গোপনে চলছে হলমার্কের ৬ কারখানা
সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ছয়টি পোশাক কারখানায় পণ্য উৎপাদন করে মাসে কোটি টাকা আয় করছে হলমার্ক গ্রুপ। সাভারের হেমায়েতপুর শিল্পাঞ্চলে হলমার্ক ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় গোপনে চালু রয়েছে এসব কারখানা।
মাসে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের শর্তে জামিনে মুক্ত হয়ে এসব কারখানায় পুনরায় উৎপাদন শুরু করেছেন হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর আহমেদের স্ত্রী জেসমিন আক্তার। তবে কারখানার আয় থেকে ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করার কোনো উদ্যোগ তিনি নেননি।
সরেজমিন হলমার্ক ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে কর্মচাঞ্চল্য। অটো নিটিং ইন্ডাস্ট্র্রি, লেবেল ও এমব্রয়ডারিসহ ছয়টি কারখানায় চলছে উৎপাদন।
তবে হলমার্কের কারখানা পর্যন্ত যেতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে এই প্রতিবেদককে। ছদ্মবেশে চাকরিপ্রার্থী হয়ে হলমার্ক ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় ঢোকার পর জানা যায় এসব তথ্য।
কারখানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদেরসঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলমার্ক ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকার পশ্চিম প্রান্তের তিনটি অটো নিটিং ইন্ডাস্ট্রিতে গত নভেম্বর মাসে উৎপাদন হয়েছে ৪০০ টন নিট কাপড়। তবে উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করছে নাহলমার্ক। স্থানীয় কয়েকটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বর্তমানে কার্যাদেশ নিচ্ছে এই কারখানাগুলো।
হলমার্ক নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অটো স্ট্রেপ বিভাগের উৎপাদন-ব্যবস্থাপক আতাউর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘হলমার্ক নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তিনটি কারখানায় মোট ৫০টি অটো নিট মেশিন চালু রয়েছে। মেশিনগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির। প্রতিটি মেশিনের রয়েছে গড়ে এক টন নিট কাপড় উৎপাদনের ক্ষমতা।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে কাজ হচ্ছে তা সাব-কন্ট্রাক্টের কাজ। স্থানীয় কিছু শিল্পকারখানা সুতা ও অন্যান্য কাঁচামাল দিয়ে যায়। পরে তাদের ডিজাইন অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করে সরবরাহ করা হয়। টি-শার্টের প্রতি কেজি নিট কাপড় উৎপাদনের জন্য চার্জ নেওয়া হয় ১৫ টাকা। আর পলো কাপড়ের ক্ষেত্রে চার্জ নেওয়া হয় ১৭ টাকা। সেই অনুযায়ী এক টন কাপড়ের উৎপাদন খরচ হিসেবে হলমার্ক পায় ১৫ হাজার টাকারও বেশি। আর এভাবে এসব কারখানা থেকে মাসে কোটি টাকা আয় করছে হলমার্ক গ্রুপ।’
হলমার্ক নিটিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের পাশেই চালু রয়েছে আরো দুটি লেবেল তৈরির কারখানা। তার পাশে চলছে একটি এমব্রয়ডারি কারখানা। হেমায়েতপুর শিল্পাঞ্চলের একেএইচ গ্রুপ, মিতালী গার্মেন্টস লিমিটেড, পলো নিট কম্পোজিট ও জিরানী শিল্পাঞ্চলের হাইপয়েড কম্পোজিট লিমিটেড এবং আরো কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এসব কারখানায় কার্যাদেশ প্রদান করছে।
সোনালী ব্যাংকের রূপসি বাংলা হোটেল শাখা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ গ্রেফতার হন। এরপর ২০১২ সালের ২৫ অক্টোবর হেমায়েতপুর শিল্পাঞ্চলের সব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে হলমার্ক গ্রুপ। এতে এই গ্রুপের বিভিন্ন পোশাক কারখানার প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিকের বেতন-ভাতা আটকে যায়। এত দিনেও হলমার্ক শ্রমিকদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করেনি।
২০১৩ সালের ৪ আগস্ট রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রতি মাসে ১০০ কোটি টাকা জমা দেওয়ার শর্তে ১১ মামলার আসামি হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন আক্তারকে জামিন দেন আদালত। এরপর গ্রুপের বন্ধ কারখানাগুলো একে একে চালু করতে থাকেন তিনি।
হলমার্ক গ্রুপের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চালু করা কারখানা থেকে আয়ের কানাকড়িও সোনালী ব্যাংক বা সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছেন না জেসমিন আক্তার। তিনি নিজের জামিন বহাল রাখা আর জেলে বন্দি স্বামী তানভীর মাহমুদকে জামিনে মুক্ত করার জন্য খরচ করছেন এই অর্থ।
মন্তব্য চালু নেই