‘গুলির শব্দ থেকে ব্যাটের গোলাগুলিতে’
গুলির শব্দ, অভুক্ত জীবন আর অন্ধকার ভবিষ্যৎ- বছর দশেক আগেও পেশোয়ারের এমনই এক উদ্বাস্তু শিবির ছিল ঠিকানা! পাকিস্তান সীমান্তে আজও থেকে গিয়েছে পরিবার। শুধুমাত্র বছর চৌদ্দর কিশোর সেখান থেকে চলে গিয়েছিল কাবুলে। দশ বছর পর সেই কিশোরই হইচই ফেলে দেওয়া আফগানিস্তান ক্রিকেটার জাভেদ আহমেদি।
বিশ্বকাপে যার মারকুটে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে তুলনা চলছে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের। জীবন বলে কিছু ছিল না পেশোয়ারের সেই উদ্বাস্তু শিবিরে। স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিক জীবনযাপনই করতে পারতেন না পেশোয়ারের লোকজন। সে দিনগুলো এখনও মনে রেখেছেন আহমেদি।
বিশ্বকাপের ঝলমলে আসরে দাঁড়িয়েও বলেছেন, ‘পেশোয়ারের উদ্বাস্তু শিবিরেই জন্ম আমার। খুব কঠিন জীবন ছিল ওখানে। ভীষণ দরিদ্র ছিল লোকজন। সেখানেই বেড়ে ওঠা আমার।’ আহমেদির বাবা-মা চাননি ছেলের জীবনও অন্ধকারে ঢেকে যাক। লন্ডন থেকে সেই সময় আহমেদির বড় ভাই তাকে আফগানিস্তানে চলে যেতে বলেন।
‘পাকিস্তানেই আমার ক্রিকেট খেলা শুরু। ক্রিকেটারই হতে চেয়েছিলাম। ২০০৬ সালে একদিন বড় ভাই আমাকে ফোন করে বলেন, আফগানিস্তানের অনূর্ধ্ব ১৫ দলের ট্রায়াল চলছে। তার পরই আমি কাবুলে চলে যাই।’
আহমেদি সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন, ‘পরিবার পাশে না থাকলে আমার হয়তো ক্রিকেট খেলার স্বপ্নটা পূরণই হত না।’ প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে নামার আগে এই ওপেনারকে নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে ক্রিকেট দুনিয়ায়। জিওফ লসন এক সময় কোচ ছিলেন আফগানদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের। তখন থেকেই চেনেন আহমেদিকে। লসন বলছেন, ‘বিশ্বকাপে আহমেদির দিকে চোখ রাখতে হবে।’
আর আহমেদি বলছেন, ‘তার কাছে ৪০ দিন কোচিং নিয়েছিলাম। অসাধারণ মানুষ। প্রচুর ক্রিকেট জ্ঞান। ওঁর কোচিংয়ে খেলে প্রচুর লাভ হয়েছিল আমার।’ আহমেদি টিমের নির্ভরযোগ্য ওপেনার। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্যই তিনি বিখ্যাত। সঙ্গে বলের হাতটাও বেশ ভালো। দুর্দান্ত ফিল্ডার। আফগান দলের কোচ অ্যান্ডি মোলস বলেছেন , ‘আহমেদি হচ্ছে আমাদের আসল শক্তি।’
২০১০ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক জাভেদ আহমাদির। সে থেকে খেলেছেন ১৯টি ওয়ানডে। রান তুলেছেন ২৭.০০ গড়ে ৪৫৯। সর্বোচ্চ রান ৮১। হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে চারটি।
মন্তব্য চালু নেই