গুলশান ট্র্যাজেডি: বাথরুমে লুকিয়ে বাবার সঙ্গে শেষ কথা বলেন তারুশি

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানে আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় ভারতের ১৮ বছর বয়সী তরুণী তারুশি জৈন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দুই বাংলাদেশি বন্ধুকে নিয়ে হলি ওই রেস্টুরেন্টে নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন তারুশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকা এসেছিলেন তারুশি। পরিকল্পনা করেছিলেন বাবা, মা এবং ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ছুটি কাটাতে যাবেন উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদের পারিবারিক ভিটেতে। তার পরই আবার ঢাকা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তার।

তারুশির বাবা সঞ্জিব জৈন বাংলাদেশে গত ২০ বছরে ধরে জামাকা-পড়ের ব্যবসা করছেন। স্ত্রী তুলিকাকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাতেই আছেন তিনি। তারুশির বড় ভাই সঞ্চিত ঘটনার এক দিন আগে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার কানাডা থেকে দিল্লিতে পৌঁছান। কিন্তু বাবা-মা ও ভাইয়ের সঙ্গে তারুশির আর ফিরোজাবাদের ভিটেবাড়িতে যাওয়া হয়ে উঠল না। আর কোনো দিন যাওয়াও হবে না। শনিবার ভোরের দিকে তাকে গলা কেটে হত্যা করে জঙ্গিরা।

খুন হওয়ার আগে শনিবার ভোর ৬টার কিছুক্ষণ আগে তারুশি তার বাবাকে শেষ ফোন করেছিলেন। শুক্রবার রাত থেকে জিম্মি অবস্থায় ছিলেন তারুশি। বেশ কয়েক ঘণ্টা বন্দি অবস্থাতেই থাকতে হয়েছিল। রাতেই বেশ কয়েক জনকে মেরে ফেলে জঙ্গিরা। দম বন্ধ হয়ে থাকা আতঙ্কে গলা দিয়ে কয়েকটা কথাই বেরিয়েছিল তারুশির। বাবা, আমার ভীষণ ভয় করছে। বেঁচে ফিরতে পারবো কি না জানি না। ওরা এখানকার প্রত্যেককে খুন করছে। এভাবেই আতঙ্কিত তারুশি বাবার সঙ্গে শেষ কথাগুলো বলেছিলেন। বন্ধুদের নিয়ে একটা টয়লেটে লুকিয়ে ছিলেন তারুশি। কিন্তু লুকিয়ে থেকেও জঙ্গিদের হাত থেকে রক্ষা পাননি তারা।

এই ছিল শেষ যোগাযোগ। তারপর আর ফোনে পাওয়া যায়নি তারুশিকে। সে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলেতে অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক পড়ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের মাধ্যমে ঢাকার একটি ব্যাঙ্কে ইন্টার্নশিপ করারও সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এই মেধাবী শিক্ষার্থীকে জঙ্গিদের হাতে অকালেই প্রাণ দিতে হলো।



মন্তব্য চালু নেই