ঘুষ না দিলেই স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আনফিট!

হাসান মিয়াজি। বয়স ২৫ বছর। চাকরি করতে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে যাওয়ার অভিপ্রায়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয়। সেই অনুযায়ী সম্প্রতি গামকা মনোনীত রাজধানীর কুড়িল প্রগতি সরণী কাজিবাড়ির আইআইআরও মেডিকেল চেকআপ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করালে তার টিপিএইচএ (ট্রিপোনেমা পাল্লিডাম হেমাগগ্লোটিনেশন) অর্থাৎ সিফিলিস রোগ ধরা পড়ে।

সন্দেহ হলে সেনাবাহিনী পরিচালিত আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি ও আন্তজার্তিক উদারাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এর মলিকুলার অ্যান্ড সেরোডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে আবারো টিপিএইচএ পরীক্ষা করান হাসান। পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠান দুটি থেকে টিপিএইচ নেগেটিভ রিপোর্ট আসে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে চাকরি নিয়ে মধ্যপ্রাচের দেশগুলোতে যেতে হলে প্রত্যেককে জিসিসি অ্যাপরোভড মেডিকেল সেন্টারস্ অ্যাসোসিয়েশন (জিএএমসিএ/গামকা) মনোনীত মেডিকেল সেন্টার থেকে বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয়। তবে গামকা মনোনিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষা করাতে গিয়ে হাসানের মত শত শত যুবক প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রতারণার শিকার হাসান মিয়াজি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পরীক্ষা করাতে যাওয়ার আগেই তিনি প্রবাসী এক বন্ধুর কাছে শুনেছিলেন, ঘুষ না দিলে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ফিট হলেও আনফিট রিপোর্ট দেয়া হয়। ওই বন্ধুও তিনবার আনফিট রিপোর্ট পাওয়ার পর চতুর্থবার ঘুষ দিয়ে ফিট রিপোর্ট পেয়ে সৌদিআরব গেছেন।

হাসানের প্রশ্ন, ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর ল্যাবরেটরির পরীক্ষার মান কি আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি ও আন্তজার্তিক উদারাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এর চেয়ে উন্নত।

তবে, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা অভিযোগ অস্বীকার করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘তার ল্যাবরেটরির পরীক্ষার রিপোর্ট শতভাগ সঠিক’।

বাংলাদেশে গামকা মনোনীত ২৬টি মেডিকেল সেন্টার রয়েছে। এগুলো হলো- আল ফালাহ মেডিকম ক্লিনিক প্রাইভেট লিমিটেড, আল গফিলি মেডিকেল সেন্টার লিমিটেড, আল হুমায়রা হেলথ সেন্টার লিমিটেড, আল মদিনা মেডিকেল সার্ভিসেস, আল রিয়াদ মেডিকেল চেক আপ, অ্যারাবিয়ান মেডিকেল সেন্টার, চাঁদসি মেডিকেল সেন্টার, ফেয়ারওয়ে মেডিকেল সেন্টার লিমিটেড, গ্রীণ ক্রিসেন্ট হেলথ সর্ভিসেস, গালফ মেডিকেল সেন্টার, গুলশান মেডিকেয়ার, হেলথ কেয়ার সেন্টার, ইবনে সিনা মেডিকেল চেকআপ ইউনিট।

আইআইআরও মেডিকেল সেন্টার, ইন্টারন্যাশনাল হেলথ সেন্টার লিমিটেড, লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড, মক্কা মেডিকেল সেন্টার, মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস সেন্টার লিমিটেড, মাস্কাট মেডিকেল সেন্টার, নাফা মেডিকেল সেন্টার, ন্যাশনাল মেডিকেল সেন্টার লিমিটেড, নোভা মেডিকেল সেন্টার লিমিটেড, পালস্ মেডিকেল সেন্টার লিমিটেড, পুষ্প ক্লিনিক, সায়মন মেডিকেল সেন্টার লিমিটেড ও সউদি বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড।

হাসান মিয়াজির টিপিএইচএ পজেটিভ রিপোর্ট প্রসঙ্গে আইআইআরও মেডিকেল চেকআপ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক আ ফ ম আবদুল মোতালেবের কাছে চানতে চাইলে তার প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরির রিপোর্টই শতভাগ সঠিক দাবি করেন।

তিনি আরো জানান, কোনো রোগীকে একবার পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেন না। ল্যাবরেটরিতে একাধিকবার পরীক্ষার পর নিশ্চিত হয়ে রিপোর্ট প্রদান করা হয়।

আইসিডিডিআরবি ও আমর্ড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের ল্যাবরেটরির রিপোর্টে টিপিএইচএ নেগেটিভ এসেছে জানালে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে রোগীকে সঙ্গে নিয়ে ল্যাবরেটরিতে আসার জন্য অনুরোধ জানান.জাগোনিউজ



মন্তব্য চালু নেই