গৃহবধূকে প্রকাশ্যে মারধর: ‘পরকীয়ার’ অপবাদ দিয়ে তালাকের কাগজে জোর পূর্বক স্বাক্ষর
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় সালিশ বৈঠকে মনিজা বেগম (২৫) নামের এক বধূকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। মারধরের একপর্যায়ে ‘পরকীয়ার’ অপবাদ দিয়ে তালাকের কাগজে জোর করে তার স্বাক্ষর নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
সালিশ বৈঠকে গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দোলাপাড়া গ্রামে। এনিয়ে হাতীবান্ধা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ হামিদুল ইসলাম (২৫) নামের এক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতারের পর বুধবার সকালে লালমনিরহাট জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
জানা গেছে, ওই গ্রামের সফিয়ারের স্ত্রী মনিজা বেগম সম্প্রতি ঢাকায় গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে। কিন্তু সেখানে থেকে কিছুদিন পর বাড়িতে ফিরলে তার বিরুদ্ধে ‘পরকীয়ার’ অভিযোগ তুলে তাকে আর বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
পরে এনিয়ে মনিজা স্থানীয় গণ্যমান্য বক্তিদের কাছে বিচার চান। গত রোববার (২৬ জুন) স্থানীয় মনছুর আলীর উঠানে স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে সালিশ বৈঠকে বসেন।
সালিশের মধ্যেই ওই গৃহবধূকে প্রকাশ্যে মারধর করেন গৃহবধূর শাশুড়ি বছিরন নেছা (৫০) ও রশিদা খাতুন নামের অপর এক মহিলা। এ সময় কাজী ডেকে গৃহবধূর কাছ থেকে জোর করে তালাকের কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়। পরে আহত গৃহবধূকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মঙ্গলবার রাতে এ নিয়ে হাতীবান্ধায় থানায় নারীসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছে। বুধবার দুপুরে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, নির্যাতনের কারণে শরীরে প্রচণ্ড ব্যাথা নিয়ে কাঁতরাচ্ছেন গৃহবধূ মনিজা বেগম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল গফুরের নির্দেশে তাকে সালিশ বৈঠকে মারধর করা হয়েছে। এ সময় তার সহজ-সরল স্বামী সফিয়ারকেও মারধর করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে যখন মারধর করা হয়, তখন আমার ছয় বছর বয়সের ছেলে মুজাহিদ পাশে ছিল। সে ওইসময় খুব কান্নাকাটি করেছে। তারপরেও ওরা আমাকে পিটিয়ে জখম করে কাজী ডেকে তালাকের কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে। ‘এদিকে ওই গৃহবধূকে মারধরের একটি ভিডিও আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওইদিন সালিশ বৈঠকে স্থানীয় গণ্যমান্য বক্তি ও এলাকাবাসীদের সামনেই গৃহবধূ মনিজা বেগমকে মারধর করে।
মনিজার শাশুড়ি বজিরন নেছা পুত্রবধূকে মারধরের কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সে একজন দুশ্চরিত্রা মহিলা। তাই অন্য কেউ নয়, আমি তাকে শাসন করেছি। ‘বড়খাতা ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। আত্মীয়তার সুবাধে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। তবে আমরা নিষেধ করার পরেও গৃহবধূ মনিজাকে তার শাশুড়ি মারধর করছে।
ওই ইউপি সদস্যর অভিযোগ, ঘটনার সময় তার ছেলে হামিদুল উপস্থিত ছিল না। অথচ পুলিশ তাকেও বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। তালাকের কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার বিষয়ে বড়খাতা ইউনিয়নের কাজী আবুল হাশেম বলেন, উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে সফিয়ার রহমানের বাড়িতে তার স্ত্রী মনিজা বেগমের তালাক নামায় স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাঈম হাসান নয়ন বলেন, হাসপাতালে ভর্তি গৃহবধূ মনিজার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামান সোহেল বলেন, ‘গৃহবধূর চিকিৎসার দেখভাল করার জন্য আমি হাসপাতালে গিয়েছি।’
হাতীবান্ধা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান আনিছ বলেন, এ ঘটনায় ইউপি মেম্বর আবদুল গফুরের ছেলে হামিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করে বুধবার সকালে লালমনিরহাট জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য চালু নেই