‘গাড়িতে ওয়াসার পানি বিক্রি বন্ধ’

গ্রাহকদের বাড়িতে দেওয়া সংযোগের বাইরে গাড়ি কিংবা অন্য কোনোভাবে ওয়াসার পানি বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

সচিবালয়ে বুধবার (১৩ এপ্রিল) বর্ষা মৌসুমে সম্ভাব্য জলাবদ্ধতা থেকে ঢাকা মহানগরীকে মুক্ত রাখা ও নগরবাসীর চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ নিশ্চিতে ওয়াসার প্রস্তুতি পরিকল্পনা সংক্রান্ত সভা শেষে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।

মন্ত্রী বলেন, ‘কিছু অসাধু চক্র পানি বিক্রি করে, এটা এখন কমপ্লিটলি (পুরোপুরি) বন্ধ। আমার বাড়িতে যদি আমি পানি না পাই ওয়াসার ডিউটি হচ্ছে, আমার বাড়িতে পানি পৌঁছে দেওয়া। পানি দেওয়ার দায়িত্ব ওয়াসার। যদি কোনো কারণে পানি সেখানে না যায়, ওয়াসা যেভাবেই হোক সেখানে পৌঁছাবে।’

‘পানি বিক্রি করা ও কেনার কোনো পদ্ধতি থাকলেই দুর্নীতি হবে। পানি ইচ্ছে করে বন্ধ করে দিয়ে সংকট তৈরি করে এ পানি বিক্রি করা হবে। এটা বন্ধ করা হয়েছে’ বলেন মোশাররফ হোসেন।

ঢাকায় বড় এক গাড়ি ওয়াসার পানির দাম ছিল ৬০০ টাকা। অভিযোগ আছে, পানি সংকটের সময় এ পানির জন্য ২ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হতো।

রাজধানীতে পানির সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে প্রত্যেকটি এলাকার সমস্যাটা চিহ্নিত করেছি। কী কারণে ওখানে পানির সংকট, কী করলে পানির সংকট থাকবে না- আমরা তাও চিহ্নিত করেছি।’

‘এখন আমাদের অ্যাকশনে যাওয়ার পালা, অলরেডি অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। আমরা এ শুষ্ক মৌসুমেও পরিপূর্ণ রিলিভ দিতে না পারলেও সামনে শুষ্ক মৌসুমে ইনশাআল্লাহ কোনো পানির কষ্টও থাকবে না’ বলেন মোশাররফ হোসেন।

ওয়াসা কখনও স্বীকার করে না যে পানি সরবরাহে ঘাটতি আছে, তারপর কেন পানি সংকট হয়- এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনি কি জীবনে কোথাও শুনেছেন যে, কোনো গোয়ালা তার দই টক বলছে। শোনেননি, বলবে না কেউ যে, আমার কমতি আছে। কিন্তু সে তো পানিটা ম্যানেজ করতে পারছে না। সুষম বণ্টন করতে পারছে না। সেটা ওয়াসার একার পক্ষে করা সম্ভব নয়, সকলের সহযোগিতা দরকার।’

ভূ-গর্ভস্থ ও উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসছে

আমরা ভূ-গর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত ব্যবহার করে ফেলেছি জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘যার কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্থর বিপদ সীমার নিচে চলে গেছে। আমাদের মোট চাহিদা ৭০ শতাংশ নির্ভরশীলতা ছিল ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর, বাকি ৩০ শতাংশ ভূ-উপরিতলের পানির ওপর।’

তিনি বলেন, ‘আগামী তিন বছর আমরা বিপরীত কাজ করব। ভূ-উপরিতলের পানির ওপর আমরা ৭০ ভাগ নির্ভর করব, বাকি ৩০ ভাগ ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর। সেই ৩০ ভাগও হবে ইমার্জেন্সি, যখন আমরা ভূ-উপরিতলের পানি দিয়ে চাহিদা মেটাতে পারব না, তখনই আমরা এ ৩০ ভাগ ব্যবহার করব। এভাবে আমরা যদি ৮ থেকে ১০ বছর চালাতে পারি আবার আমাদের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আগের স্থানে চলে যাবে। এটা আমরা করব।’

পানি সংকটের জন্য আমরা একটা বিপর্যয়ের মধ্যে আছি জানিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে শুকনো মৌসুমে পানির অভাব, আবার বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি। বৃষ্টি বেশি হলে ঢাকায় চার ভাগের এক ভাগ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এ সমস্যা আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে দিতে পারি না। আগামী বর্ষা মৌসুমে যাতে জলাবদ্ধতা না হয় সে জন্য আজকের সভায় বিস্তারিত আলোচনা করেছি।’

জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩০ মের পর প্রস্তুতি

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় যে কয়টা খাল আছে, প্রত্যেকটি খাল জবর-দখল হয়ে আছে। জঘন্যভাবে খাল বন্ধ করে দোকান বসানো হয়েছে, এমনকি বাড়িঘরও করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গত তিন-চার মাস আছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র দখল হয়ে যাওয়া ১২টি খালের ছবি আমাকে দেখালেন। বললেন, ‘‘এই দেখেন খালের ছবি।’’ এরপর যদি এক পশলা বৃষ্টি হয় এ পানি ঢাকা শহরেই স্থিতিশীল হবে। নিষ্কাশন হওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই।’

‘আমরা ওইদিনই প্ল্যান-প্রোগ্রাম নিয়েছি। ঢাকা ওয়াসা একটি ওয়ান্ডারফুল কাজ করছে। তারা মেয়রদের সহায়তায় এ খালগুলো দখলমুক্ত করতে অনেকাংশে সক্ষম হয়েছে। খালগুলো পুরনো অবয়বে নিতে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আছে সে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম, কিছু বেসিক সিদ্ধান্ত নিলাম’ বলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী।

‘দখল হওয়া খালগুলো পর্যায়ক্রমে দখলমুক্ত করা হবে। ৩০/৪০ বছরের দখল তিন মাসে তো উন্মুক্ত করা তো কষ্ট। আমরা করে ফেলব। বাড়িঘরও ভাঙ্গতে একটি সময় লাগবে’ যোগ করেন মোশাররফ হোসেন।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্ষা মৌসুম উপলক্ষে আগামী ৩০ মের পর আমরা অনেকটা প্রস্তুত থাকব। গত বছর ঢাকায় যে জলাবদ্ধতা দেখছি, এবার তেমন জলাবদ্ধতা আপনারা দেখতে পাবেন না। আরেকটা বছর সময় পেলে ইনশাআল্লাহ আমরা ঢাকাকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে পারব।’

সমস্যা সমাধানে কীভাবে সমন্বয় করা হবে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘সমন্বয় একটা বিরাট শব্দ। সমন্বয় একটা অব্যাহত প্রক্রিয়া। আমরা এটা করতেই থাকব।’

এ সময় উপস্থিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘স্টর্ম ড্রেনেজ কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য সেটা আমাদের দায়িত্বে দেওয়া হলে আমরা নিতে রাজি আছি। কাজ করলাম না, গালি খেলাম- তাতে আমরা রাজি না। খালের মালিক মেয়র না, কিন্তু মেয়র ভিকটিম হয়ে যায়। এ সব বিষয়ে সমন্বয়ে জোর দিয়েছেন মন্ত্রী।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘স্টর্ম স্যুয়ারেজ ফাংশনাল করে দিতে হবে, এটা বর্তমানে বাজে অবস্থায় আছে। এটা (মালিকানা) ঠিক করে দিতে হবে।’

সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. আবদুল মালেক, ওয়াসার ব্যবস্থাপানা পরিচালক তাকসিম এ খানসহ স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই