ঘোড়ার সঙ্গে যৌনমিলন করে গর্ববতী, পরিণামে ঘোড়ার মত সন্তান জন্ম দিলো তরুণী?

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিন-এ সে দিন ছিল খ্রিস্ট ধর্মের এক অনুষ্ঠান। বেনিন-স্যাপেল রোডে অবস্থিত একটি চার্চে চলছিল সমবেত প্রার্থনা। হঠাৎই ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ানো এক তরুণী চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেন। থেমে যায় প্রার্থনা, সকলের চোখ গিয়ে পড়ে মেয়েটির দিকে। দেখা যায়, মেয়েটির পোশাক ভিজে গিয়েছে রক্তে। দুই পা বেয়ে নেমে আসছে রক্তধারা। আর্তনাদ করতে করতে শুয়ে পড়েন মেয়েটি। উপস্থিত মহিলারা বুঝে যান, মেয়েটি প্রসববেদনায় কাতর। কাপড় দিয়ে ঘিরে একটি আপতকালীন প্রসূতিকক্ষ তৈরি করা হয়, নেওয়া হয় সন্তানপ্রসবের প্রস্তুতি। কিন্তু সকলে আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে যান, যখন দেখেন, তরুণীর শরীর থেকে যে জীবটি বেরিয়ে আসছে, তা কোনও মানবসন্তান নয়, বরং একটি ঘোড়া।

জীবটি বেরিয়ে আসার পরে দেখা যায়, ঠিক ঘোড়াও নয় সেটি। বরং তার শরীরে কিছুটা যেন মানুষেরও আদল রয়েছে। বলা যেতে পারে, এক অশ্বমনুষ্য জন্ম নিয়েছে তরুণীর গর্ভ থেকে।

চার্চের ধর্মযাজক সিলভা ওয়েলথ বলছেন, ‘প্রার্থনা শুরু করার সময়েই আমি ঈশ্বরের কাছ থেকে বার্তা পেয়েছিলাম যে, চার্চের মধ্যে সমবেত ভিড়ে এমন কেউ রয়েছেন, তিনি গর্ভবতী। কিন্তু তাঁর গর্ভে যে এমন বিচিত্র সন্তান রয়েছে, তা আমার কল্পনাতেও ছিল না। সবই ঈশ্বরের ইচ্ছা।’

কিন্তু এক জন মানবীর গর্ভে কী ভাবে আসতে পারে এমন অশ্বরূপী মনুষ্য! সংবাদমাধ্যমের তরফে ওই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ১১ বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়। কিন্তু তাঁর স্বামী পুরুষত্বহীন হওয়ার কারণে তিনি মা হতে পারেননি। কয়েক মাস আগে নিজের শরীরের খিদে মেটাতে একটি আস্তাবলে ঢুকে এক ঘোড়ার সঙ্গে তিনি মিলিত হন। তার কিছু দিন পর থেকেই তাঁর শরীরে গর্ভাবস্থার চিহ্ন ফুটে উঠতে থাকে। কিন্তু তিনি ভাবতে পারেননি যে, এমন বিচিত্র জীব জন্ম নেবে তাঁর শরীর থেকে। সেই আজব অশ্বমনুষ্যটি অবশ্য জন্মের ঘন্টা দু’য়েক পরেই মারা যায়। মৃত্যুর পরে অবশ্য মৃত প্রাণীটির একটি ছবি তুলে নেন সাংবাদিকরা।

তরুণীর গর্ভ থেকে ঘোড়ামুখো মানুষের জন্ম নেওয়ার এই খবর বিগত কয়েক বছর ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে ইন্টারনেটে। খবরটি প্রথম প্রচারিত হয় নাইজেরিয়ার একাধিক সংবাদমাধ্যম মারফত। তার পর ক্রমে ক্রমে সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ে এই বিচিত্র খবর। সঙ্গে প্রচারিত হতে থাকে উপরের ছবিটি। প্রকৃতির লীলায় সবই সম্ভব— এমন ধারণা থেকে অনেকেই ঘটনাটিকে সত্যি বলে ধরেও নিয়েছিলেন। কিন্তু নেটিজেনদের সকলেই যে-কোনও খবরকে এমন চোখ বুজে সত্যি বলে মেনে নিতে রাজি নন। তাঁরা নেমে পড়েন ঘটনার সত্যতা জানার কাজে।
প্রথমেই তাঁদের খটকা লাগে একটি বিষয়ে— মেয়েটির নাম কিংবা তিনি কোথায় থাকেন, তা কোথাও প্রকাশ করা হচ্ছে না কেন! নাইজেরিয়ান সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, মেয়েটির সম্মানরক্ষার্থেই তাঁর নাম-পরিচয় গোপন রাখা হল। সে না হয় হল, কিন্তু কোনও মানবীর গর্ভে কি আদৌ কোনও অশ্বসন্তান জন্ম নিতে পারে? এ বিষয়ে ডাক্তারদের প্রশ্ন করা হলে তাঁরা জানান, কোনও নারী যদি কোনও ঘোড়ার সঙ্গে মিলিতও হন, তা হলেও তাঁর শরীরে ঘোড়ার বীর্য কোনও কাজ করবে না। গর্ভাবস্থা থেকেই একটি মানবশিশুর শরীরে থাকে মোট ৪৬টি ক্রোমোজোম। তার মধ্যে ২৩টি আসে তার মায়ের ডিম্বাণু থেকে, এবং ২৩টি পিতার শুক্রাণু থেকে।

সেই জায়গায় একটি অশ্বশিশুর দেহে থাকে মোট ৬৪টি ক্রোমোজোম। তার মধ্যে ৩২টি আসে তার পিতার শুক্রাণু থেকে। কাজেই কোনও নারী যদি কোনও অশ্বের সঙ্গে মিলিত হন, তা হলে তাঁর গর্ভে মোট ৫৫টি ক্রোমোজোমের সহাবস্থান ঘটে। এ থেকে কোনও প্রাণীই জন্ম নেওয়া সম্ভব নয়। কাজেই কোনও মানবী অশ্বের বীর্য শরীরে ধারণ করলেও তাঁর পক্ষে গর্ভবতী হওয়া অসম্ভব।

তা হলে এই খবরের কতটুকু সত্যি? উত্তর সহজ— একটুও না। বিচিত্র জীবের ছবিটি ফোটোশপের কারসাজি। আর বাকি গল্পটুকু একেবারেই বানানো। এই ভাবেই তৈরি হয়েছে নেট দুনিয়ার একটি ভাইরাল ভুয়ো খবর।



মন্তব্য চালু নেই