‘ঘুষ দিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করা সম্ভব নয়’
পুলিশে এমন কিছু কর্মকর্তা আছেন বলে কথিত আছে, যারা ৫০/১০০ টাকাও ঘুষ নেন। পুলিশ সম্পর্কে এ রকম ধারণা রয়েছে অনেকের- ‘ঘুষ দিলেই পুলিশকে ম্যানেজ করা সম্ভব’।
কিন্তু পুলিশে এমন সৎ কর্মকর্তাও রয়েছেন, যারা কোটি টাকার ঘুষের অফারও ফিরিয়ে দিতে পারেন অনায়াসে। কোটি টাকার লোভ সংবরণ করে দেশের স্বার্থে নিজের পেশাগত দায়িত্বকেই প্রাধান্য দেন।
১ কোটি টাকার ঘুষের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণ উদ্ধার করে এমনই এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সদরঘাট থানার এসআই আনোয়ার হোসেন।
প্রচলিত ধারণা পাল্টে দিয়ে আনোয়ার দেখিয়ে দিলেন, ‘ঘুষ দিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করা সম্ভব নয়।’ পুলিশ বাহিনীতে সততার এমন উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করে সমগ্র চট্টগ্রামে এখন তিনি আলোচিত। আনোয়ারের সততায় গৌরবান্বিত চট্টগ্রামে পুরো পুলিশ বাহিনীও।
ডেটলাইন ৮ এপ্রিল রাত ১১টা : চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থানার আনুমাঝির ঘাট নামক এলাকায় এসি মেলা নামে একটি ইলেকট্রনিকস পণ্যের গোডাউন থেকে ইলেকট্রনিকস পণ্যের আড়ালে বিপুল পরিমাণ চোরাচালান পণ্য পাচার হওয়ার গোপন সংবাদ পান সদরঘাট থানার এসআই আনোয়ার হোসেন।
খবর পেয়েই তিনি এসি মেলার গোডাউনে গিয়ে কয়েক কার্টন পণ্য একটি প্রাইভেটকারে তুলতে দেখেই সেগুলো তল্লাশির করার চেষ্টা করেন। এ সময় গোডাউনের দুই কর্মী এসআই আনোয়ারকে বোঝানোর চেষ্টা করেন কার্টনে ইলেকট্রনিকস পণ্য। কিন্তু আনোয়ার কর্মচারীদের কথায় কর্ণপাত না করে তল্লাশি চালানোর প্রস্তুতি নেন।
এদিকে গোডাউনের দুই কর্মচারী পুলিশকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এসি মেলার মালিককে ফোন দিয়ে এসআই আনোয়ারের কাছে দেন। ফোন ধরেই এসি মেলার মালিক এসআই আনোয়ারকে সমঝোতার প্রস্তাব দেন। কার্টন তল্লাশি না করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার বিনিময়ে ১ কোটি টাকা ঘুষ অফার করেন আনোয়ার হোসেনকে।
এসি মেলার মালিক আনোয়ার হোসেনকে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‘আপনি এখানে কোনো কার্টন তল্লাশি না করে ফিরে গেলে আপনাকে নগদ ১ কোটি টাকা দেওয়া হবে।’ কোটি কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব পেয়ে এসআই আনোয়ার নিশ্চিত হন, এখানে অনেক বেশি টাকা মূল্যের চোরাচালান পণ্য আছে। তিনি এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনারকে ঘটনা অবহিত করেন।
বড় অঙ্কের এই ঘুষের লোভে আকৃষ্ট না হয়ে এসআই আনোয়ার হোসেন তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ঘটনা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সিএমপি কমিশনারের নির্দেশে গোডাউন ঘিরে ফেলে পুলিশ। এরপর রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে প্রায় ২০ কেজি ওজনের সোনার বার ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
আলোচিত এসআই আনোয়ার : কোটি টাকার অফার ফিরিয়ে দিয়ে ২০ কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণ উদ্ধারের পর সিএমপিতে এখন আলোচিত আনোয়ার। তার সততায় মুগ্ধ হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তাকে নিজ কার্যালয়ে ডাকেন সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল মন্ডল। এ সময় পুলিশ কমিশনার আনোয়ারের প্রশংসা করে তাকে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত করার ঘোষণা দেন।
সততার এ নজির স্থাপনকারী এসআই আনোয়ার হোসেনের বাড়ি কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার আবিদপুর গ্রামে। ১৯৯৮ সালে এসআই পদে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন আনোয়ার হোসেন। এক পুত্র ও এক কন্যাসন্তানের জনক আনোয়ার গত মাসে ওমরা হজ পালন করে ফিরেছেন। সদরঘাট থানায় দায়িত্ব পালনকালে তিনি এই থানার একজন সৎ, নিষ্ঠাবান পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত।
এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি দেশ সেবার ব্রত নিয়ে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেছি। পুলিশের চাকরির দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের অংশ হিসেবেই আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সৎ অবস্থানে থেকে পালন করার চেষ্টা করছি।’
মন্তব্য চালু নেই