গুলশান-বনানীতে নিয়ন্ত্রিত বাস-রিকশা চালু : সুবিধা না ভোগান্তি?

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ব্যবস্থাপনায় গুলশান-বনানী, বারিধারা ও নিকেতন আবাসিক এলাকায় নতুন বাস ও রিকশা চালুর ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ডিএনসি বিষয়টিকে ‍সুবিধাজনক হিসেবে দেখলেও স্থানীয়দের অনেকেই ভোগান্তি বাড়বে বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, নতুন বাস-রিকশা সার্ভিস চালু হওয়ায় বাইরের কোনও গণপরিবহন এ তিনটি আবাসিক এলাকায় ঢুকতে পারবে না। এ কারণে এখন থেকে হয় নিজস্ব পরিবহনে যেতে হবে, না হয় এসব বাস-রিকশায় চলাচল করতে হবে। সেই সঙ্গে বহাল থাকবে পুলিশি চেকপোস্ট ও তল্লাশিমূলক যাবতীয় কার্যক্রম। ফলে জনভোগান্তি বাড়বে।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

বুধবার রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের জন্য পৃথক সার্কুলার বাস ও রিকশার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

সার্কুলার বাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলে আসা গুলশান সিটি করপোরেশন মার্কেটের ব্যবসায়ী লোকমান হাকিম বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এমনিতেই আমরা সাধারণ মানুষ গুলশান থেকে সরাসরি গুলিস্তান বা মতিঝিল যেতে পারছি না। ভেঙে-ভেঙে যেতে হচ্ছে। সার্কুলার বাস সার্ভিস চালু হলেও এই সমস্যা থেকেই যাবে। কারণ গুলশান থেকে মতিঝিল যেতে আমাদের প্রথমে সার্কুলার বাসে অথবা রঙিন রিকশায় চড়ে মহাখালী বা কাকলী মোড়ে যেতে হবে। সেখান থেকে আরেক বাসে যেতে হবে মতিঝিল। একইভাবে মতিঝিল থেকে গুলশান আসতেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এর ফলে দুর্ভোগ বাড়বে। তিনি বলেন, যেহেতু নিরাপত্তা জোরদারের স্বার্থে এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে সেহেতু সমস্যা হলেও আমরা মেনে নিচ্ছি।

বনানীর বাসিন্দা সোহেল বলেন, রিকশাকে অঞ্চলভিত্তিক করে দেওয়াটা খুব ভালো হয়েছে। হলুদ কালারের রিকশা দেখলে বোঝা যাবে এগুলো গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনে চলাচলের জন্য। এখন থেকে অন্য এলাকার রিকশা নিশ্চয়ই এসব এলাকায় চলাচল করতে পারবে না। প্রশাসনের এটা নিশ্চিত করতে হবে। তবে গণপরিবহন ভাগ করে খুব একটা সুফল আসবে না। কারণ এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। তিনি বলেন, গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণ করলেই এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এটা কিন্তু গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না। তবে গুলশান হামলার পর পুলিশের দৃশ্যমান তৎপরতা আমাদের ভীতি কাটিয়ে দিচ্ছে। মানুষের মনেও আস্থা তৈরি হয়েছে।

সার্কুলার বাস সার্ভিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় গুলশান সোসাইটির সভাপতি এবং সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেন, যেকোনও কাজ করলে পক্ষে-বিপক্ষে কথা হয়। পরস্পরবিরোধী মতামতগুলো সমন্বয় করতে পারলেই সুফল পাওয়া যায়। তিনি বলেন, অনেক সময় আমরা সমস্যার সমাধান দিই, কিন্তু বিকল্প বলি না। এবার কিন্তু সমাধান এবং বিকল্প দু’টাই করা হয়েছে। কেউ ইচ্ছা করলে বাসে যেতে পারেন, আবার রিকশায়ও পারেন।

মেয়র আনিসুল হক বলেন, প্রতিটি আবাসিক এলাকার সোসাইটির সঙ্গে আলোচনা করেই আজকের এই উদ্যোগ। এরপর আবাসিক এলাকায় গেট নির্মাণ করা হবে। এরই মধ্যে বেশ কিছু ছোট ছোট পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সবমিলিয়ে ভিন্ন রকমের সিকিউরিটি ব্যবস্থা আমরা এখানে চালু করতে চাই। এ প্রসঙ্গে তিনি আবাসিক এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও সিটি করপোরেশনের একটি অ্যাপের বিষয়টিও তুলে ধরেন।

আইজিপি একেএম শহিদুল হক নতুন বাস সার্ভিসের প্রশংসা করে বলেন, গুলশান, বনানী ও বারিধারার মানুষের নিরাপত্তা জোরদার করতে আমরা নিয়মিত বৈঠক করছি। সবার সঙ্গে কথা বলছি। আমি মনে করি, আজকের এই উদ্যোগ আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর একটা কৌশল হিসেবে কাজ করবে। তিনি বলেন, মানুষের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে জনগণকে সম্পৃক্ত করে পরিকল্পিতভাবে এগুতে পারলে সুফল পাওয়া যায়। আমরা সেভাবেই এগিয়ে চলেছি। তিনি বলেন, সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে জঙ্গিদের বুঝিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশে জঙ্গিদের জায়গা নেই।

মহানগর পুলিশ কমিশনার বলেন, নিরাপত্তার জন্য চেকপোস্ট, তল্লাশী ও ব্লকরেইড নিয়মিত চালাচ্ছি। পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে কাজ করছি। তিনি বলেন, এই সার্কুলার বাস সার্ভিস সুফল হলে আরও নতুন নতুন এলাকায় হাত দেব।

সার্কুলার বাস সার্ভিস প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এ কাজে সহযোগিতা দিচ্ছে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন সোসাইটি। সার্কুলার সার্ভিসের জন্য বাস দিয়েছে এফবিসিসিআই-এর সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের মালিকানাধীন নিটোল গ্রুপ। প্রথম অবস্থায় টাটা কোম্পানি বাস থাকছে ২০টি। প্রয়োজনে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। বাসে চড়ে যেকোনও গন্তব্যে যেতে জনপ্রতি ভাড়া ১৫ টাকা। সার্কুলার বাস চলবে বারিধারা নতুন বাজার থেকে গুলশান ১ ও ২ নম্বর সার্কেল, বনানীর আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ এবং শ্যুটিং ক্লাব পর্যন্ত সড়কে।

আবাসিক এলাকার সোসাইটিগুলোর উদ্যোগে হলুদ রংয়ের রিকশা নামানো হয়েছে ৫০০টি। এসব রিকশা নির্ধারিত এলাকার বাইরে যেতে পারবে না। কোন এলাকায় কতটি রিকশা চলতে পারবে সেটাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী গুলশানে চলবে ২০০টি, বনানীতে ২০০টি, বারিধারায় ৫০টি এবং নিকেতনে ৫০টি।

প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে স্প্যানিস রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মূলত এরপর থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয় গুলশান, বনানী ও বারিধারার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য।



মন্তব্য চালু নেই