্থায় ভেড়ানোর চেষ্টা করেন।

গত দুইদিন আগেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের লাইব্রেরি থেকে স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ ও দর্শন প্রচারে ব্যবহার করা বিপুল পরিমাণ বই উদ্ধার হয়েছিল। উদ্ধার করা হয়েছিল জামায়াতের পক্ষে প্রচার চালাতে তৈরি করা বিভিন্ন সিডি ও নানা ধরনের লিফলেট।

আগের সপ্তাহেও একটি মসজিদ থেকে জামায়াত-শিবিরের পক্ষের দুই বস্তা বই জব্দ করা হয়েছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছিলেন।

আশির দশকের মাঝামাঝিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের আধিপত্য শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে জামায়াতপন্থিদের সংখ্যাও এরপর থেকেই বাড়তে থাকে। শিবিরের শীর্ষ নেতাদের একটি বড় অংশই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা ছিলেন। সরকার নানা সময় চেষ্টা করেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-শিবিরের প্রভাব কমাতে পারেনি।

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ‘মাস্টারমাইন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত নুরুল ইসলাম মারজান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথী ছিলেন। এই তথ্য জানাজানি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অভিযানে নামে প্রশাসন।



মন্তব্য চালু নেই