গুম-খুন ইস্যুতে আবারো সরব হচ্ছে বিএনপি

গুম-খুন ইস্যুতে আবার সরব হচ্ছে বিএনপি। চলতি রমজান মাসেই গুম-খুনের শিকার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি ইফতার পার্টি আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। সম্ভব না হলে চেয়ারপারসেনর পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীদের বাড়ি বাড়ি যাবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ছাড়া গুম-খুনের বিচারের দাবিতে ঈদের পরে আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।

বিএনপি সূত্রমতে, দলের পক্ষ থেকে গুম-খুন হওয়া পরিবারের সদস্যদের প্রত্যাশা অনুযায়ী খোঁজখবর না করায় তৃণমূলে ব্যাপক ক্ষোভ আছে। মৃত্যুর পর পরিবারের পাশে সান্ত্বনা দিতে যাওয়ার মধ্যেই দায়িত্ব শেষ করার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি তারা। এজন্য বিভিন্ন সময়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে এর নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছে। সঙ্গত কারণে এই ইস্যুটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বড় ধরনের উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী স্বজনদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।

বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, গুম-খুন হওয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইফতার পার্টি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো এর তারিখ ঠিক করা হয়নি। কারণ এই ইস্যুতে কোনো কর্মসূচি পালনের

চেষ্টা হলেই তা নস্যাৎ করতে সরকার বিগত সময়ে নানা চেষ্টা করেছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও গোপনীয়তার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।

বিএনপি সূত্রমতে, গুম-খুন ইস্যুতে সরব হওয়ার অংশ হিসেবে প্রথমে এর একটি সঠিক তালিকা করার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এজন্য দপ্তর ছাড়াও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের কাজ করতে বলা হয়েছে।

গুম-খুনের বিষয়ে বিএনপি ভিবিন্ন অভিযোগ করলেও এখনো সঠিক কোনো তালিকা তৈরি করতে পারেনি। শুধু বিভিন্ন সময়ে দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে বক্তব্য দেয়া হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে দেয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মী আন্দোলনে গুম-খুনের শিকার হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রমতে, এজন্যই সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে গুম-খুন হওয়া দলের নেতাকর্মীদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এই তালিকা প্রস্তুত হলে এ ইস্যুতে বড় ধরনের আন্দোলনে যাওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনের সদস্য এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক মিশনকেও এসব পরিসংখ্যান জানানো হবে।

এ ব্যাপারে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, ওইসব পরিবারের সদস্যের সঙ্গে রমজানেই যোগাযোগ করা হবে। চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের বাড়িতে যাবেন। তাদের সান্ত্বনা জানানোর পাশাপাশি বিচারের দাবিতে বিএনপি সবসময় তাদের পাশে থাকবে এমন প্রতিশ্র“তিও দেয়া হবে।

একই বিষয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান জানান, গুম-খুনের শিকার স্বজনদের সম্মানে একটি ইফতার পার্টি করার কথা কেন্দ্র থেকে তাকে জানানো হয়েছে। নিতে বলা হয়েছে প্রস্তুতিও। পাশাপাশি ছাত্রদলের যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছে, তাদের তালিকা প্রস্তুতের নির্দশনাও দেয়া হয়েছে।

২০১৪ সালের ফেব্র“য়ারিতে গুম-খুনের শিকার নেতাদের একটি তালিকা করে বিএনপি। কিন্তু ভুলেভরা সেই তালিকার কারণে সমালোচনায়ও পড়তে হয় দলটিকে। এরপর একই বছরের মে মাসে গুম-খুনের শিকার স্বজনদের নিয়ে সম্মেলনেরও আয়োজন করা হয়। কিন্তু রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে সেই সম্মেলন করতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে তাদের নিয়ে ঘরোয়া কর্মসূচি পালন ও সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপিপ্রধান। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে কূটনীতিকদের কাছে গুম-খুনের তালিকা ও বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করেছে বিএনপি।

তালিকা প্রস্তুতের সঙ্গে জড়িত এক নেতা জানান, তার কাছে একটি পরিসংখ্যান রয়েছে, তবে তা পূর্ণাঙ্গ নয়। এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্য নেতাদের সব তথ্য একত্রিত করা হলে গুম-খুনের সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে। তার কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সরকারবিরোধী আন্দোলনে পুলিশ, যৌথবাহিনী, র‌্যাব ও আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের গুলিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ২৬১ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আর গুম হয়েছেন ৬০ জন। যায়যায়দিন



মন্তব্য চালু নেই