গুণে ভরা বেগুন…….জেনে নিন উপকারীতা সমূহ!
সম্রাট বেগুনের তৈরি বেগুনী খেতে খেতে গোপাল ভাঁড়কে বললেন, ‘গোপাল, নামে বেগুন হলে কী হবে, এর স্বাদের গুণতো জব্বর!’ গোপাল হেসে বললো, ‘জ্বি হুজুর, বেগুনের আছে শতেক গুণ।’ এই বলে বেগুনের একশো গুণ বলে দিলো। এত গুণের কথা শুনে সম্রাট যত পারলো বেগুন খেয়ে নিলো। পরদিন সারা শরীরে চুলকানি। সম্রাট ডেকে পাঠালো গোপালকে। গোপাল এলেই ধমকে বললেন, ‘তোমার বেগুনের এত গুণ, তাহলে চুলকায় কেন?’ গোপাল বিনয়ের সাথে বলে, জাঁহাপনা, ‘যার একশোটা গুণ তার একটা দোষ থাকবে না? আর আলমপনা, শরীরতো আর সব ক্ষেত্রেই মহাশয় না যে যাহা সহাবেন তাহাই সইবে। একটু পরিমান মতো খেলে এমনটা হতো না।’
জ্বি, বেগুন পুষ্টিতে ভরা একটা সবজি। বেগুনের পুষ্টিগুণ আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। যুগ যুগ ধরে বেগুন ব্যবহার হয়ে আসছে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে। নামে বেগুন, কিন্তু আসলে গুণের। আসুন জেনে নেয়া যাক বেগুণের পুষ্টিগুণ:
১। ক্যান্সার প্রতিরোধক:
যারা বেশি পরিমান শাক-সবজি খায়, তাদের ক্যান্সারের আশঙ্কা কম থাকে। বেগুনে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান। বেগুন পাকস্থলী, কোলন, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদ্রান্ত্রের ক্যানসারকে প্রতিরোধ করে।
২। ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে:
কোলেস্টেরল হলো একধরণের চর্বি, যা রক্তে জমে। বেগুনে কোন কোলেস্টেরল নেই। যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান বেশি, তাদের জন্য বেগুন আদর্শ খাদ্য। কারণ, বেগুন ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করতে সহায়তা করে।
৩। রক্তশূন্যতা দূর করে:
বেগুনে আছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। আয়রন শরীরে রক্ত বাড়াতে সহায়তা করে। তাই রক্ত শূন্যতার রোগীরা খেতে পারেন এই সবজি। উপকারে আসবে।
৪। মুখের ঘা প্রতিরোধ করে:
বেগুনে আছে রিবোফ্ল্যাভিন। রিবোফ্ল্যাভিন মুখ ও ঠোঁটের কোণের ঘা, জিহ্বার ঘা প্রতিরোধ করে। জ্বর হওয়ার পর মুখের বিস্বাদও দূর করে বেগুন। তাই জ্বরের পর বেগুনের তরকারি খেলে মুখের স্বাদ ফিরে পাওয়া যেতে পারে।
৫। ক্ষতস্থান শুকাতে সাহায্য করে:
বেগুন ক্ষত স্থান দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। বেগুনে আছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন ‘ই’ এবং ‘কে’। এরা শরীরের ভেতর রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে রক্ত চলাচল কার্যক্রমকে সচল রাখে।
৬। চোখের রোগে বেগুন:
বেগুন ভিটামিন এ সমৃদ্ধ সবজি। বেগুনের ভিটামিন ‘এ’ চোখের জন্য খুব উপকারী। এটি চোখের যাবতীয় রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
৭। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:
বেগুনে আছে প্রচুর পরিমান ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ। যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
৮। দাঁত ও হাড়ের যত্নে:
বেগুনে আছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এই দুই উপাদান দাঁত, হাড় ও নখের জন্য খুব উপকারী। ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম দাঁতকে করে মজবুত, মাড়িকে করে শক্তিশালী। নখের ভঙ্গুরতা রোধ করে।
৯। জিঙ্কের ঘাটতি দূর করে:
ডায়রিয়া হলে শরীরে প্রচুর জিঙ্কের ঘাটতি দেখা দেয়। বেগুন জিঙ্কের ঘাটতি দূর করে। তবে ডায়রিয়া চলাকালিন সময়ে বেগুন খাওয়া ঠিক না। ডায়রিয়া ভালো হলে বেগুন খাওয়া উচিত।
বেগুনের আয়ুর্বেদিক ব্যবহার:
যুগ যুগ ধরে বেগুনের রয়েছে নানা রকম আয়ুর্বেদিক ব্যবহার। নানা রোগে বেগুন ঔষধ হিসাবে কাজ করে।
১। রোজ সকালে খালি পেটে কচি বেগুন পুড়িয়ে গুড় মিশিয়ে খেলে ম্যালেরিয়ার ফলে লিভারের যে ক্ষতি হয় সেটা ভালো হয়।
২। বেগুন অনিদ্রা রোগ দূর করে। বেগুন খেলে ভালো ঘুম হয়। এর জন্য বেগুনের আর নাম হল নিদ্রালু।
যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তারা সন্ধ্যায় সামান্য বেগুন পুড়িয়ে মধু মিশিয়ে খেলে রাতে ভালো ঘুমাতে পারবেন।
৩। নিয়মিত বেগুন খেলে প্রসাবের জ্বালাপোড়া কমে। প্রস্রাব পরিষ্কার করে প্রারম্ভিক অবস্থার কিডনির পাথরও নাকি গলিয়ে দিতে পারে বেগুন।
৪। বেগুন একেবারে পুড়িয়ে ছাই করে সেই ছাই বা ভস্ম গায়ে মাখলে চুলকানি ও চর্মরোগ সারে।
৫। কচি ও শাসালো বেগুন খেলে জ্বর সারে।
৬। বেগুনের রসে মধু মিশিয়ে খেলে কফজনিত রোগ দূর হয়।
৭। বেগুন বীর্যের পরিমান বাড়ায়।
৮। মহিলাদের ঋতু নিয়মিত করে।
৯। এ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে বেগুনে উপশম হয়।
মন্তব্য চালু নেই