গুলশান হামলার পেছনে কে : আইএস, না অন্য কেউ?
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বাংলাদেশে বেশকিছু সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তবে সরকার বরাবরই এসব অস্বীকার করে এসেছে। এছাড়া আরো কিছু হামলার দায় স্বীকার করেছে স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী সংগঠন।
বাংলাদেশ সরকারের দাবি, দেশে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এসব হামলার ঘটনা ঘটিয়ে তা আইএসের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে বলেও বারবার সরকার দাবি করে এসেছে।
সর্বশেষ গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ার মতো একটি নিরাপত্তা জোনের এক রেস্তোরাঁয় হামলা হয়েছে। অন্য ঘটনার মতো এরও দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটিকে পর্যবেক্ষণ করা ওয়েব সাইট ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’। তবে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, বিষয়টি এখনো নিশ্চিত না। ঘটনাটি পরীক্ষা করে দেখছে মার্কিন গোয়েন্দারা।
এ ধরনের হামলার ঘটনা অর্থাৎ রেস্টুরেন্টে জিম্মি করে হত্যা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। এর আগের হামলাগুলোতে মানুষ হত্যা করা হয়েছে এককভাবে। তবে এবারে একসঙ্গে খুন করা হলো ২ পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জনকে, যার মধ্যে ২ জন পুলিশ কর্মকর্তা আর ২০ জন বিদেশি। নিহত হয়েছে ৬ সন্ত্রাসীও। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশে চাই না।’
সরকার এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠির জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদের একটি লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া শুক্রবার রাতে হামলার ঘণ্টা কয়েক পরই দায় স্বীকার করে আইএস। সন্ত্রাসী সংগঠনটির মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত আমাক (Amaq) এর বরাত দিয়ে এমন তথ্যই জানায় বিতর্কিত মার্কিন ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স।
এমনকি ২০ জনকে হত্যার কথাও উল্লেখ করা হয়। শনিবার সকালে যৌথ বাহিনির অভিযানে ঠিক ২০ জনের মৃতদেহই উদ্ধার করা হয়।
গুলশানে সেনা অভিযান এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক পরিচালক সজ্জন গোহেল বলেন, ‘বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আইএসের জড়িত থাকার প্রসঙ্গে বলতে হয়, তারা তাদের অনলাইন ম্যাগাজিন ‘দাবিক’ এ একাধিকবার বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারা বাংলাদেশে আরো হামলা চালাতে যাচ্ছে, তারা এখানে তাদের গতি আরো বাড়াতে যাচ্ছে বলে আইএস আগেই উল্লেখ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশে তারা তাদের সমর্থকদের তাদের দলে যোগ দেয়ার আহ্বানও জানিয়েছে।’
এক মার্কিন কর্মকর্তা আগের ঘটনাগুলোর ওপর ভিত্তি করে সিএনএনকে জানিয়েছেন, এসব হামলার পেছনে আইএসের চেয়ে আল কায়েদার জড়িত থাকার সম্ভাব্যতা বেশি। আল কায়েদার ভারতীয় শাখা ‘একিউআইএস’র ঢাকায় উপস্থিতি গত কয়েক মাসে আইএসের চেয়ে বেশি। এ পর্যন্ত তাদের সবগুলো হামলাই ঢাকাতে হয়েছে।
১৬ কোটি মুসলিমের আবাস বাংলাদেশ সব সময়ই উগ্রপন্থাকে এড়িয়ে চলেছে। বিশ্বের অনেক দেশের মতোই এখানে উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। তবে গত দুই বছর ধরে এখানে বেশকিছু ব্লগার, লেখক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু খুন হয়েছে।
এসব খুনের ঘটনায় আইএস জড়িত কি না তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারেরও সমালোচনা হয়েছে ব্যাপক। সমালোচনার মুখে গত মাসে জঙ্গি-বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে সরকার। বিতর্কিত হয়েছে সেই অভিযানও। এতে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই সাধারণ অপরাধী। অনেকে নিরপরাধ। তারা কেউই জঙ্গিবাদ বা চরমপন্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।-বাংলামেইল
মন্তব্য চালু নেই