গ্রীষ্ম ও বসন্তে সন্তান জন্মদানে আগ্রহী থাকে মায়েরা

সন্তান জন্মদানের জন্য উত্তম মৌসুম হিসেবে গ্রীষ্ম এবং বসন্তকে বেছে নেন মায়েরা। এ দুটি ঋতুকে সামনে রেখেই সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করেন তারা। সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক কোটি শিশুর জন্মের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে একদল গবেষক। এতে দেখা যায়, বছরের নভেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে শিশু জন্মের হার খুবই কম। আর জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ হার সবচেয়ে বেশি।

কম বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, শীতপ্রবণ এলাকাগুলোতে বছরের বছরের প্রথমার্ধে সন্তান জন্মদানকে পছন্দ করেন তারা। এই সময়ে ওই অঞ্চলগুলোতে শীত থাকে কম। এ কারণে শিশু সবচেয়ে বেশি সুস্থ থাকে। আবার গ্রীষ্মপ্রধান এলাকাগুলোতে দেখা যায়, ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সন্তান জন্মদানের ঘটনা ঘটে। আর মে থেকে আগস্টের মধ্যে সন্তান জন্ম নেয়ার হার থাকে কম। কারণ সেখানে মে থেকে আগস্টের মধ্যে শীত থাকে বেশি।

’চুজিং সিজন অব বার্থ: দ্য রোল অব বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড ইকোনোমিক কন্সট্রেইন্টস’ শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি তৈরি করেছে যুক্তরাজ্য এবং চিলির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এটি ব্রিটিশ রয়্যাল ইকোনোমিক সোসাইটি’র বাৎসরিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়।

প্রকল্পটির সহ-গবেষক অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ক্লিমেন্ট কুইনতানা ডোমেক বলেন, ‘আমাদের গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রথমবার সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে উত্তম মৌসুম হিসেবে বসন্ত এবং গ্রীষ্মকে বেঁছে নেন মায়েরা এবং এটা করার জন্যই চেষ্টা করেন তারা।’

এছাড়া যুক্তরাজ্যের সরকারি শিশুকেন্দ্রের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে জন্ম নেয়া শিশুরা শীতের সময়ে জন্ম নেয়া ‍শিশুদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি লম্বা হয় এবং তাদের দেহের হাড়ও লম্বা হয়। গর্ভকালীন সময়ে ভিটামিন ডি এর মাত্রার মধ্যে তারতম্য হওয়ার কারণে এমনটা হয় বলে মনে করা হয়। কারণ গ্রীষ্মের মৌসুমে সূর্যের উপস্থিতি বেশি থাকায় তা থেকে অধিক পরিমাণ ভিটামিন ডি নিঃসৃত হয়।

আবার যেসব শিশু শরৎ এবং শীতে জন্ম নেয় তারা খাদ্য সংক্রান্ত এলার্জিতে বেশি ভোগে। তাছাড়া শরতে জন্ম নেয়া শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট বেশি দেখা যায়। তবে এর কোনো কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। একটি তত্ত্বমতে, শিশুদের দেহে এলর্জির সংক্রমণ বেশি ঘটে। যেহেতু শরৎ এবং শীতকালে ঘরের ভেতর ধূলা বেশি জমে এবং ঘরবাড়ি স্যাতস্যাতে থাকে তাই এগুলো থেকে ছোট ছোট পরজীবী ব্যাকটেরিয়া জন্মে নেয়। এগুলোই শিশুদের দেহকে আক্রান্ত করে। তবে গ্রীষ্মের মৌসুমে ঘরবাড়ি স্যাতস্যাতে থাকে না তাই ঘরে পরজীবী ব্যাকটেরিয়াও জন্ম নিতে পারে না।

গবেষণায় দেখা যায়, সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে বেশি সচেতন থাকে কম বয়সী নারীরা। তবে বয়স্ক নারীদের মধ্যেও যারা প্রথমবারের মতো মা হতে যান তাদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায় না। এমনকি ৪০ বা তার চেয়ে বেশি বয়সের নারীরাও প্রথমবার মা হওয়ার ক্ষেত্রে শীতের ঠাণ্ডা আবহাওয়ার চাইতে গ্রীষ্মের গরম আবহাওয়াকে বেঁছে নেন।

টেস্ট টিউব বেবি বা অন্য কোনো কৃত্রিম পদ্ধতিতে সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সন্তান জন্ম দেয়ার হার সবচেয়ে কম দেখা যায় ডিসেম্বরে। তবে নারীদের চাকরিও তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলেও গবেষণায় দেখা যায়। যেসব নারী শিক্ষাক্ষেত্রে চাকরিতে নিয়োজিত তারা বসন্ত এবং গ্রীষ্মে বেশি ছুটি পায় বলে এই সময়ে সন্তান ধারণ পছন্দ করে।



মন্তব্য চালু নেই