গোলাম আযম মারা গেছেন

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫৪ মিনিটে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পরিচালক ব্রিগেয়িার জেনারেল আব্দুল মজিদ ভুইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাত ১০টা ১০ মিনিটে গোলাম আযম মারা গেছেন। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান।’
তিনি জানান, এখন মরদেহ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। তার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে কি না সে সিদ্ধান্ত দেবে কারা কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের সি-ব্লকের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে যখন বিএসএমএমইউ পরিচালক দাঁড়িয়েছেন তখন গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আল আজিম ভিড় ঠেলে সামনে এসে বলেন, ‘আপনি কি এখন ডেড ডিক্লেয়ার করবেন?’ পরিচালক তখন মাথা নেড়ে বলেন, হ্যাঁ। তখন আজমির চেহারা বিমর্ষ হয়ে যায়। তিনি বলেন, আমি কি থাকতে পারি? তিনি বলেন, না। তখন আজমি মাথা ঘুরিয়ে অন্য দিকে চলে যান।

গোলাম আযমের পিএস আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তাদের জানানো হয়েছে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে গোলাম আযম মারা গেছেন। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি চিকিৎসকরা। হাসপাতালে উপস্থিত গোলাম আজমের মসজিদের খাদেম রেজাউল করিমও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে গোলাম আযমের ভাতিজি জামাই আবু আহমেদ মারুফ বলেন, গোলাম আযম মারা গেছেন। তার ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আজমি তার বেডের পাশে রয়েছেন।
তিনি নিজে লাশ দেখে এসেছেন বলেও জানিয়েছেন।

এর আগে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের প্রিজন সেলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সিসিইউতে নেয়া হয় গোলাম আযমকে। পরে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
জানা গেছে, পরিবারের লোকজন গোলাম আযমের লাইফ সাপোর্ট খুলে দিয়ে বলেছেন। তবে হাসপাতালের কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাইফ সাপোর্ট খুলে মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন চিকিৎসকরা।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেন। ট্রাইবুনালে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৫ ধরনের ৬১টি অভিযোগ আনা হয়। যার সবগুলোই প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
৬১টি অভিযোগের মধ্যে- মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মোট ৬টি, মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনার অভিযোগ ৩টি, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের উসকানি দেয়ার অভিযোগ ২৮টি, মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ২৩টি এবং হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে একটি।
প্রথম ও দ্বিতীয় অভিযোগে ১০ বছর করে ২০ বছর, তৃতীয় অভিযোগে ২০ বছর, চতুর্থ অভিযোগে ২০ বছর, পঞ্চম অভিযোগে ৩০ বছর কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘তিনি (গোলাম আযম) যে অপরাধ করেছেন, তা মৃত্যুদণ্ডতুল্য। কিন্তু তার বয়স বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।’



মন্তব্য চালু নেই