গো-মাংস নিষিদ্ধে গ্যারাকলে ভারত
পলাশ, বৃহত গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের সঞ্জয় গান্ধী জাতীয় উদ্যানের সবচেয়ে বড় বাঘের নাম। খাঁচার ভেতর থেকে থাবা আর হুংকার দিয়ে প্রতিনিয়ত নিজের অস্তিত্বকে জানান দিয়ে যাচ্ছে পলাশ। প্রতিদিন হাজার খানেক মানুষ তাকে দেখতে আসে, তাই পলাশের একটু অহংকার হতেই পারে। কখনও দর্শককে পশ্চাদ্দেশ দেখিয়ে আবার কখনও বা লেজ নাড়িয়ে এই অহংকারের প্রকাশ ঘটায় সে। কিন্তু সম্প্রতি পলাশ আর আগের মতো আচরণ করে না। সারাদিন লেজ গুটিয়ে খাঁচার ভেতর থেকে সঞ্জয় গান্ধীর মুর্তির দিকে তাকিয়ে থাকে। কারণ এই সঞ্জয় গান্ধীর পরিবারের এক সদস্যের প্ররোচনাতেই আজ পলাশের মতো ভারতের সব খাঁচার বাঘদের করুণ অবস্থা। আগে যেখানে প্রতিদিন খাবারের জন্য ১৫ কেজি গো-মাংস মিলতো তাদের, হঠাৎ করেই সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশ বিপাকে তারা। কিন্তু হঠাৎ কেন বন্ধ হলো গো-মাংস।
গত সাধারণ নির্বাচনে ভারতে গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় আসে হিন্দু কট্টরবাদী দল বিজেপি। দলটি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেশ কিছু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করে। বিভিন্নস্থানে খ্রিস্টান-মুসলিমদের ধরে ধরে ‘ঘর ওয়াপসি’ নামে হিন্দু করা হচ্ছে। আবার পাঠ্যপুস্তকে বাধ্যতামূলক কায়দায় অনেক মিথ ঢোকানো হচ্ছে বাস্তব সত্যের আঙ্গিকে। তেমনি এক পর্যায়ে বিজেপির অঙ্গ সংগঠন বজরং দল ভারতের বিভিন্ন স্থানে গো-মাংষ নিষিদ্ধ করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে হরিয়ানাসহ বেশ কয়েকটি প্রদেশে আনুষ্ঠানিকভাবেই গো-মাংস নিষিদ্ধ হয়ে যায়। শেষমেষ, কেন্দ্রিয় সরকার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন যে, খুব দ্রুতই গোটা ভারতে গো-মাংষ নিষিদ্ধ করা হবে।
শুধু পলাশ নয়, তার সহখাঁচা বন্ধু আরও আট বাঘ, তিন সিংহ এবং ১৪ লিওপার্ড(চিতাবাঘ) অভূক্ত অবস্থায় আছে। চিড়িয়াখানার তিন কর্মী দিনরাত এক করে মুরগী খাওয়ানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মুরগীর দিকে মুখ ফিরেও তাকাচ্ছে না তারা। প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘ-সিংহ শ্রেনীর প্রাণীরা মুরগী খেতে অভ্যস্ত নয়, তারা তাদের শারীরিক শক্তি মেটাতে সক্ষম এমন প্রাণীর মাংস খেতেই পছন্দ করে। এটা এক হিসেবে খাদ্যশৃঙ্ক্ষলের অংশ।
ভারতের মহারাষ্ট্রের কট্টরপন্থী হিন্দু সরকার তাদের প্রদেশে সম্পূর্ণভাবে গো-মাংস নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদী পার্টির এই সিদ্ধান্তের ফলে যেমন হিন্দু জনগোষ্ঠিকে সমস্যায় পরতে হচ্ছে তেমনি মুসলিমদেরও তীব্র সমস্যায় পরতে হচ্ছে। যারা এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গরু জবাই করবে অথবা গো-মাংস ভক্ষণ করতে তাদের সর্বনিম্ন পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেতে হতে পারে। যারা আজ এই কানুনগুলো তৈরি করেছে তারাই কিন্তু চা-ওয়ালা নরেন্দ্র মোদিকে সমর্থন-অর্থ এবং মদদ দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে তাদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য। তাই ভারতীয় জনতা পার্টি যতই বলুক না কেন তারা একটি সেক্যুলার ভারত নির্মানের চেষ্টা করছেন, তা যে মোটেও হবে না তার প্রমাণ এইসব কানুন।
গো-মাংস নিষিদ্ধ করায় মুম্বাইয়ের ধনী শ্রেনিরও কিন্তু বেশ সমস্যায় পরতে হয়েছে। মুম্বাইয়ে এমন অনেক উচ্চগোত্রের হিন্দু পরিবার আছে যারা নিয়ম করেই গো-মাংস খায়। পাশাপাশি গোটা প্রদেশে যতগুলো মাংসের দোকান আছে সেগুলোর বেশিরভাগের মালিকই মুসলিম সম্প্রদায়ের। সরকারের একপক্ষের সিদ্ধান্তের জেরে গত কদিন ধরে তারা ধর্মঘট পালন করছেন। কিন্তু এই ধর্মঘটেও কোনো কাজ হচ্ছে না মহারাষ্ট্রে। অনেক রাজনীতি বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এই ভেবে যে, দীর্ঘদিন পর আবারও সাম্প্রদায়িক চেহারা ভারতে উপস্থিত হতে যাচ্ছে যা অনেকদিনই ধামাচাপা অবস্থায় ছিল।
মন্তব্য চালু নেই